rss

জালছেঁড়া নদী

জালছেঁড়া নদী
আমার প্রথম কাব্যগ্রন্থ। প্রকাশকাল: ফেব্রুয়ারি, ২০০৯। প্রকাশক: ভাষাচিত্র, ৩য় তলা, আজিজ সুপার মার্কেট, ঢাকা।

প্রান্তজন

প্রান্তজন
শহীদুল ইসলাম মুকুল

বৃহস্পতিবার, ৩০ এপ্রিল, ২০০৯

কাতার ভ্রমণ (পর্ব-৫)

সম্মেলনের শেষ দিনে দেখি ভাঙা হাটের মত ব্যাপার স্যাপার। লোকজন এলোমেলো ঘুরছে। অংশগ্রহণকারী সংখ্যায় কিছুটা কম মনে হলো। অনেকেই হয়তো শহর দেখতে বেরিয়েছে! কেউ কেউ হয়তো ফিরেও গেছে অথবা রাতেই ফিরে যাবে! সম্মেলনে নতুন কোন কিছু নেই। হলরুমে বিভিন্ন জনের প্রদর্শিত পেপারেরই উপস্থাপনা হচ্ছে সরাসরি। প্রশ্নোত্তর পর্ব চলছে। হলরুমের বাইরে নাশতার টেবিলে ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে আলোচনা চলছে।

Qatar Tribune এ সম্মেলন এবং আগের দিনের বিল গেটসের বক্তৃতার খবর হেডলাইন করলো। সেই পেপার কাটিং প্রদর্শিত হচ্ছে।

নাশতার টেবিলে এক হলাম ড. অনন্য রায়হান, আশির আহমেদ, ফাহিম হুসেইন, ফরহাদ ভাই। আশির ভাই তার ওয়ান ভিলেজ ওয়ান পোর্টাল পেপার নিয়ে আলোচনা করছিলেন। সবাই মিলে আলোচনা হলো দেশে কিভাবে আইসিটি'র উন্নয়নে কাজ করা যায়। সিদ্ধান্ত হলো ড. অনন্য রায়হান উদ্যোগ নিবেন প্রযুক্তিবিদদের এক করে কোন সম্মেলন করা যায় কিনা। তাহলে পরবর্তীতে নতুন নতুন আইডিয়া নিয়ে কাজ করা যাবে। সম্ভাব্য অর্গানাইজিং কাজগুলো নিয়ে আলোচনা হলো।
[caption id="attachment_52592" align="alignnone" width="300" caption="ফাহিম হুসেইনের প্রদর্শিত পেপার"]ফাহিম হুসেইনের প্রদর্শিত পেপার[/caption]
বিকেলে আসলো Carlos A. Primo Braga, Director, Economic Policy and Debt in the Poverty Reduction and Economic Management Network (PREM) at The World Bank। তার বক্তৃতায় বেশ হিউমার মেশানো ছিলো। কিছুক্ষণ পর পরই তার কথায় হাসির হুল্লোড় উঠতো। ইংরেজী বক্তৃতা অনুসরণ করার ক্ষেত্রে বিরাট সমস্যা। দেখা গেলো কেউ কিছু বলার পর মনে মনে তার অনুবাদ করছি, এর মধ্যেই আরো কয়েকলাইন বলে ফেললো। শেষে সবকিছু মিলিয়ে একটা তালগোল পাকিয়ে যাওয়ার জোগাড়। মনে রাখাও কঠিন হয়ে দাড়ায়! সরাসরি ইংরেজীতে চিন্তা করার কোন পদ্ধতি থাকলে ভালো হতো!


এর মধ্যে ভাতিজা দেশে ফিরে যাওয়ার সময় ঘনিয়ে এলো। এসেছিলো আমার দুদিন আগে। যাবেও আমার দুদিন আগে। যাওয়ার আগে তার কাছে স্থানীয় একটা সীম কার্ডসহ ফোন ছিলো। ১৫ তারিখ কাতার আসার পর আমার পরিচিত গুলজার ভাই তার থাকার ব্যবস্থা করেছিলো তার এক সহকর্মীর বাসায়। সহকর্মীর একটি ফোন তার কাছে ছিলো যোগাযোগের জন্য। যাওয়ার আগে আমার কাছে ফোনটা রেখে গেলো পৌছে দেয়ার জন্য। আমি সন্ধ্যার কিছুক্ষণ আগে কলি আপাকে ফোন দিলাম।

কলি আপা হলো অলৌকিক হাসান এবং টুটুল ভাইয়ের বন্ধু। কাতারেই সেটল করেছে। দেশে থাকতেই ফোন নাম্বার সংগ্রহ করেছিলাম। আমি ভেবেছিলাম কলি আপা হয়তো আমাকে চিনবে না। কিন্তু উনি আগেই টুটুলের সাথে ফোন কথা বলেছিলেন। নাম বলতেই বলে উঠলেন, "আপনার তো ১৫ তারিখ আসার কথা। এত দেরিতে ফোন করলেন!"

