rss

জালছেঁড়া নদী

জালছেঁড়া নদী
আমার প্রথম কাব্যগ্রন্থ। প্রকাশকাল: ফেব্রুয়ারি, ২০০৯। প্রকাশক: ভাষাচিত্র, ৩য় তলা, আজিজ সুপার মার্কেট, ঢাকা।

প্রান্তজন

প্রান্তজন
শহীদুল ইসলাম মুকুল

মঙ্গলবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০০৭

নোয়াখালী পৌর এলাকার প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা



► জনাব আবদুল মালেক উকিল
► জনাব সহিদ উদ্দিন ইস্কেন্দার
► জনাব মাহমুদুর রহমান বেলায়েত
► জনাব অহিদুর রহমান অদু (শহীদ)
► জনাব অধ্যাপক মোঃ হানিফ
► জনাব মমিন উল্যাহ এডভোকেট
► জনাব ফজলে এলাহি
► জনাব সাহাবুদ্দিন ইস্কেন্দার (শহীদ)
► জনাব রবিউল হোসেন কচি
► জনাব মোঃ বাচ্চু মিয়া (শহীদ)
► জনাব রফিক উল্যাহ
► জনাব আবদুর রব বাবু (শহীদ)
► জনাব মিজানুর রহমান
► জনাব সাইফুল আলম জাহাঙ্গীর
► জনাব মোশারফ হোসেন
► জনাব মোজাম্মেল হক মিলন
► জনাব সফিকুর রহমান
► জনাব আবদুল গোফরান (শহীদ)
► জনাব জয়নাল আবেদীন
► জনাব আবদুর রব
► জনাব আজিজুর রহমান
► জনাব কামাল উদ্দিন আহম্মদ
► জনাব মোস্তাফিজুর রহমান লুতু
► জনাব কাজী সোলেমান
► জনাব লুৎফুর রহমান
► জনাব ফজলুল কবির
► জনাব মমতাজুল করিম বাচ্চু
► জনাব মাহমুদুর রহমান
► জনাব কামাল উদ্দিন
► জনাব সামছুদ্দিন
► জনাব ইউছুফ আলী
► জনাব মোফাজ্জল হোসেন চুন্নু
► জনাব মোস্তফা কামাল
► জনাব আবুল খায়ের
► জনাব আবদুল মালেক
► জনাব জবিউল হোসেন বাহার
► শ্রী প্রণব ভট্ট
► শ্রী পরিমল চন্দ্র পল্টু
► শ্রী জীবন দাস
► শ্রী নিত্য গোপাল দেবনান্দ্র
► জনাব মোঃ হানিফ
► জনাব সেলিম মোঃ মোহসিন আলী
► জনাব সেকান্দর মিয়া
► জনাব আবদুল খালেক
► জনাব ফরিদ মিয়া
► জনাব মোঃ মমিন উল্যা
► জনাব সফি উদ্দিন চুন্নু
► জনাব আবদুল হাই
► জনাব ইঞ্জিঃ আবদুল গোফরান
► জনাব সারওয়ার-ই-দ্বীন এডভোকেট
► জনাব মোস্তফা কামাল
► জনাব আবুল কাশেম
► জনাব আবুল কালাম আজাদ
► জনাব আজিজুর রহমান ইকবাল
► জনাব আইয়ুব আলী
► জনাব রেজাউল করিম বাহাদুর
► জনাব এমরান মোঃ আলী
► জনাব আতিকুর রহমান (নৌ)
► জনাব আবদুর রাজ্জাক (নৌ)
► জনাব আবদুল ওদুদ
► জনাব গোলাম মহিউদ্দিন লাতু
► জনাব গোলাম রাব্বানি
► জনাব মোজাম্মেল হক মঞ্জু
► জনাব তাজুল ইসলাম
► জনাব মোঃ সেলিম
► জনাব খোন্দকার আবদুল আজিজ
► জনাব নূর আলম
► জনাব রফিকুল ইসলাম
► জনাব আবদুল জলিল
► জনাব এ.বি.এস ফজলুল হক বাদল
► জনাব মাইনুদ্দিন জাহাঙ্গীর
► জনাব মজিবুল হক
► জনাব আবদুল মান্নান
► জনাব মোজাম্মেল হক মঞ্জু
► জনাব সাকিল মোঃ পারভেজ
► জনাব রশিদ উদ্দিন শাহনাজ
► জনাব জসিম উদ্দিন (শহীদ)
► জনাব মেসবাহ উদ্দিন (শহীদ)
► জনাব রুহুল আমিন
► জনাব সিরাজ উদ্দিন আহম্মদ
► জনাব সলিমউল্যা
► জনাব মোঃ ননী মিয়া
► জনাব লুৎফর রহমান লুতু
► জনাব শাহ্‌আলম (শহীদ)
► শ্রী সত্য নারায়ন দাস (সেন্টু)
► জনাব ফজলুর রহমান
► জনাব আমিনুর রসুল
► জনাব নূর মোহাম্মদ
► জনাব গোলাম মোস্তফা
► জনাব আবদুল ওহাব
► জনাব মোজাম্মেল হোসেন (শহীদ)
► জনাব দুলাল মিয়া


*তথ্য সংগ্রহঃ কামালউদ্দিন- সদর থানা কমান্ডার

**সংকলনটি রবিউল হোসেন কচি সম্পাদিত নোয়াখালী পৌরসভা কর্তৃক প্রকাশিত গবেষণা ও তথ্যভিত্তিক স্মারকগ্রন্থ “নোয়াখালী” থেকে নেয়া হয়েছে। প্রকাশকালঃ ২ জুলাই ১৯৯৮

ফেইসবুকে যোগ করুন

সুখ খেলা করুক

তোমার পড়ার টেবিলে
লাগোয়া বারান্দায়
টবে লাগানো ফুলের সৌরভে
সুখ খেলা করুক।

তোমার স্নানঘরে
দামী সাবানের ফেনায়
নরম তোয়ালেতে
সুখ খেলা করুক।

তোমার রান্নাঘরে
গোছানো খাবার টেবিলে
দেশী বিদেশী সুগন্ধি মসলায়
সুখ খেলা করুক।

তোমার শোবার ঘরে
বালিশ তোষক কাঁথায়
রঙ করা নতুন দেয়ালে
সুখ খেলা করুক।

তোমার নীল চূড়িতে
চুলের ব্যান্ডে নেকলেসে
সাদা পাথরের কানের দুলে
সুখ খেলা করুক।

তোমার ফুল শয্যায়
কোমল আঘাত প্রতি-আঘাতে
আলোক সজ্জার আলো আঁধারীতে
সুখ খেলা করুক।

নিরাপদ গৃহে
কাজ শেষে ফেরা
গৃহস্বামীর প্রগাঢ় আলিঙ্গনে
সুখ খেলা করুক।

সুখ খেলা করুক।


২২ ডিসেম্বর, ২০০৭

ফেইসবুকে যোগ করুন

এই সময়ের শ্রেষ্ঠ কবিতা


আজ এই শীত সন্ধ্যার স্বরচিত কবিতা পাঠের আসরে
আমাকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য কৃতজ্ঞতা।
আজ সারাটা সকাল ভাবছিলাম
কোন লেখাটি পাঠ করবো?
অনেকবার চর্বিত চর্বন করা পুরোনো লেখাগুলো!
না কি নতুন কোন কবিতা লিখবো!
নতুন কবিতার বিষয় কি হবে!

অনেক অনেক দিন আগের চলে যাওয়া প্রেমিকাকে,
ফসিল মন এখনো যার শোকচিহ্ন বহন করে চলছে,
“শুধু মৃত্যুই আমাদের বিচ্ছিন্ন করতে পারে” এ পবিত্র চুক্তি পায়ে দলে
অবলিলায় যে চলে গিয়েছিলো
এখনো মাঝরাতে ঘুম ভেঙ্গে গেলে যার কথা মনে করে আমি হু হু করে কাঁদি,
যার কথা আলাদা করে আমার মনেই পড়ে না কখনো
সময় করে মনে পড়ার প্রয়োজনও হয় না – কারণ এক মূহুর্তের জন্যেও যাকে ভুলে থাকিনা,
আমার সেই শ্যামল প্রেমিকাকে নিয়ে নব নব পংক্তির মালা গাঁথবো?

কি নিয়ে লিখবো?
কি নিয়ে লিখবো?
একটি শ্রেষ্ঠ কবিতার বিষয় কি হতে পারে?
কোনটি হতে পারে এই সময়ের শ্রেষ্ঠ কবিতা?

উত্তুরে বাতাস কানে কানে বলে গেলো,
আজ ১৪ ডিসেম্বরের সন্ধ্যায়
পাকিস্তানি আর তাদের ঔরসজাত রাজাকারদের গণহত্যার শিকার
বাঙলা এবং বাঙালীর কাছে একটি পংক্তিই হতে পারে শ্রেষ্ঠ পংক্তি-
“যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাই”

চির আশাবাদী মন জানে
আজ বাঙলার প্রতিটি সবুজ ঘাসে অনুরিত পংক্তি-
“যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাই”
ধ্বনিত প্রতিধ্বনিত হতে হতে একদিন
কলমের শেষ রক্তিম আচঁড় সমাপ্ত করবে
রচনা করবে একটি শ্রেষ্ঠ কবিতা – “যুদ্ধাপরাধীদের বিচার”


ডিসেম্বর ১৪, ২০০৭

ফেইসবুকে যোগ করুন

জ্বরের ঘোরে প্রলাপ


আজ জ্বরতপ্ত ঠোঁটে
মেঘ হয়ে চুম্বন বৃষ্টি না ঝরালে
কি করে শীতল হবো বলো?


মুঠোবার্তা মুছে যায়
বাইনারি পিক্সেল ও,
চুম্বনের দাগ মুছে না!

ফেইসবুকে যোগ করুন

আজকাল অনেক কিছুই মনে থাকে না

আজকাল অনেক কিছুই মনে থাকে না
চেষ্টা করেও মনে করতে পারিনা জরুরী কথা।
বাজার করতে গেলে মনে থাকে না
বাসা থেকে বেরুবার সময় কি আনতে বলা হয়েছিলো,
চিনি আনতে বললে ভুল করে লবণ নিয়ে আসি
একদিন তো চাল আনতে গিয়ে কেরোসিনের চুলো নিয়ে এসেছিলাম!
অথচ নিরেট নির্বোধও জানে চাল আর চুলোর পার্থক্য!

জুতো পরতে গেলে ভুল করে স্যান্ডেল পরে ফেলি
ভুলে যাই কোথায় যাওয়ার কথা ছিলো
চলে যাই ভুল ঠিকানায়।

আজকাল অনেক কিছুই মনে রাখতে পারি না।
ময়লা কাপড়ের স্তুপ জমতে থাকে আলনায়
বারংবার মনে করেও প্রতিদিনই ধুতে ভুলে যাই।
অফিসের জরুরী কাজের কথা যেন না ভুলে যাই
তাই আগাম লিখে রাখি ডায়রির পাতায়
এবং যথারীতি ডায়রির পাতা উল্টাতে ভুলে যাই।

রাস্তায় পরিচিত মুখগুলো দেখলে সহজে চিনতে পারি না
ভান করে যাই চিনেছি খুব!
আন্তরিকতার ভান করে কথা চালিয়ে যাই
সাথে চলতে থাকে মনে করার চেষ্টা- “কার সাথে কথা বলছি!”
কখনো মনে পড়ে, কখনো পড়ে না;
অভিনয়ে কাটিয়ে দিই সময়।

মুঠোফোনে পরিচিত কন্ঠ ভুলে যাই,
নাম্বার সেভ না থাকলে স্বজন চিনতেও কষ্ট হয়।

আজকাল ভুলো মনে ভুল করছি নিয়মিত
শুধরাতে হবে মনোযোগী চেষ্টায়- এ পরামর্শটিও ভুলে যাই।

আজকাল অনেক কিছুই মনে থাকে না
চেষ্টা করেও মনে রাখতে পারি না কত কিছু!

অথচ শত চেষ্টা সত্ত্বেও শুধু তোমাকেই ভুলতে পারি না!


ডিসেম্বর ৮, ২০০৭

ফেইসবুকে যোগ করুন

শুক্রবার, ৩০ নভেম্বর, ২০০৭

ফিরে আসা বলে কিছু নেই


মার খেয়ে খেয়ে
দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া
অস্থি চর্মসার দূর্বল জনগোষ্ঠিও
এক সময় ফুঁসে উঠে।

বারংবার দমিত হয়
আবার রুখে দাঁড়ায়
চূড়ান্ত বিচারে পরাজিত হয় না কখনো।

সমষ্টির ইতিহাসে পরাজয় শব্দটি
না থাকলেও
কখনো কখনো
ব্যক্তি মানুষ পরাজিত হয়।

যোগ্যতমের বিজয়ের পথে
অযোগ্য‍রা সরে যায়,
সরে যেতে হয়।

বস্তুতঃ ব্যক্তি মানুষের ইতিহাস
দৃষ্টিগ্রাহ্য কিছু জয়ের সাথে
অসংখ্য না জানা ছোট ছোট পরাজয়ের ইতিহাস।

যাপিত অন্ধকারে
জ্বলে উঠা অশুভ স্ফুলিঙ্গ
পুড়িয়ে ভস্ম করার আগেই

আমরা আমাদের কাছে
পরাজিত হওয়ার চেয়ে
এই ভালো ঢের
সরে যাওয়া নিভৃতে!

পরাজয়ের গ্লানি নিয়ে
ফিরে আসা হয় না
ফিরে আসতে নেই

আমিতো জানি
ফিরে আসা বলে কিছু নেই।

যে মানুষটি চলে যায়
সে মানুষটি ফিরে আসে না কখনো
পুরোনো সে মানুষটিকে ফিরে পাওয়া যায় না কখনো
যেরুপ একই নদীর জলে দু’বার স্নান হয়না...

ফেইসবুকে যোগ করুন

বুধবার, ২১ নভেম্বর, ২০০৭

খসে পড়া কেশগুচ্ছ

মেয়েদের হ্যান্ডব্যাগকে আমি মজা
করে বলতাম ‘চলমান সংসার’।
এমন কোন খুঁটিনাটি জিনিস নেই
যা পাওয়া যায় না তাদের ‘চলমান সংসারে’।

ভ্যাসলিনের কৌটো থেকে শুরু করে লিপস্টিক
সেফটিপিন থেকে চিরুনি
ভাঁজ করা নীল ছাতা
বিশেষ বিশেষ সময়ে স্যানিটারি ন্যাপকিন...


একদিন অভ্যাসবশতঃ কথার ফাঁকে তোমার চলমান সংসার থেকে
চিরুনি বের করে আঁচড়ে নিচ্ছিলে কুঞ্চিত কেশদল,
স্বাভাবিক নিয়মেই ঝরে পড়ছিলো
পুরোনো স্মৃতির মত খসে পড়া কেশগুচ্ছ।

খসে পড়া কেশ মুড়ে ফেলে দেয়াটাই দস্তুর।
না, ফেলতে দিইনি। মাটি ছোঁয়ার আগেই
একগুচ্ছ কেশ কাগজে মুড়ে সযত্নে
রেখেছিলাম মানিব্যাগের ভাঁজে,
যেন কত দামী জিনিস, রাখতে হয় টাকার ভাঁজে!

কিম্বা তার চেয়েও মূল্যবান, তাই ততোধিক
সাবধানতায় রাখি ডায়রির ভাঁজে তালাবদ্ধ ড্রয়ারে,
কোন বেরসিক পকেটমারের হাতে পড়ে যেন আবার
বেহাত না হয়ে যায়!


তোমার অনুপস্থিতিতে বের করে দেখি
ঘ্রাণ নিই
যেন কত তৃষ্ণার্ত প্রবাসী-
ঘরে রেখে যাওয়া সদ্যবিবাহিতা স্ত্রীর জন্যে কাতর!

তুমি নেই,
আছে তোমার খসে পড়া কেশগুচ্ছ।
গৌতম বুদ্ধের কেশধাতুর চেয়েও সযত্নে আগলে রাখি
মহামূল্যবান সম্পদ!



নভেম্বর ১৬, ২০০৭

ফেইসবুকে যোগ করুন

মঙ্গলবার, ৬ নভেম্বর, ২০০৭

শ্রীপুরের গণহত্যা


সোনাপুর নোয়াখালী পৌরসভার সর্বদক্ষিণের একটি ছোট গ্রাম। এর চারপাশে মহব্বতপুর, শ্রীপুর, জালিয়াল, করিমপুর, গোপাই ও পশ্চিম বদরীপুর। কবি বুদ্ধদেব বসুর স্মৃতি বিজড়িত নোয়াখালী শহরটি এর দেড় কিলোমিটার দক্ষিণে ছি‍ল একদা। পাকিস্তানী স্বৈরশাসনের গোটা সময়টা সোনাপুর ছিলো নোয়াখালীর প্রাণকেন্দ্র।এখানে জেনারেল আইয়ুবের প্রতি বিক্ষোভ হয়েছে, মেজর জেনারেল আজম খানের প্রতি ‘ফিরে যাও’ ধ্বনি উচ্চারিত হয়েছে, পাকিস্তানি জান্তার দালাল ফ.কা চৌধুরীর প্রতি ঘৃণামিশ্রিত কালো পতাকা উথ্বিত হয়েছে। সৈরশাসকের দোসর এখানে জনগণের সম্মানসূচক রায় পায়নি। ২৩ মার্চ ১৯৭১ সনের পরবর্তী প্রথম দশ দিনের মধ্যে অপরিণত মুক্তিযোদ্ধাদের দল সংগঠিত হয়েছে। স্থানীয় মিশনারী উচ্চ বিদ্যালয়ে বোমা বানাতে গিয়ে পশ্চিম বদরীপুর গ্রামের কৃতিসন্তান বাহারুল আলম চৌধুরী আহত হয়েছেন। পরবর্তীকালে আহত অবস্থায় প্রাণ হারিয়েছেন। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রেখে এই সোনাপুর এলাকার আধ কিলোমিটার দূরত্বে স্বাধীনতার পর প্রতিষ্ঠিত হয় একটি হিন্দু সাধুর আখড়া ও একটি খ্রীস্টানদের গীর্জা। ৪০০ বর্গ কিমি বিন্যস্ত বিশাল চরের পশ্চাতে শান্তিপূর্ণ জনপদ বেষ্টিত সোনাপুর বাজার ও সংলগ্ন শ্রীপুর গ্রামের উপর পাকিস্তানি আক্রমণ ও হত্যাযজ্ঞ এক বিরল নিষ্ঠুর গণহত্যা।

ইসলামপ্রীতির কথা বাদ দিলেও পাকিস্তানিদের একটা অহমিকা ছিলো তাদের সৈন্যবাহিনীর ক্ষমতা ও যোগ্যতা নিয়ে। ১৮ জুন ১৯৭১ সালের বিকেল ৪টা থেকে ৬টা পর্যন্ত নারকীয় হত্যাযজ্ঞের কারণ কি এবং স্বাধীনতাযুদ্ধের সাথে এই ধ্বংসযজ্ঞের সম্পর্ক কোথায়- তা নির্ণয় করা কঠিন। জাতিসংঘের সদস্যপদপ্রাপ্ত ইসলাম রক্ষার সংগঠন পাকিস্তানের নিয়মিত সৈন্য‍বাহিনী নি:সন্দেহে একটি সুশৃঙ্খল কাঠামোর ভিতর দিয়ে গড়ে উঠেছে। নিয়মিত প্রশিক্ষণ ক্ষমতাকে করেছে সুসংগঠিত। এরকম অহমিকায় প্রদীপ্ত দেশের সৈন্যবাহিনীর আচরণ ও শিক্ষার বাস্তব প্রকাশ ভাবার বিষয়। যে কোন রাষ্ট্রের নিজস্ব সংগঠন তার সৈন্যবাহিনী। হত্যা, ধ্বংস, আক্রমণ বা প্রতিরোধ যে কোন কাজেই তার উদ্দেশ্য থাকে। কারণহীন সামরিক এ্যাকশন সৈন্য, রাষ্ট্র ও রাষ্ট্র পরিচালকদের ব্যাপারে ভীতির সঞ্চার করা ছাড়া আর কোন অর্থ বহন করে না।সময়ে ভাড়াটিয়া বুদ্ধি ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে পোষাকি মানবপ্রীতি, তথাকথিত মুসলিম দেশ পাকিস্তানের প্রতি মমতাবোধ ও ইসলামদরদী সেজে সাধারণ মানুষকে আচ্ছন্ন করে রাখতে পারলেও ওদের আসল চরিত্র উন্মোচিত হতে সময় নেয়নি। অকারণে গণহত্যা, সম্পদ লুন্ঠন ও গণতন্ত্র হত্যার কাজে পাকিস্তানি শাসক মহলের জুড়ি নেই। আজ স্মৃতিরোমন্থন করে শিহরিত হচ্ছি- কেমন করে প্রতারক শোষকশ্রেণীর খপ্পরে ছিল বাংলার মেহনতী সাধারণ মানুষ চব্বিশটি বছর।