ফোনে তার জীবনসঙ্গী আরিফ ভাইয়ের সাথেও পরিচয় হলো। দুজনেই দারুণ মানুষ। অল্প কথাতেই আপন করে নেবার অসাধারণ ক্ষমতা! ঠিক হলো আমি হোটেলে ফিরলে তারা আসবেন।

ডিনার শেষে দেখি আমার পরিচিত সবাই আগেই চলে গেছে। সবার ফ্লাইট রাত ১১টায়। তাই আগেই সম্মেলন থেকে বেরিয়ে গেছে। আমার যেহেতু দুদিন পর, তাই ধীরে সুস্থে নির্ধারিত বাসে রাত ৮.৩০টা নাগাদ হোটেলে ফিরে আসলাম। হালকা বিশ্রাম নিয়ে প্রতীক্ষা। দশটার পরে কলি-আরিফ দম্পতি এলেন। এসেই আর পরিচয় পর্বের জন্য সময় নষ্ট করলেন না। গাড়ী নিয়েই শহরের প্রধান প্রধান আকর্ষণীয় জায়গাগুলোতে নিয়ে গেলেন। সেই সাথে অভিজ্ঞ গাইডের মত বিস্তারিত বর্ণনা। আমি তাদের কর্মতৎপরতায় যারপরনাই মুগ্ধ হলাম। এই দুজনের সাথে দেখা না হলে আমার কাতার ভ্রমণ অসম্পূর্ণ থেকে যেতো।

প্রথমে গেলাম কাতারের অলিম্পিক ভিলেজে। স্টেডিয়ামের পাশে দারুণ একটা মিনার করেছে। তার পাশেই কারফুর নামে একটা বিশাল শপিং মল। শপিং মলটা দেখে মুগ্ধ না হলে উপায় নেই। বিশাল স্পেস নিয়ে একটাই ফ্লোরে অবস্থান। একদিক থেকে হাঁটা শুরু করলে শেষ হতে চায় না। ছাদটা যেন আকাশের মত সাজিয়েছে। চাঁদ উঠছে। মেঘ ভেসে বেড়াচ্ছে।
[caption id="attachment_52593" align="alignnone" width="300" caption="চাঁদ উঠেছে কারফুরের আকাশে"]চাঁদ উঠেছে কারফুরের আকাশে[/caption]
মার্কেটের একেক অংশ একেক শহরের মত করে থিমেটিক্যালি সাজানো। ভেনিসের মত করে এক অংশ সাজানো। ভেনিস শহরের মত করেই টাইলস, নকল বাড়ী, লেক ইত্যাদি ইত্যাদি। কাতার গেলে এই মার্কেটে অবশ্যই একবার হলেও যেতে ভুলবেন না কেউ। মুগ্ধ না হওয়ার কোন কারণ নেই। আমরা যখন পৌছালাম তখন অবশ্য ভীড় একেবারেই নেই। বন্ধ হওয়ার সময় হয়েছে। দ্রুত এক চক্কর দিয়ে বেরিয়ে এলাম।
[caption id="attachment_52594" align="alignnone" width="300" caption="শপিং মল কারফুরের একাংশ"]শপিং মল কারফুরের একাংশ[/caption]
দু:খের কথা হলো, ক্যামেরা না থাকায় ছবি তুলতে পারলাম না। মোবাইলে দুএক্টা তুলেছিলাম। তবে মোবাইলে ছবি তুলে আরাম নেই, কোয়ালিটিও নেই। তাই ছবি তোলা হলো না। তাছাড়া মোবাইলে রাতের বেলা ছবি একেবারেই যাচ্ছেতাই আসে। তাই ছবি তোলার প্রচেষ্টা বাদ দিলাম। কলি আপা দূ:খপ্রকাশ করলেন। আগে জানালে তাদের ক্যামরা নিয়ে আসতে পারতেন।

এরপর গেলাম শহরের ভেতরের পুরোনো শহরে। কাতারের এই জিনিসটা আমার খুব ভালো লেগেছে। শহরের একেক অংশ একেক রকমভাবে সাজিয়েছে। যেমন একটা অংশে তাদের পুরোনো ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্যকলার অনুসরণে সাজানো হয়েছে। সবকিছু পুরোনো আমলের মত তৈরি করা। বাড়ী, ঘর, দোকানপাট। ঢুকলেই মনে হবে ১০০ বছর অতীতে ফিরে গেছি।

আরেকটি অংশে সব উঁচু উঁচু দালান। আলোকসজ্জিত আকাশছোঁয়া দালান শুধু শহরের সমুদ্রপাড়ে ঐ অংশেই আছে। এছাড়া দোহার অন্য অংশে দালানগুলো উচু নয়। বিষয়টা চোখের জন্য খুবই স্বস্তিদায়ক মনে হলো আমার।


সমুদ্র পাড়ে কিছুক্ষণ হাঁটলাম। এই অংশে সমুদ্রের পাড় বাধাই করা। একেবারেই শান্ত সমুদ্র। পারস্য উপসাগরে এত শান্ত এটা আগে ভাবি নাই। দখিণা বাতাসে আমার স্থানীয় নদীতেও এর চেয়ে বড় স্রোত আছড়ে পড়ে! সে যাই হোক, সমুদ্র পাড়ে একটা দালান দৃষ্টি আকর্ষন করলো। কিছুক্ষণ পর পরই রঙ পাল্টাচ্ছিলো। দালানটা ঠিক কিসের এখন মনে পড়ছে না। কলি আপা বলছিলেন, বছরের এই সময়ে আবহাওয়া সাধারণত এত ভালো থাকে না। আমার ভাগ্য ভালো চমতকার একটা সময়ে গিয়েছি। আসলেই তাই। বাতাস একেবারেই ঠান্ডা। মরুভূমির বাতাস যেরকম উত্তপ্ত হওয়ার কথা, তার ধারে কাছেও নাই। একেবারেই ঝিরিঝিরি ঠান্ডা বাতাস। রাতের বেলা সমুদ্র পাড়ে প্রচুর লোক হাটতে আসে। সময় কাটানোর জন্য দারুণ স্থান।