এপ্রিলে পাকিস্তানি সৈন্যবাহিনীর হাতে শহর পতনের পর থিতিয়ে আসছিলো উত্তেজনা। নোয়াখালী শহরে জেঁকে বসে গেছে মুসলিম লীগ ও জামাতের পাকিস্তানি দালালদের প্রশাসন। গঠিত হয় শান্তি কমিটি, ঘাপটি মারা নিরীহ সেজে থাকা পাকিস্তানি দোসররা বাঘ হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ছে স্বাধীনতাকামী জনসাধারণের উপর। ঘর-বাড়ী, দোকান-পাট লুট হয়ে ছারখার। শহরের হিন্দু বসতি প্রায় নিশ্চিহ্ন। সোনাপুর এলাকার খ্রীস্টান জনগোষ্ঠী নিশ্চিত কোনপক্ষই তাদের প্রতি বিরাগ হতে পারবে না। তারা স্বাধীনতা সংগ্রামীদের পক্ষে নানা সাহায্য সহানুভূতিতে আগুয়ান।


তখনকার নোয়াখালীর চালচিত্র অনেকটা শোকাহত মায়ের শোক সামলে ওঠার পর ধীর মন্থর গতিতে সংসারের হা‍ল ধরার মত অবস্থা।স্বাধীনতার দীপ্তি আগুনের মতো বাংলা প্রেমিকদের হৃদয়ে জ্বলছে। অসহায় মানুষেরা প্রত্যক্ষ করছে রাজাকার, মুসলিম লীগ, আর জামাতিদের জঘন্যতম কাজগুলো। মনে পড়ে এক হিন্দুর বাসা দখলের পর টাইটেল পাস জামাতের শহর নেতা স্বহস্তে গাছ কেটে সাফ করে ফেলছেন। বিস্ময়াভিভূত দর্শকের জিজ্ঞাসা, “গাছের কি দোষ”? ইসলামপন্থী মাওলানার সংক্ষিপ্ত জবাব- “হিন্দুর চিহ্ন ও রাখবো না, হিন্দু কাফের, হিন্দুর ফুল ও কাফের”।এই ছিলো পাকিস্তানিপ্রেমীদের মানসিকতা। শোনা যায় এই মাওলানা এখনও রাজনীতি করেন। এখনও বাংলাদেশে ইসলাম কায়েমের স্বপ্ন দেখেন। আরেক কোরআনে হাফেজের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধা নিধনের অজুহাতে খলিফারহাট এলাকায় তিনমাসের প্রসূতি মহিলাকে গণধর্ষণের পর তার গোপন অঙ্গে লবণ-মরিচ মেখে দিয়ে বীরের মতো যুদ্ধ জয় করে পাষন্ডরা। নাদির শাহীর কায়দায় লুন্ঠিত দ্রব্য এরা পরস্পরের মধ্যে ভাগবাটোয়ারা করত। এ সবই পাকিস্তানের বজায় রাখার লড়াইয়ের ইতিহাস। ইসলামের মহত্ত্বকে কালিমা লিপ্ত করার জন্য ধর্মব্যবসায়ী ও ক্ষমতালিপ্সু পিশাচেরা দায়ী। মুসলমান ও ইসলাম কখনও মানুষের মঙ্গল ছাড়া ক্ষতির চিন্তা করে না। কোন অত্যাচারী জুলুমবাজ শোষকের সাথে অন্তত আর যাই হোক মুসলমানদের সম্পর্ক থাকতে পারে না।


সোনাপুর নামের অবতারণা দিয়ে এই টুকরো কথা লেখা শুরু করেছিলাম। সোনাপুরে সংগঠিত পাকিস্তানি সৈন্যদের নিরর্থক হত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞের ঘটনা কোথাও বিবৃত হয়নি। আগেই বলা হয়েছে বাংলার দক্ষিণে রেল আর পাকা সড়কের থমকে যাওয়া জনপদ ‘সোনাপুর’ সাহসী মানুষের সুখী ও অসাম্প্রদায়িক জীবন আর চিরদরিদ্র খেটে খাওয়া জনস্রোতের এক আশ্চর্য আশ্রয়। মাত্র এক বর্গকিলোমিটার এলাকাকে রিক্সার চারণভূমি বলা যাবে। মসজিদ মাদ্রাসার পীঠস্থান বলা যাবে। হিন্দু-খ্রীস্টানের মিলনস্থান বলা যাবে, আর বলা যাবে শিক্ষার কেন্দ্রভূমি।১৯৭১ সালের ১৮ জুন। মাত্র ৪০০ গজ রাস্তার দুই ধারে ‘টি’ অক্ষরের মত সাজানো ছোট ছোট দোকানের পসরা বসেছে। একপাশে অলসভাবে শুয়ে থাকা লাল রেলস্টেশন ঘর, তারের পুকুর, বকশির মসজিদ, দরিদ্রতম মানুষের গায়ে লাগা ঘরের চরিলাই, রসিদ হিমাগার, কয়হাত পরেই বেড়ী বাঁধের কোলঘেঁষে নেমে গেছে দক্ষিণে বহুদূরে জেগে ওঠা চরের সমারোহ।সুপারি চারা, নারিকেল ও কলার পাতার আড়ে ছোট ছোট ঘরের বিরল বসত। সকাল গড়িয়ে দুপুর হয়েছে, দুপুরের ঘুম স্তব্ধতা ভেঙ্গে চা-দোকানের কোলাহল- বিকাল নামছে ধীরে ধীরে। মসজিদ-মাদ্রাসার আজান আর বৈকালিক ট্রেনের শব্দে জেগে উঠছে মহব্বতপুর, শ্রীপুর, পশ্চিম বদরীপুর আর করিমপুর।


বেলা চারটায় উত্তরের পাকাসড়ক ধরে ছুটে এল শব্দময় দানব বাস, ট্রাক, লরি। স্থানে স্থানে উগরে দিলো চাইনিজ অটোমেটিক হাতে পাকিস্তানি সেনাদের। সর্বদক্ষিণে ছুটে এসে একটি বাস থাম‌লো। ‘টি’ –এর পশ্চিম বাহুতে ছুটে গেলো একদল। উত্তর দিকের শ্রীপুর ও করিমপুর গ্রামে ঢুকলো একদল সেনা। মোক্তারবাড়ীর চারপাশ ঘিরে ঘনবসতির ঘেরে ঢুকে গেলো পাকিস্তানি হানাদাররা। উত্তর সোনাপুর এলাকায় আগেই নেমে পড়েছিলো একদল। পাকিস্তানি সেনাদলের কোন ঘোষণা নেই, অনুসন্ধান তত্পরতা নেই, নেই কোন প্রতিরোধের প্রতীক্ষা।‘টি’ –এর পশ্চিমপ্রান্ত থেকে প্রথমগুলির সংকেত পাওয়া গেলো। সন্ত্রস্ত ভীত দোকানে বসে-দাঁড়িয়ে থাকা মানুষ, অসহায় ছোটাছুটি, নির্বিচারে লুট করছে।গুলি করছে আগুন লাগাচ্ছে তারা। মুহুর্তে চার’শ গজ এলাকা নরকে পরিণত হলো। দাউ দাউ করে জ্বলে উঠল আগুন, জ্বেলে গেল দোকান, ঘর-বাড়ী, খুন হয়ে গেলো শতাধিক জন মানুষ।পুড়ে ছাই হয়ে গেলো অনেকেই দু’ঘন্টা সময়ের মধ্যে প্রতিবাদ প্রতিরোধহীন সোনাপুর আর তার চারপাশের গ্রামে নেমে এল এক শ্মশানের নিস্তব্ধতা।দোকানে লাশ, দোকানের সামনে লাশ, ডাক্তার, ডাক্তারের কাছে আসা রোগী, শিশু, যুবক, বৃদ্ধ কোন স্তরের মানুষই বেঁচে থাকার আকুতি ছাড়া পাকিস্তানি বীর সৈনিকরা কোন প্রতিরোধের সম্মখীন হয়নি। মুক্তিযোদ্ধার হাতিয়ার দুরে থাকুক, চোর তাড়ানোর একটি লাঠি, বল্লম ও তাদের চোখে পড়েনি। তবুও তাদের জিঘাংসার আগুনে প্রাণ দিয়েছে এক’শ চব্বিশ জন মুসলমান ও এক জন মুচি। রিক্সাচালক, মুটে মজুরের মা-বোনের ইজ্জত লুন্ঠিত হয়েছে অগণিত। প্রবীণা, যুবতী পর্দানশিন নারীর ঘোমটা উন্মোচিত হয়েছে পাকিস্তানি বর্বরদের কামনিষ্ঠুর ভয়ালথাবায়। এই অপমানের কথা কেউ কোনদিন জানবেনা। এই নিষ্ঠুর হত্যা, ধর্ষণ, লুন্ঠনের ক্ষত কেবল তীব্র ঘ্রণা হয়ে জেগে আছে সেদিনের প্রত্যক্ষদর্শীদের মনে। বহু ছোট ব্যবসায়ী দোকান হারিয়ে চিরদিনের জন্য দরিদ্র হয়ে গেছে স্বাধীনতা পরবর্তী পুনর্বাসন তাদের জীবনে আর্থিক স্বস্তি আর ফিরিয়ে দিতে পারেনি কোনদিন। দু’শ পঁচিশটি ছোট-বড় দোকানে লুন্ঠন চালিয়ে পুড়িয়ে ছাই করে দিয়েছে। পাঁচশটি পরিবারের প্রতিটি ঘরে ঢুকেছে হানাদার। এ লুন্ঠন, ধর্ষণ আর পালিয়ে যেতে না পারা মানুষদের হত্যা, প্রতিটি পরিবারে এনেছে শোকের করুণ ছায়া। পাকিস্তানি সৈন্যদের অবস্থান ছিলো দু ঘন্টা পনের মিনিট মাত্র। বর্বরতার নিদারুণ লজ্জ্বা এদের স্পর্শ করেনি। ঝড়ের বেগে এসে ঝড়ের বেগে নিরাপদে ফিরেছে, বিশ্ববেহায়া নির্লজ্জ বীরপুঙ্গবেরা। পাকিস্তানি লীগ-জামাতের সেদিনের সাথীরা মানুষের দুর্দশায় হেসে বিজয়ীর বেশে কোলাকুলি করেছে। সৈন্যবাহিনীর যে কোন “এজেল্ট” এ অন্তত শত্রুবাহিনীর কোন না কোন তত্পরতার নমুনা থাকে।সোনাপুর অপারেশন ছিলো ঠান্ডা মাথার হত্যাযজ্ঞ। নিরীহ মানুষের রক্তে হোলিখেলার উত্সব। দেশরক্ষা ও ইসলামের নামে ক্ষমতার মসনদে বসে থাকা পাকিস্তানি হায়েনা ও তাদের এদেশীয় দোসর রাজাকার-আলবদরদের নিষ্ঠুর হোলিখেলার জবাব একাত্তরে মুক্তিযোদ্ধারা দিয়েছে। কিন্তু ধর্মের নামে এ ধরনের নিষ্ঠুরতার অবসান কি হয়েছে এদেশে?