এরপর গেলাম হেরিটেজ পার্কে। সমুদ্র পাড়ের কাছাকাছিই অবস্থান। হেরিটেজ পার্কে দেখলাম শুধু ফ্যামিলি অ্যালাউড। ব্যাচেলররা পার্কের সীমানার বাইরেই থাকে। আমরা সেখানে পৌছালাম রাত সাড়ে বারোটার দিকে। চা খেতে খেতে পার্ক ঘুরে দেখলাম। তখনো দেখি শিশুরা পার্কে খেলছে। তাদের অভিভাবকরা ঘাসের উপরে বসে বসে গল্প করছে। ফ্যামিলি পার্কের ধারণাটা আমার কাছে চমকপ্রদ মনে হলো। আমাদের দেশে তো রাতের বেলা পার্কের যে পরিবেশ, তাতে করে ফ্যামিলি নিয়ে যাওয়ার কথা কল্পনাই করা যায় না!

কলি-আরিফ দম্পতি আমাকে যখন হোটেলে পৌছে দিলেন তখন রাত প্রায় দেড়টা বাজে। এতরাত পর্যন্ত আমাকে তারা সময় দিয়েছেন যে শুধু মুখে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেই মন তৃপ্ত হচ্ছে না। অবশ্য এখানেই শেষ নয়। পরের দিনও তাদের সহযোগিতা পেয়েছি। তাদের সহযোগিতা না পেলে কেনাকাটাও করা হতো না। সেই গল্প পরের পর্বে। :-)

ফেইসবুকে যোগ করুন

মঙ্গলবার, ২৮ এপ্রিল, ২০০৯

কাতার ভ্রমণ (পর্ব-৪)

১৮ এপ্রিল ২০০৯, আন্তর্জাতিক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি এবং উন্নয়ন বিষয়ক সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন

সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন শুরু হলো ঢিলে ঢালা ভাবে। যথারীতি বাসে করে এডুকেশন সিটি, কার্নেগী মেলন ক্যাম্পাস। তারপর ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন পেপার দেখা, মতবিনিময়। ফাঁকে ফাঁকে খাওয়া দাওয়া।

এর মাঝে মনে হলো ক্যাম্পাসটা ঘুরে দেখা হলোনা। তাই ঘুরে ঘুরে ছবি তুলতে লাগলাম। প্রথম দিনই বলা হয়েছিলো দ্বিতীয় দিনে সিকিউরিটির কড়াকড়ি থাকবে। কারণ বিল গেটস কী-নোট উপস্থাপন করবে। গেটসের কী-নোট উপস্থাপনের সময় সন্ধ্যা ৬টা। কিন্তু সকাল বেলা থেকেই সিকিউরিটি সতর্ক। পরিচয় পত্র ছাড়া কাউকে কনফারেন্স হলে ঢুকতে দিচ্ছেনা।
দোহার দৈনিক পত্রিকাতেও বিলের আসার খবর প্রকাশিত হয়েছে। সেই পেপার কাটিং দেখলাম দেয়ালে সাঁটা হয়েছে।

আমি আর ভাতিজা ক্যাম্পাসে ঘুরে ঘুরে ছবি তুলছি। একটা জায়গায় ত্রিমাত্রিক দেয়াল চিত্র দেখলাম। দারুণ লাগলো দেয়ালচিত্রগুলো। ছবি তুলতে তুলতে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন রুমে ঢুকছি। প্রায় ফাঁকা বিভিন্ন রুম। কাউকে দেখা যাচ্ছিলোনা। সিকিউরিটির কাউকেও দেখছিলাম না। নিশ্চিন্ত মনে ছবি তুলছি। হঠাৎ ভোজবাজির মত এক সিকিউরিটি কর্মীকে দেখা গেলো। বললো এই জায়গায় ক্যামেরায় ছবি তোলার অনুমতি নেই। আমাকে বললো ছবি মুছে ফেলতে। কোনমতে সর্বশেষ ছবিটা মুছে তাকে বুঝ দিলাম। সে ভাবলো বুঝি একটা ছবিই তুলেছি! তাই ছেড়ে দিলো। ;)

হাঁটতে হাঁটতে ক্যাম্পাসের পাশে মেডিকেল কলেজ প্রাঙ্গণে আসলাম। বেলা তখন তিনটা। হঠাৎ দেখি দুটো গাড়ী আসলো। পেছনে পুলিশের একটা কার। গাড়ীর ভেতরে দেখেই চিনলাম, বিল গেটস চলে এসেছে। বিল নিজেই গাড়ী থেকে নেমে দরজা ধরে দাড়িয়ে থাকলো। আরো দুজন নামার পর বিল নিজেই দরজা বন্ধ করলো। তারপর ক্যাম্পাসে ঢুকে গেলো।

মনে হলো, কিছুদিন আগেও যে পৃথিবীর সেরা ধনী ছিলো, তার আচার আচরণ দেখলে মনে হয় না তেমন! অথচ আমরা কিছু কাঁচা টাকা পয়সা হলেই "মুই কি হনুরে" টাইপ ভাব ধরি!

আমাদের দেশে এরকম কল্পনাই করা যায় না। বিল যখন বাংলাদেশে আসলো, তখনকার কথা মনে হলো। সর্বক্ষণ তার চারপাশে মানুষজন গিজগিজ করছিলো। কাউকে অতিরিক্ত ভক্তি না করতে পারলে আমাদের মন তৃপ্ত হয়না মনে হয়!

বিল গেটস আইসিটি কাতারের কর্মকর্তাদের সাথে মিটিং সেরে সম্মেলন কক্ষে আসলো। প্রায় ঘন্টাখানেক তার বক্তৃতা দিলো। শিশুদের জন্য কাজ করার, দরিদ্রদের জন্য কাজ করার প্রতি গুরুত্বারোপ করলো। বক্তৃতা শেষে প্রশ্নোত্তর পর্বে সঞ্চালক মজা করে বললেন, বিলকে উইন্ডোজ নিয়ে প্রশ্ন করা যাবেনা। এই নিয়ে একচোট হাসি হয়ে গেলো।

বিলের বক্তৃতার সময় কাতারের আমীরের দ্বিতীয় স্ত্রী উপস্থিত ছিলো। বিলের বক্তৃতা এবং প্রশ্নোত্তর পর্ব শেষ হওয়ার পর সবাই দাড়িয়ে হাততালি দিলো। আমীরের স্ত্রীও বিলের সাথে হ্যান্ডশেক করে তারা সম্মেলন কক্ষ থেকে বেরিয়ে গেলেন।

এরপর যথারীতি ডিনারে সেরে আমরা হোটেলে ফিরলাম। হোটেল ফিরে বেরুলাম মার্কেটে যাবো বলে। কিন্তু রাত দশটার পর মার্কেটে লোকজন তেমন একটা থাকে না। তাছাড়া আল সাদ এলাকায় কোন সস্তা মার্কেট ও পেলাম না। সব দামী ব্রান্ডের দোকান। তাই কেনাকাটা স্থগিত রেখে হোটেলে ফিরে আসলাম।




ফেইসবুকে যোগ করুন

শুক্রবার, ২৪ এপ্রিল, ২০০৯

কাতার ভ্রমণ (পর্ব-৩)

১৭ এপ্রিল ২০০৯, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি এবং উন্নয়ন বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলনের প্রথম দিন

প্রধান গেটের সামনে আসতেই সেন্সর নিয়ন্ত্রিত কাঁচের দরজা নিজ থেকেই খুলে গেলো। ভিতরে প্রবেশ করতেই লোকজনের আনাগোনা টের পেলাম। আমি আশা করেছিলাম আন্তর্জাতিক সম্মেলন যেহেতু, নিদেনপক্ষে একটা তোরণ হলেও থাকবে। দেশে ছোটখাট অনুষ্ঠানেও সাজগোজের বাহার দেখে এমন ধারণাই তৈরি হয়েছিলো। আন্তর্জাতিক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি এবং উন্নয়ন বিষয়ক সম্মেলনে তেমন কিছু না দেখে বেশ অবাক হয়েছিলাম।

ভেতরে রেজিস্ট্রেশন ডেস্কে গিয়ে নিবন্ধন করলাম। ততক্ষণে ২টা বেজে গেছে। লাঞ্চ সেরে ফেলেছে বেশির ভাগ অংশগ্রহকারী। ভাতিজাকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করলাম। পেলাম না। এদিকে ক্ষিধেয় পেট মোচড় দিচ্ছে। তাই আগে লাঞ্চ সেরে নিলাম। বুফে লাঞ্চ, নাশতাও বুফে সিস্টেমে। খাবার দাবারের কোন কমতি নেই। আমি খাঁটি স্ট্রবেরি, পাইনঅ্যাপেল, অরেঞ্জের খাঁটি জুস পান করতে করতে ভাবলাম, তেল বেচা টাকা দিয়ে দুনিয়ার সবকিছুই এরা ভোগ করছে। আর দেশে আমরা ম্যাঙ্গো জুসের নামে খাঁটি কুমড়োর জুস খাই!

অংশগ্রহণকারীরা বিভিন্ন কর্মশালায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। দেরিতে আসার কারণে সবকিছু বুঝতে কষ্ট হচ্ছে। এক রুমে উঁকি দিয়ে দেখি বসার জায়গাও নেই। তাই এদিক ওদিক ঘোরাঘুরি করে সবকিছু বোঝার চেষ্টা করলাম। ক্যাম্পাসের সামনেও ঘুরে আসলাম। তবে রোদের তীব্রতায় চোখ ধাঁধিয়ে যায় তাই বেশি দূর গেলাম না।


একদিকে দেখি অংশগ্রহণকারীদের পেপার প্রদর্শন হচ্ছে। সেখানে কলকাতার একজনের সাথে পরিচয় হরো। তীর্থঙ্কর নাম। বাংলাভাষী পেয়ে ভালৈ লাগলো। তার পেপার অটোমেটেড ব্রেইল সিস্টেম নিয়ে। তার শিক্ষক অনুপম বসুসহ যৌথ উদ্যোগ। তীর্থঙ্করের সাথে কথা বলতে বলতে পরিচয় হরো একজনের সাথে। প্রথমে ভেবেছিলাম ইন্ডিয়ান। আমেরিকান উচ্চারণে ইংরেজী শুনে এশিয়ান চেহারা দেখে তেমনই ধারণা হয়েছিলো। পরিচয় হতে দেখি বাংলাদেশী। নাম ফাহিম হুসেইন।