* লেখকঃ ত. ম ফারুক
প্রকাশকালঃ ২ জুলাই ১৯৯৮

** লেখাটি রবিউল হোসেন কচি সম্পাদিত নোয়াখালী পৌরসভা কর্তৃক প্রকাশিত গবেষণা ও তথ্যভিত্তিক স্মারকগ্রন্থ “নোয়াখালী” থেকে নেয়া হয়েছে।

ফেইসবুকে যোগ করুন

রবিবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০০৭

অভিমানী



তার মৃত্যুতে কোন রকম হুলস্থুল পড়ে যাবেনা
পাড়াময় শোকের মাতম উঠবেনা
কেউ গম্ভীর স্বরে ‘একটি শোক সংবাদ’ বলে মাইকিং করবেনা!

তার মৃত্যুতে ঘরময় প্রিয়জনদের ঢল নামবে না
লোবানের গন্ধে ভারি হবেনা বাতাস
কাফনের কাপড় কেনার জন্য ব্যস্ত হবেনা কেউ!

তার মৃত্যুতে পত্রিকার পাতায় ছাপানো হবেনা কোন শোকবার্তা
শেয়ার বাজারে নামবেনা ধ্বস
জাতীয় পতাকা হবেনা অর্ধনমিত
শহরের জীবনযাত্রা হবেনা অচল!

রোজ ভোরে বাবা তার আগের মতই সোফায় বসে খবরের কাগজ পড়বেন
মা আগের মতই ব্যস্ত থাকবেন রান্নাঘরে
ভাই-বোনদের কেউবা যাবে কলেজে কেউবা অফিসে!

মানসী তার, যাকে নিয়ে সবুজ দূর্বাঘাসের ’পরে বসে গল্প করার স্বপ্ন দেখতো
সে থাকবে প্রগলভ বন্ধুদের আড্ডায় আগের মতই!
খেলার মাঠে এত লোকের মাঝে তার অনুপস্থিতি বন্ধুদের চোখে পড়ার কথা নয়!

কোন এক পথহীন পথের ধারে পড়ে থাকবে
অভিমানী যুবকটির লাশ
কেউ জানবেনা
জানবেনা কেউ...

ফেইসবুকে যোগ করুন

বুধবার, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০০৭

নতুন ফোনসেট নিলাম।। টেলিটক ব্যবহার করবো।। দেশের টাকা দেশেই রাখবো



প্রথম থেকেই গ্রামীন ব্যবহার করছি। টেলিটক আসার পর ভাবলাম দেশিটাই ব্যবহার করবো। কিন্তু গ্রামীন নাম্বারটা সবার জানা বলে পরিবর্তন করতে পারছিলাম না। সমাধান হল দুইটা সেট ব্যবহার করা। তাই করলাম আজ। গ্রামীন সেন্টার থেকে নিয়ে আসলাম SAGEM 213x সেট। কালার মনিটর, জিপিআরএস এনাবলড। দাম গ্রামীনের আইএসডি সিমসহ মাত্র ২৩৯০ টাকা।

টেলিটকের সিম আগেই ছিলো। নতুন সেটে টেলিটকই ব্যবহার করবো। আগের সেটটাতে গ্রামীন সিম থাকলো। গ্রামীনকে তো অনেক দিলাম! এবার ভাবছি আউটগোয়িং কল সব করবো টেলিটক থেকে। দেশের টাকা দেশেই থাকুক।

ফেইসবুকে যোগ করুন

মঙ্গলবার, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০০৭

মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণাপত্র, ১৯৪৮


মুখবন্ধ

যেহেতু মানব পরিবারের সকল সদস্যের সহজাত মর্যাদা ও সম অবিচ্ছেদ্য অধিকার-সমূহের স্বীকৃতি বিশ্বে স্বাধীনতা, ন্যায়-বিচার ও শান্তির ভিত্তি;

যেহেতু মানবিক অধিকারসমূহের প্রতি অবজ্ঞা ও ঘৃণা মানবজাতির বিবেকের পক্ষে অপমানজনক বর্বরোচিত কাযর্কলাপে পরিণতি লাভ করেছে এবং সাধারণ মানুষের সর্বোচ্চ আশা-আকাঙ্খার প্রতীক হিসেবে এমন একটি পৃথিবীর সূচনা ঘোষিত হয়েছে যেখানে মানুষ বাক ও বিশ্বাসের স্বাধীনতা এবং ভয় ও অভাব থেকে নিষ্কৃতি ভোগ করবে;

যেহেতু চূড়ান্ত পদক্ষেপ হিসেবে মানুষকে অত্যাচার ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হতে বাধ্য করা না হলে মানবিক অধিকারসমূহ অবশ্যই আইনের শাসনের দ্বারা সংরক্ষিত করা উচিত;

যেহেতু জাতিসমূহের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের উন্নয়নে সহায়তা করা অবশ্যক; যেহেতু জাতিসংঘভুক্ত জনগণ সনদের মাধ্যমে মৌল মানবিক অধিকারসমূহ অধিকারসমূহ, মানুষের মর্যাদা ও মূল্য এবং নারী ও পুরুষের সম-অধিকারের প্রতি আস্থা পুনর্ব্যক্ত করেছে এবং সামাজিক অগ্রগতি ও ব্যাপকতর স্বাধীনতা উন্নততর জীবনমান প্রতিষ্ঠাকল্পে দৃঢপ্রতিজ্ঞ;

যেহেতু সদস্যরাষ্ট্রসমূহ জাতিসংঘের সহযোগিতায় মানবিক অধিকার ও মৌল স্বাধিকারসমূহের প্রতি সার্বজনীন শ্রদ্ধা ও মান্যতা বৃদ্ধি অর্জনে অঙ্গীকারবদ্ধ;

যেহেতু সকল অধিকার ও স্বাধিকারের ব্যাপারে একটি সাধারণ সমঝোতা উক্ত অঙ্গীকার সম্পূর্ণরূপে আদায় করার জন্য সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ;

তাই সাধারণ পরিষদ সকল জাতি ও জনগোষ্ঠীর অগ্রগতির একটি সাধারণ মানদন্ড হিসেবে জারি করছে এই মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্র

ঐ লক্ষ্যে প্রত্যেক ব্যক্তি ও সমাজের প্রত্যেক অঙ্গ মানবিক অধিকারসমূহের এই সর্বজনীন ঘোষণাপত্রটিকে সর্বদা স্মরণ রেখে শিক্ষাদান ও জ্ঞান প্রসারের মাধ্যমে এ সকল অধিকার ও স্বাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাবোধে জাগ্রত করতে এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রগতিশীল ব্যবস্থাদির দ্বারা সদস্য-রাষ্ট্রসমুহের জনগণ ও তাদের অধীনস্থ অঞ্চলসমূহের অধিবাসীবৃন্দ উভয়ের মধ্যে ঐগুলোর সর্বজনীন ও কার্যকর স্বীকৃতি ও মান্যতা অর্জনের জন্য জোর প্রচেষ্টা চালাবে৷

অনুচ্ছেদ-১
বন্ধনহীন অবস্থায় এবং সম-মর্যাদা ও অধিকারাদি নিয়ে সকল মানুষই জণ্মগ্রহণ করে৷ বুদ্ধি ও বিবেক তাদের অপর্ণ করা হয়েছে; অতএব ভ্রাতৃত্বসুলভ মনোভাব নিয়ে তাদের একে অন্যের প্রতি আচরণ করা উচিত৷

অনুচ্ছেদ- ২
* যে কোন প্রকার পার্থক্য যথা জাতি, গোত্র, বর্ণ, নারী-পুরুষ, ভাষা, ধর্ম, রাজনৈতিক বা অন্য মতবাদ, জাতীয় বা সামাজিক উত্পত্তি, সম্পক্তি, জণ্ম, বা অন্য মর্যাদা নির্বিশেষে প্রত্যেকেই ঘোষণাপত্রে উল্লিখিত সকল অধিকার ও স্বাধিকারে স্বত্ববান৷
* অধিকন্তু, কোন ব্যক্তি যে দেশ বা অঞ্চলের অধিবাসী, তা স্বাধীন, অছিভুক্ত এলাকা, অস্বায়ত্তশাসিত অথবা অন্য যে কোন প্রকার সীমিত সার্বভৌমত্বের মধ্যে থাকুক না কেন, তার রাজনৈতিক, সীমানাগত ও আন্তর্জাতিক মর্যাদার ভিত্তিতে কোন পার্থক্য করা চলবে না৷

অনুচ্ছেদ- ৩
প্রত্যেকেরই জীবন-ধারণ, স্বাধীনতা ও ব্যক্তি নিরাপত্তার অধিকার রয়েছে৷

অনুচ্ছেদ-৪
কাউকে দাস হিসেবে বা দাসত্বে রাখা চলবে না, সকল প্রকার দাস-প্রথা ও দাস-ব্যবসা নিষিদ্ধ থাকাবে৷

অনুচ্ছেদ-৫
কাউকে নির্যাতন অথবা নিষ্ঠুর, অমানুষিক অথবা অবমাননাকর আচরণ অথবা শাস্তি ভোগে বাধ্য করা চলবে না৷

অনুচ্ছেদ-৬
আইনের সমক্ষে প্রত্যেকেরই সর্বত্র ব্যক্তি হিসেবে স্বীকৃতিলাভের অধিকার রয়েছে৷

অনুচ্ছেদ-৭
আইনের কাছে সকলেরই সমান এবং কোনরূপ বৈষম্য ব্যতিরেকে সকলেরই আইনের দ্বারা সমভাবে রক্ষিত হওয়ার অধিকার রয়েছে৷ এই ঘোষণাপত্রের লঙ্ঘনজনিত বৈষম্য বা এরূপ বৈষম্যের উস্কানির বিরুদ্ধে সমভাবে রক্ষিত হওয়ার অধিকার সকলেরই আছে৷

অনুচ্ছেদ-৮
যে কার্যাদির ফলে শাসনতন্ত্র বা আইন কর্তৃক প্রদত্ত মৌল অধিকারসমূহ লঙ্ঘিত হয় সে সবের জন্য উপযুক্ত জাতীয় বিচার আদালতের মারফত কার্যকর প্রতিকার লাভের অধিকার প্রত্যেকেরই রয়েছে৷