Carnegie Mellon এর ইনফরেশন সিস্টেম বিষয়ের শিক্ষক। তাঁর নিজেরও একটা পেপার প্রদর্শিত হচ্ছিলো। মজার বিষয়, তাঁর দেশের বাড়ীও নোয়াখালী। ;)

ঘুরতে ঘুরতে ভাতিজার দেখা পেলাম রেজিস্ট্রেশন ডেস্কে। স্বেচ্ছাসেবকের দায়িত্বপালন করছে। আমার পালা ছিলো বিকেল ৪টা থেকে ৫.৩০টা। কাজ ছিলো রেজিস্ট্রেশনে সহায়তা করা, তথ্য সহযোগিতা করা।
"]
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি এবং উন্নয়ন বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলনের রেজিস্ট্রেশন ডেস্কে
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি এবং উন্নয়ন বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলনের রেজিস্ট্রেশন ডেস্কে

বাংলাদেশ থেকে যাওয়া ডি.নেট'র প্রধান ড. অন্যন্য রায়হান, ফরহাদ ভাইয়ের সাথে দেখা হলো। শহীদ ভাইয়ের সাথে দেখা হলো। জাপান থেকে এসেছিলো ড. আশির আহমেদ। তার সাথে আলোচনা করতে করতে ব্লগের প্রসঙ্গও আসলো। দেখলাম জ্বীনের বাদশা ভাইকে চিনে উনি। :)

Carnegie Mellon বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরের ডিজাইন অসাধারণ! স্থাপত্যশৈলী মুগ্ধ হওয়ার মত। আরাম আয়েশের জন্য দেখলাম শোয়ার ব্যবস্থাও আছে। সম্মেলনের ফাঁকে ফাঁকে বিশ্রাম করতে চাইলে বসা অথবা শোয়ার ব্যবস্থাও আছে।

পুরো প্রাঙ্গণ জুড়েই ওয়াইফাই কানেকশন আছে। দু;খ হলো ল্যাপটপটা কেন নিলাম না। আমি ভেবেছিলাম ভাতিজা যেহেতু নিচ্ছে, আমি প্রয়োজনে তারটাই ব্যবহার করবো। তাতে করে বোঝাও কমবে। কিন্তু বাস্তবে আসলে হয় না। নিজের সাথে থাকলে লাইভ ব্লগিং করা যেতো। আরেক গাধামী করেছি ভাতিজার উপর ভরসা করে ক্যামেরাটাও নিই নাই। যেহেতু সে আমার দুদিন আগে গিয়েছে, ফিরে এসেছেও দুদিন আগে, ফলে আমার নিজের ছবি তোলাই হলোনা। এই পর্বগুলোতে ব্যবহৃত ছবির বেশির ভাগই ভাতিজার তোলা।


প্রথম দিনের ডিনার সারতে সারতে রাত ৮.৩০। তারপর সম্মেলনের নির্ধারিত বাসে করে হোটেল ফিরে আসলাম। এর মধ্যে মজার বিষয় লক্ষ্য করলাম। আমাদের অপেক্ষায় থাকা বাসগুলো সবসময়ই এসি চলছিলো। খালি অবস্থাতেও। ভাবলাম যে দেশে খাবার পানির চেয়ে তেল সস্তা, সেখানেও এরকম হবেই! প্রসঙ্গত, কাতারে খাবার পানির লিটার ১ রিয়াল। আর তেলের লিটার .৭৫ রিয়াল।

হোটেল ফিরে ভাবলাম শহরটা দেখতে বেরুবো। কিন্তু ক্লান্ত শরীরে আর বেরুতে ইচ্ছে করলো না। তাই পরের দিনের জন্য প্ল্যানটা স্থগিত রেখে ঘুমাতে গেলাম।

ফেইসবুকে যোগ করুন

কাতার ভ্রমণ (পর্ব-২)

অফলোড হওয়ায় বিমানবন্দরের আনুষ্ঠানিকতা সারতে হলো। ইমিগ্রেশনে সাধারণ ডায়রি হলো। ঘন্টাদুয়েক লাগলো সব সেরে বাসায় ফিরতে। তখন প্রায় ১১টা। ১২ টার দিকেই ভিসার স্ক্যান কপি সহ ইমেইল পেলাম। আমি তখনো নিশ্চিত না যে টিকিট রিশিডিউল করা যাবে কিনা। যার মাধ্যমে ই-টিকেট করেছিলাম, সে জানালো আমার টিকিট বাতিল হয়ে যাবে। সুতরাং যেতে হলে নতুন টিকিট করতে হবে। এদিকে বিমানবন্দরে কাতার এয়ারলাইনস এর একজন বললো, ৫০ $ ফি এর বিনিময়ে টিকিট রিশিডিউল করা যাবে।