অনুচ্ছেদ-৯
কাউকে খেয়ালখুশীমত গ্রেফতার, আটক অথবা নির্বাসন করা যাবে না৷

অনুচ্ছেদ-১০
প্রত্যেকেরই তার অধিকার ও দায়িত্বসমূহ এবং তার বিরুদ্ধে আনীত যে কোন ফৌজদারী অভিযোগ নিরূপণের জন্য পূর্ণ সমতার ভিত্তিতে একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ বিচার-আদালতে ন্যায্যভাবে ও প্রকাশ্যে শুনানী লাভের অধিকার রয়েছে৷

অনুচ্ছেদ-১১
* কোন দন্ডযোগ্য অপরাধে অভিযুক্ত হলে প্রত্যেকেরই আত্নপক্ষ সমর্থনের নিশ্চয়তা দেয় এমন গণ-আদালত কর্তৃক আইন অনুযায়ী দোষী সাব্যস্ত না হওয়া পর্যন্ত নির্দোষ বলে বিবেচিত হওয়ার অধিকার রয়েছে৷
* কাউকেই কোন কাজ বা ক্রটির জন্য দন্ডযোগ্য অপরাধে দোষী সাবাস্ত করা চলবে না, যদি সংঘটনকালে তা জাতীয় বা আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী দন্ডযোগ্য অপরাধ বলে গণ্য না হয়ে থাকে৷ আবার দন্ডযোগ্য অপরাধ সংঘটনকালে যতটুকু শাস্তি প্রযোজ্য ছিল তার চেয়ে শাস্তি প্রয়োগ চলবে না৷

অনুচ্ছেদ-১২
কাউকে তার ব্যক্তিগত গোপনীয়তা, পরিবার, বসতবাড়ি বা চিঠিপত্রের ব্যাপারে খেয়ালখুশীমত হস্তক্ষেপ অথবা সম্মান ও সুনামের ওপর আক্রমণ করা চলবে না৷

অনুচ্ছেদ-১৩
* নিজ রাষ্ট্রে সীমানার মধ্যে চলাচল ও বসতি স্থাপনের অধিকার প্রত্যেকেরই রয়েছে৷
* প্রত্যেকেরই নিজ দেশসহ যে কোন দেশ ছেড়ে যাওয়ার ও স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের অধিকার রয়েছে৷

অনুচ্ছেদ-১৪
* নির্যাতন এড়ানোর জন্য প্রত্যেকেরই অপর দেশসমূহে আশ্রয় প্রার্থনা ও আশ্রয় লাভ করার অধিকার রয়েছে৷
* অরাজনৈতিক অপরাধসমূহ অথবা জাতিসংঘের উদ্দেশ্যে ও মূলনীতি বিরোধী কার্যকলাপ থেকে সত্যিকারভাবে উদ্ভুত নির্যাতনের ক্ষেত্রে এই অধিকার নাও পাওয়া যেতে পারে৷

অনুচ্ছেদ-১৫
* প্রত্যেকেরই একটি জাতীয়তার অধিকার রয়েছে৷
* কাউকেই যথেচ্ছভাবে তার জাতীয়তা থেকে বঞ্চিত করা অথবা তাকে তার জাতীয়তা পরিবর্তনের অধিকার অস্বীকার করা চলবে না৷

অনুচ্ছেদ--১৬
* পূর্ণ-বয়স্ক পুরুষ ও নারীদের জাতিগত, জাতীয়তা অথবা ধর্মের কারণে কোন সীমাবব্ধতা ব্যতিরেকে বিবাহ করা ও পরিবার গঠনের অধিকার রয়েছে৷ বিবাহের ব্যাপারে, বিবাহিত অবস্থায় এবং বিবাহ বিচ্ছেদকালে তাদের সম-অধিকার রয়েছে৷
* কেবল বিবাহ -ইচ্ছুক পাত্র-পাত্রীর অবাধ ও পূর্ণ সম্মতির দ্বারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া যাবে৷
* পরিবার হচ্ছে সমাজের স্বাভাবিক ও মৌলিক একক গোষ্ঠী; সমাজ ও রাষ্ট্র কর্তৃক এর সংরক্ষিত হওয়ার অধিকার রয়েছে৷

অনুচ্ছেদ--১৭
* প্রত্যেকেরই একাকী এবং অপরের সহযোগিতায় সম্পক্তির মালিক হওয়ার অধিকার রয়েছে৷
* কাউকেই তার সম্পত্তি থেকে খেয়ালখুশীমত বঞ্চিত করা চলবে না৷

অনুচ্ছেদ--১৮
প্রত্যেকেরই চিন্তা, বিবেক ও ধর্মের স্বাধীনতার অধিকার রয়েছে৷ নিজ ধর্ম অথবা বিশ্বাস পরিবর্তনের স্বাধীনতা এবং একাই অথবা অপরের সহিত যোগসাজশে ও প্রকাশ্যে বা গোপনের নিজ ধর্ম বা বিশ্বাস শিক্ষাদান, প্রচার, উপাসনা ও পালনের মাধ্যমে প্রকাশ করার স্বাধীনতা এই অধিকারের অন্তর্ভুক্ত৷

অনুচ্ছেদ--১৯
প্রত্যেকেরই মতামতের ও মতামত প্রকাশের স্বাধিকার রয়েছে; বিনা হস্তক্ষেপে মতামত পোষণ এবং যে কোন উপায়ে ও রাষ্ট্রীয় সীমানা নির্বিশেষে তথ্য ও মতামত সন্ধান, গ্রহণ ও জ্ঞাত করার স্বাধীনতা এই অধিকারের অন্তর্ভুক্ত৷

অনুচ্ছেদ--২০
* প্রত্যেকেরই শান্তিপূর্ণভাবে সম্মিলিত হওয়ার অধিকার রয়েছে৷
* কাউকেই কোন সংঘভুক্ত হতে বাধ্য করা যাবে না৷

অনুচ্ছেদ-২১
* প্রত্যক্ষভাবে অথবা অবাধে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে নিজ দেশের সরকারে অংশগ্রহণের অধিকার প্রত্যেকেরই রয়েছে৷
* প্রত্যেকেরই নিজ দেশের সরকারী চাকুরীতে সমান সুযোগ লাভের অধিকার রয়েছে৷
* জনগণের ইচ্ছাই হবে সরকারের ক্ষমতার ভিত্তি; এই ইচ্ছা সর্বজনীন ও সমান ভোটাধিকারের ভিত্তিতে নৈমিত্তিকভাবে এবং প্রকৃত নির্বাচন দ্বারা ব্যক্ত হবে; গোপন ব্যালট অথবা অনুরূপ অবাধ ভোটদান পদ্ধতিতে এরূপ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে৷

অনুচ্ছেদ-২২
সমাজের সদস্য হিসেবে প্রত্যেকেরই সামাজিক নিরাপত্তার অধিকার রয়েছে; প্রত্যেকেই জাতীয় প্রচেষ্টা ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে এবং প্রতিটি রাষ্ট্রের সংগঠন ও সম্পদ অনুসারে তার মর্যাদা ও অবাধে ব্যক্তিত্ব বিকাশের জন্য অপরিহার্য অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকারসমূহ আদায় করতে পারবে৷

অনুচ্ছেদ-২৩
* প্রত্যেকেরই কাজ করার, অবাধে চাকুরী নির্বাচনের, কাজের জন্য ন্যায্য অনুকূল অবস্থা লাভের এবং বেকারত্ব থেকে রক্ষিত হওয়ার অধিকার রয়েছে৷
* প্রত্যেকেরই কোন বৈষম্য ব্যতিরেকে সমান কাজের জন্য সমান বেতন পাওয়ার অধিকার রয়েছে৷
* প্রত্যেক কর্মী তার নিজের ও পরিবারের মানবিক মর্যাদা রক্ষার নিশ্চয়তা দিতে সক্ষম এমন ন্যায্য ও অনুকূল পারিশ্রমিক এবং প্রয়োজনবোধে সেই সঙ্গে সামাজেক নিরাপত্তার জন্য অন্যান্য সুবিধা লাভের অধিকারী৷
* প্রত্যেকেরই নিজ স্বার্থ রক্ষার্থে শ্রমিক ইউনিয়ন গঠন ও এতে যোগদানের অধিকার রয়েছে৷

অনুচ্ছেদ-২৪
প্রত্যেকেরই বিশ্রাম ও অবসর বিনোদনের অধিকার রয়েছে৷ কাজের সময়ের যুক্তিসঙ্গত সীমা ও বেতনসহ নৈমিত্তিক ছুটি এ অধিকারের অন্তর্ভূক্ত৷

অনুচ্ছেদ-২৫

* নিজের ও নিজ পরিবারের স্বাস্থ্য ও কল্যাণের নিমিত্ত পর্যাপ্ত জীবনমানের অধিকার প্রত্যেকেরই রয়েছে৷ খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিত্সা ও প্রয়োজনীয় সামাজিক সেবামূলক কার্যাদির সুযোগ এবং বেকারত্ব , পীড়া, অক্ষমতা, বৈধব্য, বার্ধক্য অথবা অনিবার্য কারণে জীবন যাপনে অন্যান্য অপারগতার ক্ষেত্রে নিরাপত্তা এই অধিকারের অন্তর্ভুক্ত৷
* মাতৃত্ব কালে ও শৈশব অবস্থায় প্রত্যেকের বিশেষ যত্ন ও সহায়তা লাভের অধিকার রয়েছে৷ জণ্ম বৈবাহিক বন্ধনের ফলে বা বৈবাহিক বন্ধনের বাইরে হোক, সকল শিশুই অভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তা ভোগ করবে৷

অনুচ্ছেদ-২৬
* প্রত্যেকেরই শিক্ষালাভের অধিকার রয়েছে৷ অন্তত - পক্ষে প্রাথমিক ও মৌলিক পর্যায়ে শিক্ষা অবৈতনিক হবে৷ প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক হবে৷ কারিগরী ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা সাধারণভাবে লভ্য থাকবে এবং উচ্চতর শিক্ষা মেধার ভিত্তিতে সকলের জন্য উণ্মুক্ত থাকবে৷
* ব্যক্তিত্বের পূর্ণ বিকাশ ও মানবিক অধিকার ও মৌলিক স্বাধিকারসমূহের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ দৃঢ করার উদ্দেশ্যে শিক্ষা পরিচালিত হবে৷ সমঝোতা, সহিষ্ঞুতা ও সকল জাতি, বর্ণ ও ধর্মীয় গোষ্ঠীর মধ্যে বন্ধুত্ব উন্নয়ন এবং শান্তি রক্ষার্থে জাতিসংঘ কর্মতত্পরতা বৃদ্ধি করবে৷
* যে প্রকার শিক্ষা তাদের সন্তানদের দেওয়া হবে তা পূর্ব থেকে বেছে নেওয়ার অধিকার পিতামাতার রয়েছে৷