দুপুরে গেলাম গুলশানে কাতার এয়ারওয়েজের অফিসে। ৪/৫ টা বুথে তারা সেবা দিচ্ছে। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর এক বুথে ডাক পড়লো। খুলে বলতেই ভদ্রলোক টিকিটের তারিখ পরিবর্তন করে দিলেন। যাওয়ার তারিখ ১৫ তারিখের বদলে ১৭ তারিখ, আসার তারিখ ১৯ থেকে ২১ এ পরিবর্তন করে দিলেন। ১৬ তারিখে সব সীট পূর্ণ ছিলো। তা নাহলে পরের দিনই যেতে পারতাম। পুরো কাজটা হলো বিনা ফিতে। বুথের ভদ্রলোক জানালেন, প্রথম বার পরিবর্তন ফ্রি। দ্বিতীয় বার পরিবর্তন করার ফি মাত্র ৩০ $ ।
ভাবলাম, এই জটিলতায় পড়ে একটা লাভ হয়েছে অনেক কিছু জানতে পেরেছি। নাহলে অভিজ্ঞতাটা অসম্পূর্ণ থেকে যেতো। সব বিপদের মাঝেও মনে হয় কিছু প্রাপ্তি থাকে!

সেই সাথে ট্রাভেল এজেন্টদের ধান্ধাবাজিটাও পরিস্কার হলো। মানুষের অসচেতনতার সুযোগ নিয়ে তারা প্রতারণাই করে বিভিন্ন সময়ে। এই শিক্ষাটাও কাজে লাগবে আমার।

তারপর ১৭ তারিখ সকালে খুব ভোরে এয়ারপোর্ট। এবার আত্মবিশ্বাস নিয়েই গেলাম। ভাইয়াকে নিষেধ করলাম এয়ারপোর্ট পৌছে দিতে। ড্রাইভার গাড়ী নিয়ে এয়ারপোর্টে পৌছে দিলো। ইমিগ্রেশনেও তেমন একটা ঝামেলা হলো না। নির্দিষ্ট সময়েই প্লেন ছাড়লো। প্লেনে পাশের সীটেই পরিচয় হলো এক নোয়াখালীরই লোকের সাথে। ভদ্রলোক রোমে থাকেন। কানেক্টিং ফ্লাইটে যাচ্ছেন। তার সাথে গল্প করতে করতে সময়টা ভালোই কাটলো। জানালার পাশে সীট পেলাম না বলে দূ:খ হলো। ঠিক করলাম ফেরার সময় অনুরোধ করবো জানালার পাশে সীট দিতে। প্রথমবার জড়তার কারণে অনুরোধটা করা হয়নি। বিমানবালা দেখতে সুন্দর হলেও তেমন সুবিধার মনে হলো না। খাবারের সাথে আমাকে পানি দিতেই খেয়াল করলো না। পরে চেয়ে নিতে হয়েছে।
অলৌকিক হাসান ভাই আগেই বলেছিলো, কাতার এয়ারওয়েজে সুরাপানেরও ব্যবস্থা আছে। কিন্তু প্রথমবার বলে কিছুটা জড়তার কারনে মুখ ফুটে চাওয়া হলোনা। তাছাড়া খাবারবহনকারী ট্রেতেও রঙীন পানীয়ের কোন বোতল দেখা গেলোনা। আমিও সংযমী হলাম। ;)

কাতার সময় ১১.৩০ এ প্লেন নামলো। ইমিগ্রেশনের বোরখা পরা নারীটা আমাদের দিকে একবার তাকালোনা পর্যন্ত। যান্ত্রিকভাবে পাসপোর্ট হাতে নিয়েই কম্পিউটারে চেকিং করে সীল মেরে দিলো। সামান্য বাক্য বিনিময়ও হলোনা। এমনকি আমার ভিসার কাগজও দেখলোনা। বুঝলাম যে আমার ভিসা নাম্বার তাদের ডাটাবেসে আছে। ১৫ তারিখে যদি যেতে পারতাম, তাহলে খুব স্বাভাবিকভাবেই ভিসা পেয়ে যেতাম মনে হয়!

Merweb Hotel হোটেল থেকে আমাকে রিসিভ করার জন্য গাড়ী থাকার কথা। বেরিয়ে দেখি আমার হোটেলের কেউ নাই। আমি বাইরে গিয়েও উঁকিঝুঁকি মেরে দেখলাম। কেউ নাই। কিছুটা নার্ভাস হয়ে আবার ভেতরে আসলাম। মিনিট পাঁচেক পর দেখলাম ড্রাইভার আমার নাম লেখা প্ল্যাকার্ড হাতে আসলো। আমিও হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম।

শুরুতেই দেখি ট্রাফিস জ্যাম। আমার ধারণা ছিলো শুধু ঢাকাতেই জ্যাম লাগে। এখন দেখি বিদেশেও এই বিরক্তিকর জিনিস আছে! রাস্তার পাশে পাশে খেজুর গাছ। ঢাকাতে রাস্তার পাশে খেজুর গাছ লাগানোর বুদ্ধি যার মাথা থেকে এসেছে, সে সম্ভবত বিদেশ বলতে মধ্যপ্রাচ্যেই গিয়েছিলো!

হোটেলে পৌছে রেজি: করে রুমে জিনিসপত্র রেখেই বেরিয়ে এলাম। এর আগে হোটেল থেকে ৫০ $ ভাঙিয়ে কাতারের রিয়াল করে নিলাম। রেট পেলাম প্রতি ডলার ৩.৪৫ করে। পরে জেনেছি, বাইরে থেকে আরো ভালো রেট পাওয়া যায়। মার্কেট থেকে পরে পেয়েছি ৩.৬০ করে।


বাইরে ট্যাক্সি খুঁজে পেতেই অনেক সময় লাগলো। কাতারে ট্যাক্সি খুবই কম। রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত ট্যাক্সি সার্ভিস চলে। ভাড়া বেশি। প্রাইভেট ট্যাক্সিও আ‌ছে, তবে সেগুলো দেখে চেনা কষ্টকর। কিছুক্ষণ পর একটা ট্যাক্সির দেখা মিললো। দেখি ড্রাইভার বাংলাদেশী, নাম শ্যামল; কুমিল্লায় বাড়ী। ভাবলাম, ভালৈ হলো। বিদেশ বিভূঁয়ে বাঙালী পাশে পেয়ে বুকে বল পেলাম। বাংলায় কথা বলতে বলতে দোহা এডুকেশন সিটি এলাকায় গেলাম। শহরের একটা প্রান্তে ১০-১২টা ভার্সিটি নিয়ে এডুকেশন সিটি তৈরি করা হয়েছে গত কয়েক বছরে। কাতারের আমীরের দ্বিতীয় স্ত্রী'র উদ্যোগে মূলত এই সিটি তৈরি হয়েছে। কোটি কোটি টাকা খরচ করে অবকাঠামো তৈরি করে সব আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজের ক্যাম্পাস বসিয়ে দেয়া হয়েছে। বুঝাই যায়, আমীরের লেবাননী স্ত্রীর আমেরিকা প্রীতি প্রবল!

ট্যাক্সি থেকে নেমে পুরা হতভম্ব হয়ে গেলাম। কোথাও কেউ নেই। ক্যাম্পাসে ২/৪ জন শ্রমিক ছাড়া কারো টিকিটির ও দেখা মিললো না। ভুল যায়গায় আসলাম কিনা ভাবতে ভাবতে প্রধান ভবনের দিকে এগুতে থাকলাম।

ফেইসবুকে যোগ করুন

বৃহস্পতিবার, ২৩ এপ্রিল, ২০০৯

কাতার ভ্রমণ (পর্ব-১)



হঠাৎ করেই সুযোগটা তৈরি হলো। মাসদুয়েক আগে ভাতিজা ইমেইলে একটা কনফারেন্সের লিঙ্ক পাঠালো (http://ictd2009.org)। তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি এবং উন্নয়ন বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলন হতে যাচ্ছে ১৭-১৯ এপ্রিল, কাতারের দোহায়। আয়োজক Carnegie Mellon বিশ্ববিদ্যালয়, কাতার। রেজি: ফি ২০০ $ । এছাড়া হোটেলের খরচ, বিমান টিকিটসহ সর্বমোট প্রায় ১৩৫০ $ লাগবে। স্বাভাবিক ভাবেই এই খরচ বহন করা সম্ভব নয়। সাইটে দেখলাম স্কলারশীপের আবেদন করার ব্যবস্থাও আছে। যেহেতু সম্মেলনে আমার কোন পেপার উপস্থাপন করা হবেনা, তাই স্কলারশীপ না পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকা সত্ত্বেও আবেদন করলাম। আমাকে অবাক করে সে আবেদন গৃহীতও হলো।


তবুও ভিসা নিয়ে অনিশ্চয়তা থেকেই গেলো। সম্মেলনের দিন ঘনিয়ে আসছে, কিন্তু আমার ভিসা আসার নাম নেই। এদিকে ই-টিকেটও করে ফেলেছি। মানসম্মান যায় যায় অবস্থা! জীবনের প্রথম অন্যদেশে যাওয়া হবে। অথচ অনিশ্চয়তার কারণে ব্লগে কারো সাথে শেয়ারও করতে পারছিনা। চরম আতঙ্ক জনক পরিস্থিতি!

ফ্লাইট ১৫ তারিখ সকালে। এদিকে ভাতিজা অনেক আগেই ভিসা পেয়ে গেছে। কিন্তু আমারটা কেন জানি আয়োজকরা পাঠাতে পারছেনা। ইমেইলে যোগাযোগ হচ্ছে। আমি আমারব্লগের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে যোগ দিবো। তাই ১৩ তারিখেই ঢাকায় চলে গেলাম। ইমেইলে জানানো হলো ১৩ তারিখের মধ্যে ভিসা পাঠাতে পারবে বলে তারা আশা করছে। কিন্তু ১৪ তারিখ দুপুরের মধ্যেও পাঠাতে পারলো না। অপেক্ষার প্রহর গুনছি। বিকাল ৩টা নাগাদ মেইল পেলাম যে ভিসা হয়ে গেছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই পেয়ে যাবো।

আমিও খুশি মনে আমারব্লগের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে চলে গেলাম। ভাবছিলাম অনুষ্ঠানের কোন এক ফাঁকে ব্লগারদের জানাবো পরেরদিন সকালে আমার কাতার যাওয়ার খবরটি। অভ্যাসবশত ফাঁকে ফাঁকে মোবাইলে মেইল চেক করছিলাম। ৬টার দিকে দেখি আরেকটা মেইল। আমাকে জানানো হলো, ভিসা তারা এইমুহুর্তে পাঠাতে পারছেনা। আশা করছে পরেরদিন পাঠাতে পারবে। আমি যেন ফ্লাইট পিছিয়ে দিই। মাথাটাই পুরা আউলা হয়ে গেলো। কারণ ফ্লাইট পিছিয়ে দেয়ার সময়টাও পেরিয়ে এসেছি। কী করবো বুঝতেছিলাম না। ব্লগের অনুষ্ঠান থেকে বিদায় নিয়ে আবার ভাইয়ের বাসায় ফেরত আসলাম। এদিকে যার মাধ্যমে ই-টিকেট করেছিলাম, সে জানালো পরের দিন যেতে না পারলে নাকি যাওয়ার টিকিটটা বাতিল হয়ে যাবে। নতুন টিকিট করতে আরো ২৫ হাজার টাকা লাগবে। আমারতো পুরা মাথায় হাত অবস্থা!