অনুচ্ছেদ-২৭
* প্রত্যেকেরই গোষ্ঠীমত সাংস্কৃতিক জীবনে অবাধে অংশগ্রহণ, শিল্পকলা চর্চা করা এবং বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি ও এর সুফলসমূহের অংশীদার হওয়ার অধিকার রয়েছে৷
* প্রত্যেকেরই বিজ্ঞান, সাহিত্য অথবা শিল্পকলা-ভিত্তিক সৃজনমীল কাজ থেকে উদ্ভুত নৈতিক ও বৈষয়িক স্বার্থসমূহ রক্ষনের অধিকার রয়েছে৷

অনুচ্ছেদ-২৮
প্রত্যেকেই এমন একটি সামাজিক ও আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার জন্য স্বত্ববান যেখানে এই ঘোষণাপত্রে উল্লিখিত অধিকার ও স্বাধীনতাসমূহ পূর্ণভাবে আদায় করা যেতে পারে৷

অনুচ্ছেদ-২৯
* প্রত্যেকেরই সমাজের প্রতি কর্তব্যাদি রয়েছে কেবল যার অন্তর্গত হয়েই তার ব্যক্তিত্বের অবাধ ও পূর্ণ বিকাশ সম্ভব৷
* স্বীয় অধিকার ও স্বাধীনতাসমূহ প্রয়োগকালে প্রত্যেকেরই শুধু ঐ ধরনের সীমাবদ্ধ থাকবে যা কেবল অপরের অধিকার ও স্বাধীনতাসমূহের যর্থাথ স্বীকৃতি ও শ্রদ্ধা নিশ্চিত করতে পারে৷ এরূপ সীমাবদ্ধ একটি গণতান্ত্রিক সমাজে নৈতিকতা, গণশৃঙ্খলা ও সাধারণ কল্যাণের ন্যায্য প্রয়োজনসমূহ মিটানোর উদ্দেশ্যে আইনের দ্বারা নিরূপিত হবে৷
* ই সকল অধিকার ও স্বাধীনতা ভোগকালে কোন ক্ষেত্রেই জাতিসংঘের উদ্দেশ্য ও মূলনীতি লঙ্ঘন করা চলবে না৷

অনুচ্ছেদ-৩০
এই ঘোষণার উল্লিখিত কোন বিষয়কে এরূপভাবে ব্যাখ্যা করা চলবে না যাতে মনে হয় যে এই ঘোষণার অন্তর্ভুক্ত কোন অধিকার বা স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন করার উদ্দেশ্যে কোন রাষ্ট্র, দল বা ব্যক্তি বিশেষের আত্ননিয়োগের অধিকার রয়েছে৷

ফেইসবুকে যোগ করুন

গোপালপুরে গণহত্যা

নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ থানা সদর থেকে আনুমানিক নয় কিলোমিটার পশ্চিম-উত্তর দিকে গোপালপুর বাজারের অবস্থান। এরই পশ্চিমপার্শ্বে কালের সাক্ষী হয়ে রয়েছে গোপালপুর মির্জানগর পরগণার এক সময়ের প্রভাবশালী জমিদার বাড়ী। এছাড়া বাজারের কোলঘেঁষে গোপালপুর আলী হায়দার উচ্চ বিদ্যালয়। পশ্চিম-উত্তর মাথায় ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র, ব্যাংক ও পোস্ট অফিস।

মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালে অসহযোগ আন্দোলনে ছাত্র ইউনিয়ন নেতা আবু কায়েস মাহমুদ, মোঃ মোহসীন দুলাল, জাকির হোসেন, মাহমুদুল হোসেন চৌধুরী প্রমুখের নেতৃত্বে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে এ এলাকার বিশিষ্ট চিকিৎসক ডাঃ আনিছুজ্জামান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতা নিম চন্দ্র ভৌমিক, সাহাবউদ্দিন মিন্টু ও স্থানীয় সংগ্রাম পরিষদ নেতৃবৃন্দের সমন্বয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের খসংগঠিত করার কাজ শুরু হয়।

এপ্রিলে পাকিস্তানি বাহিনী নোয়াখালীতে প্রবেশ করার কিছুকাল পরও গোপালপুর রয়ে যায় মুক্তিযোদ্ধাদের দূর্জয় ঘাঁটি হিসাবে; পরিণত হয় মুক্তিযোদ্ধাদের রিক্রুটিং সেন্টারে। চলতে থাকে যুদ্ধের প্রাথমিক কলাকৌশলের ট্রেনিং। সময়ের সাহসী সন্তানেরা দলে দলে প্রাথমিক ট্রেনিং সমাপ্ত করে চূড়ান্ত ট্রেনিং গ্রহণের জন্য গোপনে চলে যেতো বজরার বগাদিয়া আফানিয়া হয়ে ভারতের দিকে। গোপালপুর এভাবেই পালন করে মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে এক অগ্রণী ভূমিকা। এ খবর পৌঁছে যায় জামাত, মুসলীম লীগ ও শান্তি কমিটির মাধ্যমে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর কাছে। তারা কয়েক দফা চেষ্টা চালায় এ এলাকার মুক্তিযুদ্ধের সংগঠকদের খুঁজে বের করার জন্য। দেখতে দেখতে চলে আসে বর্ষা।

সময়টা ১৯৭১ সালের আগস্ট মাস। প্রচুর বৃষ্টি হয় সেবার ১৮ আগস্ট রাতে। ভোররাতে বেগমগঞ্জ লক্ষীপুর সড়কের কাছে বাংলাবাজার শামসুননাহার হাইস্কুলে এসে অবস্থান নেয় বেশ কিছু পাকিস্তানী মিলিশিয়া ও রাজাকার। ১৯ আগস্ট সকাল বেলা - সূর্য তখনো মেঘের আড়ালে ঢাকা। গুড়িগুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। সকাল আনুমানিক আটটা নাগাদ গোপালপুর বাজারে পৌঁছে যায় প্রায় কয়েকশ পাকিস্তানী আর্মি ও রাজাকার। তারা দুভাগে বিভক্ত হয়। রাজাকারদের কুড়ি/পঁচিশ জনের একটি দল বাজারের পশ্চিমদিক দিয়ে এবং বাকীরা মূল রাস্তা দিয়ে এসে চতুর্দিক থেকে ঘিরে ফেলে। সকাল থেকেই বাজারের প্রায় অর্ধশতাধিক দোকান অগণন মানুষের প্রাণচাঞ্চল্যে মুখরিত ছিলো। কেউ চা পানে রত। আবার কেউ গতরাতে আশেপাশের কোন কোন এলাকায় গোলাগুলি হয়েছে তার অবস্থান নির্ণয় নিয়ে বিতর্করত। এমন সময় অতর্কিত হানা দিলো পাকিস্তানী হায়েনার দল। যারা পালাতে পারলো তারা বাঁচলো। যারা পারেনি এরকম অর্ধশতাধিক দূর্ভাগা নিরীহ গ্রামবাসী ও দোকানী শিকার হল নির্মম হিংস্রতার। একে একে ওদের সবাইকে ধরে এনে এক লাইনে দাঁড় করানো হয় বাজারের পূর্বপাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ছোট্ট খালটির পাড়ে। এ দলে ছিলেন ঐ এলাকার শান্তি কমিটির নেতা। তার অপরাধ তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় দিতেন। তাঁর কাছে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর কমান্ডিং অফিসার জানতে চায়- আনিস ডাক্তার, সুবেদার মেজর জবেদ আলী কোথায়? কোনো দেশপ্রেমিক মুক্তিপাগল মানুষ তাদের এ প্রশ্নের উত্তর দিতে বাধ্য নয় এবং তারা এর কোন জবাব কোনদিনই পায়নি। বাজারের দোকানে দোকানে তল্লাশি করে খুঁজতে থাকে স্বাধীন বাংলার পতাকা। জনৈক ছিদ্দিকউল্যাহর দোকানে ওরা পেয়ে যায় স্বাধীন বাংলার একটি পতাকা।- ক্রোধে ফেটে পড়ে ওরা। লাইনে দাঁড়ানো কয়েকজন মুসল্লিকে ছেড়ে দেয়া হয়। বাকী প্রায় পঞ্চাশজন নিরপরাধ নিরস্ত্র মানুষকে ব্রাশফায়ার করে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়। ব্রাশফায়ারের পরও যারা বেঁচেছিলো তাদেরকে বেয়নেট চার্জ করে পৈশাচিক উ‍ল্লাস প্রকাশ করার পর পাকিস্তানী পশুরা হত্যা করে। মানুষের তাজা রক্তে সয়লাব হয়ে যায় খালের পানি। রক্ত আর পানিকে পার্থক্য করা যায়নি। এই হতভাগ্য মানুষদের অপরাধ ছিলো- তারা বলেনি কারা এ‍লাকার মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, কারা মুক্তিযোদ্ধা। তাদের অপরাধ, দোকানে পাওয়া যায় স্বাধীন বাংলার পতাকা।

এই হত্যাকান্ড জঘন্য বর্বরতা। মানবতাবিরোধী। নোয়াখালীর মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে গোপালপুরের এই গণহত্যা এক কালো অধ্যায়। এই ঘটনায় যারা শহীদ হন তাদের পঁচিশ জনের নাম পরিচয় উদ্ধার করা সম্ভব হয়:
১. মাহবুবুল হায়দার চৌধুরী [নশা মিয়া] (গোপালপুর)
২. দীন ইসলাম (তুলাচরা)
৩. হাবিব উল্যাহ (তুলাচরা)
৪. ইসমাঈল মিয়া (তুলাচরা)
৫. অহিদউল্যাহ (সাহাদাপুর)
৬. মোহাম্মদউল্যাহ (সাহাদাপুর)
৭. মোহাম্মদ উল্যাহ (সাহাদাপুর)
৮. দুলাল মিয়া (সাহাদাপুর)
৯. সামছুল হক মাস্টার (আটিয়াকান্দি)
১০. মজিবউল্যাহ (আটিয়াকান্দি)
১১. বশিরউল্যাহ (আটিয়াকান্দি)
১২. আবুল কাশেম (মির্জানগর)
১৩. আবুল বশর ছিদ্দিক (মির্জানগর)
১৪. হারিছ মিয়া (দেবকালা)
১৫. ছিদ্দিক উ‍ল্যাহ মিয়া (সিরাজউদ্দিনপুর)
১৬. মমিনউল্যাহ মিয়া (মুহুল্লাপুর)
১৭. মন্তাজ মিয়া (মহল্লাপুর)
১৮. নূর মোহাম্মদ (মহল্লাপুর)
১৯. আবদুল মন্নান (মহল্লাপুর)
২০. মোবারক উল্যাহ (পানুয়া পাড়া)
২১. মোহাম্মদ উল্যাহ দর্জি (চাঁদ কাশেমপুর)
২২. আবদুর রসিদ (আমিরাবাদ)
২৩. আবদুল সাত্তার (বারাহীনগর)
২৪. আবদুল করিম (হীরাপুর)
২৫. ডা: মোহাম্মদ সুজায়েত উল্যাহ (দশঘরিয়া, চাটখিল)

১৯৭১ সালের ১৯ আগস্টের এই নিষ্ঠুর গণহত্যার স্মরণে গোলাম ছাত্তার নোমান, তপন কুমার ভৌমিক প্রমুখের প্রচেষ্টায় ১৯৮০ সালে শহীদদের নাম খোদাই একটি স্মৃতিস্তম্ভ ও শহীদ স্মৃতি সংসদ গড়ে উ‌ঠে‍। প্রতি বছর এই দিনে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়।


[লেখক: গোলাম আকবর, সদস্য সচিব, নোয়াখালী মানবাধিকার জোট]

ফেইসবুকে যোগ করুন

শুক্রবার, ১৭ আগস্ট, ২০০৭

আশা

স্বর্গের চূড়া হতে
স্বপ্ন উপত্যকা ছুঁয়ে
নেমে আসে অমৃতধারা;
মোহনায় মিশে তোমার সমুদ্রে।

বারবার ফিরে আসি তোমারই কাছে
যদি কিছু অমৃত পাওয়া যায়!

ফেইসবুকে যোগ করুন

ভয়

'চলো সমুদ্র দেখে আসি'
তুমি বললে- না, সমুদ্র আমার ভাল্লাগেনা।

প্রশ্ন করলাম, কেন?
বললে, কি বিশাল বিশাল সব ঢেউ আছড়ে পড়ে সারাক্ষণ
আমার ভয় করে, যদি ডুবে যাই!

বললাম, এতটুকুন সমুদ্রের মাঝে হারাবার ভয় তোমার!
আমার অতলে ডুব দিতে তোমার একটু ও ভয় করলোনা?

ফেইসবুকে যোগ করুন

তুমি ও আমার কবিতা

খুব ভোরে সূর্যদেবের ঘুম ভাঙার পূর্বে ঈশ্বরবন্দনা;
সারাটা সকাল রাবীন্দ্রিক ধ্যানে মগ্নতা
কিম্বা রক এন রোল
কিম্বা বাউলিয়ানা।

দুপুর জুড়ে নিউটন ডারউইন অথবা গণিতের অসীম রাশিতত্ত্বে হিমশিম কলেজে।
বিকেলে বন্ধুদের উত্তপ্ত আড্ডায় কখনো দর্শন
কখনো ডান আর বামের প্যাঁচাল
কখনো শেয়ার বাজার
কখনো বিটোভেনের সপ্তম সিম্ফোনী
কখনো পিকাসো ও দ্য ভিঞ্চি
কখনো কোন লুপ্ত সভ্যতার পোস্টমর্টেম
কখনোবা নারী প্রসঙ্গ।

সন্ধ্যা জুড়ে পারিবারিক আড্ডা এবং
জাগতিক সৌজন্য রক্ষায় ব্যস্ত সময়;
এরপরেই টেলিভিশন নয়তো বুকশেল্ফে ক্লান্ত চোখ মেলা

এবং রাত্রি জুড়ে শুধু তুমি ও আমার কবিতা
শুধু তুমি ও আমার কবিতা...

ফেইসবুকে যোগ করুন

বৃহস্পতিবার, ১৬ আগস্ট, ২০০৭

একটি কবিতা লিখবো বলে

একটি কবিতা লিখবো বলে তোমাকেই প্রয়োজন ছিলো। উপযুক্ত শব্দের খোঁজে তোমার পুষ্পিত ঠোঁটের খুব কাছ থেকে আমাকে ফিরে যেতে হয়েছে। তোমার নান্দনিক সৌন্দর্যের এক কনাও আমাকে ধার দাওনি। আমার তৃষিত কল্পনা তোমার অজানা বাঁক লক্ষ্য করে বার বার পাল তুলেছে। কিন্তু তোমার প্রতিকূলতার জোয়ারে একটি বারও তীরে পৌছুতে পারেনি। একটি কবিতার জন্য আমি আর কতকাল অপেক্ষা করবো? আমি আর কতকাল কবিতাহীন থাকবো, হে অবুঝ নারী?

ফেইসবুকে যোগ করুন

বুধবার, ১৫ আগস্ট, ২০০৭

মানুষ

আয়নায় নিজের চেহারার সাথে
পশুর চেহারার মিল খুঁজে পাই বলে
আমি আতংকিত নই।

আমি জানি, মানুষের ইতিহাস বলে
সে একদিন পশু ছিলো;

আমি সত্যিই আতংকগ্রস্থ হই
যখন দেখি আসল পশুরা
মানুষ সাজে!

ফেইসবুকে যোগ করুন

ব্যক্তিগত ডায়রি। ৭ আগস্ট ২০০৭

এক বছর পর আবার চন্দ্রিমা
ঘুরে ফিরে স্মৃতির কাছেই আসা
আজ বৃষ্টি নামেনি।

ফেইসবুকে যোগ করুন

বুধবার, ১ আগস্ট, ২০০৭

এখনো কি সময় হয়নি

ইদানিং রাত অনেক দীর্ঘ
চৈতন্যের গভীরে প্রেতায়িত অন্ধকার
তীব্র থেকে তীব্রতর...

একচক্ষু দানবের আস্ফালন
সূর্যোদয় হতে সূর্যাস্তের ভূমিতে ভূমিতে।

এই রাত কি কখনো ভোর হবে
পাশবিক চীৎকার ঢেকে যাবে পাখির কলতানে!
না কি যুগান্তরের শেষ সুর তোলার
প্রস্তুতি সম্পন্ন দেবদূতের!

কোথায় তুমি আলোকিত মানুষ,
এখনো কি সময় হয়নি?

ফেইসবুকে যোগ করুন

সোমবার, ৩০ জুলাই, ২০০৭

নস্টালজিয়া

আমি একদিন বৃষ্টি নামিয়েছিলাম
আমরা একদিন বৃষ্টি নামিয়েছিলাম
অথবা একদিন বৃষ্টি নেমেছিলো চন্দ্রিমায়...

ফেইসবুকে যোগ করুন

শনিবার, ২৮ জুলাই, ২০০৭

ছবি ব্লগ।। নোয়াখালী সরকারি কলেজ


ছবিটি তুলেছিলাম ২০০৬ এর জানুয়ারিতে। এটি নতুন ক্যাম্পাসের ছবি। এই ক্যাম্পাসে শুধু অনার্স মাস্টার্স শ্রেণীর ক্লাস হয়। এইচ এস সি'র ক্লাস হয় পুরোনো ক্যাম্পাসে।

ফেইসবুকে যোগ করুন

দু'জোড়া ঠোঁট

এক জোড়া ঠোঁট নিষ্ক্রিয় !
দু'জোড়া ঠোঁট সক্রিয় !!
যতক্ষণ সক্রিয় ততক্ষণই বেঁচে থাকা !!!
দু'জোড়া ঠোঁট আলাদা হলেই মরণ !!!!

ফেইসবুকে যোগ করুন

মাতাল

কিছুই করিনি পান;
না শারাব, না মাদক।

অথচ দ্যাখো, আমি ঠিক মাতাল হয়েছি।
বিপর্যস্ত দুচোখ নেশায় ঢুলু ঢুলু,
দ্রুত থেকে দ্রুততর হয় হৃদস্পন্দন,
উত্তপ্ত কপালে নোনতা স্বেদ।

কে জানতো, শারাবকেও হার মানাবে
নারীর শরীরী ঘ্রাণ

ফেইসবুকে যোগ করুন

নারী

নারী মানে অগ্নিগিরি
নারী মানে ঝড়
নারী মানে বরফশীতল
নারী মানে ঘর।

ফেইসবুকে যোগ করুন

কবিতার জন্মকাহিনী

কালো যে কয়লা,
সেও মৃত্তিকার চাপে
ভূগর্ভের উষ্ণতায় জ্বলে
রুপান্তরিত হয় অমূল্য হীরকে।

তোমার দেয়া দূঃখগুলোও তেমনি
হৃদয়ের চাপে,
ভালোবাসার উষ্ণতায় পুড়ে
হীরকের পূর্ণতা পায়,
উঠে আসে কবিতার খাতায়-
জ্বলজ্বলে অক্ষরের নান্দনিক বিন্যাসে।

ফেইসবুকে যোগ করুন

প্রতীক্ষা

ভাবনার এলোমেলো প্রান্তরে পদশব্দহীন
সকাল, দুপুর, সন্ধ্যা এবং রাত্রি।
তবুও কাটেনা প্রতীক্ষার প্রহর।

দিন যায় দিন আসে,
রাত যায় রাত আসে,
পৃথিবীর বয়স বাড়ে,
গতিপথ পাল্টে যায় কত নদীর।

ধ্যান ভাঙ্গাবার যজ্ঞে বলি হয়
শৈশব, কৈশোর, তারুণ্য;
তবুও ভাঙ্গেনা ধ্যান সেই ঋষির।

একা এলোমেলো আমি
পদশব্দহীন প্রান্তরে।

ফেইসবুকে যোগ করুন

তবুও

আমি থাকবোনা জানি একদিন এই স্থূল দেহে;
তখন সূক্ষ্ণ জ্যোতির্ময় অবয়বে
ঘুরবো কিনা এই বিশ্ব ব্রহ্মান্ডে
তা আমার জানা নেই।
অথবা বিলীন হয়ে যাবো কিনা অনন্ত চেতনায়
তাও আমার জানা নেই।

তবে এইটুকু জানি,
আমার এই সব কবিতারা থাকবে।

হয়তো ধূলো জমবে কয়েক প্রস্থ পান্ডুলিপির ’পরে,
বহুদিনের স্যাঁতসেঁতে স্মৃতির মত পড়ে থাকবে নিঝুম ভাঁড়ার ঘরে।
অথবা কোন এক নারীর গোপন চিলেকোঠায়,
নিষিদ্ধ শব্দাবলীর মত
কিম্বা সযত্ন অবহেলায়।

ফেইসবুকে যোগ করুন

রাত্রির কাছে

রাত্রির কাছে গচ্ছিত রেখেছি সকল স্বপ্ন,
রৌদ্রালোকে ঘুরি স্বপ্নহীন।
এই জনারণ্যে বিবস্ত্র জীবনের বিবর্ণ ইচ্ছেগুলো
বড় বেশি আক্রমণাত্মক,
শার্দূল চোখে ক্ষমাহীন আক্রোশ নিয়ে তাকায়,
এগিয়ে আসে যেন পৌরাণিক দানব এক,
ঘাড়ে চেপে বসে সিন্দবাদের ভূতের মত
যুগের পর যুগ;
দূর্বিষহ বাস্তব শুধু
দূঃখেরই কোরাস গায়;
যান্ত্রিক চাওয়া পাওয়াতে স্বপ্নরা নির্বাসনে খোঁজে সুখ।

তাই রাত্রির কাছে গচ্ছিত রেখেছি সকল স্বপ্ন,
রৌদ্রালোকে ঘুরি স্বপ্নহীন।

ফেইসবুকে যোগ করুন

তুমি কোথায়

একদিন আমাদের পদচারণায়
মুখর ছিলো এই পার্ক,
সবুজ গানে আন্দোলিত পার্ক।

এক সময় পাতা মরে, পাতা ঝরে,
সবুজ পার্ক ধূসর হয়;

আবারও সবুজ হয়
অন্য কোন যুগলের পদচারণায়।

সিমেন্টে বাঁধানো বেঞ্চ নিরব প্রশ্নচিহ্ন হয়,
তুমি কোথায়?