ই-মেইল করলাম আয়োজকদের। আমাকে একটি রিকোয়েস্ট লেটার যেন পাঠানো হয়, তাহলে অনএরাইভাল ভিসা নিতে পারি দোহা এয়ারপোর্ট থেকে। কিন্তু কোন উত্তর নাই।

মন খারাপ করে ঘুমাতে গেলাম। নিশ্চিত যে পরের দিন আমি যেতে পারছিনা। ভোররাতে ভাতিজাকে এয়ারপোর্টে দিয়ে আসার জন্য জেগে মেইল চেক করে দেখি, একটা রিকোয়েস্ট লেটার পাঠিয়েছে ওরা। তাড়াহুড়ো করে রেডি হয়ে আমিও গেলাম এয়ারপোর্ট। ইমিগ্রেশনে ঝামেলা করলো। ভিসা ছাড়া তারা মনে হয় কাউকে যেতে দেয় নাই কখনো! ইমিগ্রেশনের উর্ধ্বতন এক নারী অফিসারকে বুঝিয়ে বলার পর ইমিগ্রেশন ছাড়পত্র দিলো। কিন্তু কাতার এয়ার লাইনসের চেকিং এর সময় তারা বললো, দোহায় অনএরাইভাল ভিসা বাংলাদেশীদের জন্য প্রযোজ্য নয়। সুতরাং আমাকে ফিরে আসতে হবে। কী আর করা! ভাতিজা, সেই সাথে এয়ারপোর্টে পরিচিত হওয়া আরো দুই জন অংশগ্রহণকারী। তারা চলে গেলো। আমি ফিরে আসলাম বাসায়।

ফেইসবুকে যোগ করুন

শনিবার, ৪ এপ্রিল, ২০০৯

ওয়ারিদের ওয়েবসাইট থেকে যেকোন ওয়ারিদ নাম্বারে ফ্রি এসএমএস পাঠান… যত্তো খুশি…

ওয়ারিদের অনেক ব্যবহারকারীই জানে না যে ওয়ারিদের ওয়েবসাইট থেকে যে কোন ওয়ারিদ নাম্বারে ফ্রি এসএমএস পাঠানো যায়। যত্তো খুশি। আমি তো ধুমায়া এসএমএস পাঠাচ্ছি গত কয়েকদিন।

অন্য সবাইকেও সিস্টেমটা জানানো দরকার। কী কী করতে হবে বলছি।
প্রথম ওয়ারিদের সাইটে (http://www.waridtel.com.bd) গিয়ে সাইন আপ করতে হবে আপনার নাম্বার দিয়ে। সাথে সাথে আপনার নাম্বারে একটি একটিভেশন কোড আসবে। কোডটি সাইটে দিয়ে সাইনআপ সম্পূর্ণ করতে হবে। এরপর আপনার মোবাইল নাম্বার হবে লগইন নেম। ইচ্ছা করলে পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করে নেয়া যাবে।

ওয়ারিদের সাইটে লগইন করলে আপনি ইচ্ছেমত যেকোন ওয়ারিদ নাম্বারে যত খুশি এসএমএস পাঠানো পারেন। অ্যাড্রেসবুক তৈরি করতে পারেন। অল্প কয়েকটি ক্লিকে অ্যাড্রেসবুকে থাকা সব নাম্বারে একসাথে এসএমএস পাঠাতে পারেন।

এটা গেলো একটা সুবিধা। এছাড়াও রয়েছে অনেক সুবিধা।

এছাড়া লগইন করে জানতে পারবেন আপনার রেজি: সম্পর্কি তথ্যাবলী, কল ডিটেইলস, অ্যাকাউন্ড হিস্টোরী, রিচার্জ হিস্টোরী।
কোথায় কল করেছেন, প্রতি কলে কত খরচ হয়েছে -সব জানতে পারবেন। (আইটেমাইজ্ড বিল দিতে গ্রামীন ১০০ টাকা চার্জ নেয়। অথচ ওয়ারিদে সাইট থেকেই জানা যায়)

এফএনএফ নাম্বার সেটআপ করতে পারবেন। এবং সার্ভিসগুলো সম্পূর্ণ ফ্রি।

ওয়ারিদের বিভিন্ন সার্ভিসের স্ট্যাটাস জানতে ও সার্ভিস অ্যাকটিভও করতে পারবেন।

তাই ওয়ারিদ ব্যাবহারকারীদের মধ্যে যাদের ইন্টারনেট কানেকশন আছে, তারা দেরি না করে আজই লগইন করুণ ওয়ারিদের সাইট (http://www.waridtel.com.bd)।

উপভোগ করুণ যে কোন ওয়ারিদ নাম্বারে ফ্রি এসএমএস। :-P

ফেইসবুকে যোগ করুন