ফেইসবুকে যোগ করুন

আমার লাশ তোমাকে দিলাম

যদি আমার বুকের রক্তে তোমার
মরুর ক্যাকটাস রুপান্তরিত হয় সবুজ শস্যে,
তবে এই নাও, আমার একবুক রক্ত তোমাকে দিলাম।

যদি আমার দৃষ্টি তোমার নিস্পৃহ চোখে
আনতে পারে অরণ্যের সজীবতা,
ফোটাতে পারে ভালোবাসার অমরা,
তবে এই নাও আমার দুচোখ তোমাকে দিলাম।

যদি আমার হাত তোমার অতলস্পর্শী
খনি খুঁড়ে তুলে আনতে পারে
হারিয়ে যাওয়া রত্ন,
তবে এই নাও, আমার দুহাত তোমাকে দিলাম।

যদি আমার শরীর পঁচা হিউমাসে
উর্বর হয় তোমার শস্যক্ষেত,
তবে এই নাও, আমার লাশ তোমাকে দিলাম।

ফেইসবুকে যোগ করুন

ভালোবাসি

আবারও চোখে বিষাদের ময়লা জমেছে
রক্তে কষ্টের বুদবুদ
আবারও গায়ে লাশের গন্ধ জমেছে
বুকের গভীরে অবিরাম শোক।

এত বিপর্যয়ের পরেও কিভাবে যে
হাঁটতে পারি, গাইতে পারি
মেঘের বুকে স্বপ্নদৃশ্য আঁকতে পারি,
নিজেই জানিনা।

তবুও বলি...

দেবীর উদ্দেশ্যে নৈবেদ্য হাতে নতজানু পূজারীর মত বলি,
বার বার বলি,
শোন, ‘ভালোবাসি’।

ফেইসবুকে যোগ করুন

অচেনা তুমি

আজকাল তোমাকে দেখি
কি এক ধ্যানে মগ্ন সারাক্ষণ- নিশ্চুপ,
প্রগলভতা হারিয়ে গ্যাছে
মৌনতার আড়ালে।
সেই স্বপ্নীল দৃষ্টিও আর নেই।
বোধের ওপারের অলৌকিক আলো
খেলা করে দুচোখে তোমার।

আমি বিস্মিত বারে বার,
তোমার গানে খুঁজে পাই যেন
অদ্ভূত এক সুর।

ফেইসবুকে যোগ করুন

শুক্রবার, ২৭ জুলাই, ২০০৭

রাত্রির নরকে

রাত্রি বাদুড়ের ডানার মত
ছায়া ফেলে শহরে।
পরিচিত পৃথিবী অচেনা
আধখানা চাঁদের বিষন্ন আলোয়।
শয্যা যেন জ্বলন্ত অঙ্গার।
তৃষ্ণার্ত ঠোঁট পায়না জলের স্পর্শ,
শুধু বিছানায় এপাশ ওপাশ...
আমি একা জেগে থাকি
রাত্রির নরকে...

ফেইসবুকে যোগ করুন

মায়ের কাছে

কত শত কষ্টের প্রহর ঠেলে
ঘুরে ঘুরে ঘুরে ঘুরে
ক্লান্ত সত্ত্বার গভীরে।
শত অভিমান শত কান্না,
ব্যর্থতার সুরভীতে মাতাল বেহুঁশ।

হাজার মাইল পথ হেঁটে
নিয়নের উজ্জ্বলতা যখন হারায় অন্ধকারের গর্ভে,
ফিরে আসি নিশ্চিত আশ্রয়ে
ফিরে আসি মায়ের কাছে।

ফেইসবুকে যোগ করুন

আমার কষ্টগুলোর বর্তমান দিনকাল

আমার কষ্টগুলোর
ইদানীং সুদিন চলছে।
আমার মাঝে উর্বর সার পেয়ে তারা দিন দিন
তরতাজা হয়ে উঠছে।
ক্রমান্বয়ে হৃদয়ের গভীর থেকে গভীরে
শিকড় গেঁড়ে চলছে।

ফেইসবুকে যোগ করুন

হাত বাড়িয়ে

হাত বাড়িয়ে বন্ধু খুঁজি
হাত বাড়িয়ে সুখ
হাত বাড়ালেই শূন্য সব
হাত বাড়ালেই দূখ।

হাত বাড়িয়ে হাত খুঁজি তার
হাত বাড়িয়ে চোখ
হাত বাড়ালেই হাতের কাছে
পাইনা আপন মুখ।

ফেইসবুকে যোগ করুন

বৃত্তের কেন্দ্রে তুমি

বৃত্তের কেন্দ্রে তুমি,
মাঝে অদৃশ্য সুতোর টানে
কেন্দ্রমূখী বল;
পাশাপাশি সমান ক্রিয়াশীল কেন্দ্রবিমূখী বল।
ফলাফল-
পরিধি বরাবর ঘূর্ণায়মান আমি,
কেন্দ্রে তুমি।

ফেইসবুকে যোগ করুন

প্রাত্যহিক

প্রাত্যহিক
...............................

শুরুটা চমৎকার,
উচ্ছ্বসিত
উচ্চকিত
ইতিবাচক।

শেষ বিষন্নতায়,
নিস্তেজ
নিঃশব্দ
নেতিবাচক।

ফেইসবুকে যোগ করুন

তবে কি তুমি আসছো

দখিনা হাওয়া এসে উড়িয়ে নেয় জমে
থাকা ঘরের ধূলো; এক পশলা চকিত
বৃষ্টি ধুয়ে দেয় মায়াবী উঠোন; জানালার
ফাঁকে রোদ্র হানা দেয়, চলে যায় গুমোট
আঁধার; বহুদিনের নির্জীব হাস্নাহেনার ডাল
চিরে উঁকি দেয় কচি ডগা, বিকেল না গড়াতেই
উথাল পাথাল ঘ্রাণ; গতকাল চাঁদ ছিলো কি
আকাশে, জানা নেই; আজ আঁধার না ঘনাতেই
কি অবাক জোৎস্না! তবে কি তুমি আসছো!
তবে কি তুমি আজ আসছো আমার ঘরে!

ফেইসবুকে যোগ করুন

একদিন নিশ্চয়

প্রতিদিন প্রতীক্ষায় অষ্টপ্রহর;
চিরহরিৎ নিমগ্নতায় গভীর ধ্যানে ভবিষ্যতের চিত্রকল্প-
একদিন আসবে ফিরে নিশ্চয় ।
নিশ্চয় অনাগত কালের গর্ভে আমাদের সম্ভাবনা প্রস্ফুটিত, জানি।
একদিন কোন বৃক্ষের বর্ষার সুখের মত
আন্দোলিত পল্লবে পল্লবে আমাদের কথামালা
পরাবাস্তব গল্প সাজাবে।
আমাদের কাঁদাবে, হাসাবে, ভালোবাসার ধ্বনি তুলবে।
চকিত খুনসুটির তীক্ষ্ণ সুখে তৃপ্তির নিঃশ্বাস নেবে।
একদিন শীত সকালের ঘুম আলস্য ঝেড়ে ফেলে বলবেই-
চল হাত ধরি, অনেক হয়েছে কথপোকথন;
এবার চোখের ভাষার অনুবাদ হোক।
এসো, সংসার সাজাই।

ফেইসবুকে যোগ করুন

তৃষ্ণা মেটেনা

এক সময় কত প্রমত্ত ছিলো নদীটি।
সারাটা দুপুর কেটে যেতো
নদীর জলে সাঁতার কেটে।
খুব পিপাসার্ত হলে নদীর জলেই তৃষ্ণা মেটাতাম।
এখন নাব্যতা হারিয়েছে নদী,
বর্ষার আহ্বানেও আর দু’কূল আলিঙ্গণ করতে ছুটে আসেনা।
শুধু মাঝে মাঝে তার বুকে
অশ্রু’র ফোঁটার মত কিছু জল বয়ে যায়
আমার তৃষ্ণা মেটেনা,
তৃষ্ণা মেটেনা।

ফেইসবুকে যোগ করুন

আততায়ী

নিজেই নিজের পোস্টমর্টেম করে দেখেছি,
শরীরে আঘাতের কোন চিহ্ন নেই;
বুক চিরে হৃদপিন্ড স্পর্শ করেনি কোন তীক্ষ্ণ ছুরি,
শরীর পোড়েনি আগুনে,
বুক পিঠ ফুটো করে চলে যায়নি কোন বুলেট,
দেহের কোন হাড় ভেঙ্গে যায়নি
কিম্বা পাকস্থলীতে নেই প্রাণঘাতী হেমলক।
তাহলে কেন আমি আজ আহত!
কি এক আশ্চর্য অস্ত্রের আঘাতে
আমার হৃদয় ফুটো হয়ে গ্যাছে।
আততায়ী, এ কেমন অস্ত্র তোমার!

ফেইসবুকে যোগ করুন

বৃহস্পতিবার, ২৬ জুলাই, ২০০৭

শুভেচ্ছা সবাইকে!!!


ব্লগস্পটে আজই একাউন্ট তৈরি করলাম। সবাইকে শুভেচ্ছা। আশা করছি নিয়মিত লিখবো।

ফেইসবুকে যোগ করুন