rss

মঙ্গলবার, ২৮ এপ্রিল, ২০০৯

কাতার ভ্রমণ (পর্ব-৪)

১৮ এপ্রিল ২০০৯, আন্তর্জাতিক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি এবং উন্নয়ন বিষয়ক সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন

সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন শুরু হলো ঢিলে ঢালা ভাবে। যথারীতি বাসে করে এডুকেশন সিটি, কার্নেগী মেলন ক্যাম্পাস। তারপর ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন পেপার দেখা, মতবিনিময়। ফাঁকে ফাঁকে খাওয়া দাওয়া।

এর মাঝে মনে হলো ক্যাম্পাসটা ঘুরে দেখা হলোনা। তাই ঘুরে ঘুরে ছবি তুলতে লাগলাম। প্রথম দিনই বলা হয়েছিলো দ্বিতীয় দিনে সিকিউরিটির কড়াকড়ি থাকবে। কারণ বিল গেটস কী-নোট উপস্থাপন করবে। গেটসের কী-নোট উপস্থাপনের সময় সন্ধ্যা ৬টা। কিন্তু সকাল বেলা থেকেই সিকিউরিটি সতর্ক। পরিচয় পত্র ছাড়া কাউকে কনফারেন্স হলে ঢুকতে দিচ্ছেনা।
দোহার দৈনিক পত্রিকাতেও বিলের আসার খবর প্রকাশিত হয়েছে। সেই পেপার কাটিং দেখলাম দেয়ালে সাঁটা হয়েছে।

আমি আর ভাতিজা ক্যাম্পাসে ঘুরে ঘুরে ছবি তুলছি। একটা জায়গায় ত্রিমাত্রিক দেয়াল চিত্র দেখলাম। দারুণ লাগলো দেয়ালচিত্রগুলো। ছবি তুলতে তুলতে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন রুমে ঢুকছি। প্রায় ফাঁকা বিভিন্ন রুম। কাউকে দেখা যাচ্ছিলোনা। সিকিউরিটির কাউকেও দেখছিলাম না। নিশ্চিন্ত মনে ছবি তুলছি। হঠাৎ ভোজবাজির মত এক সিকিউরিটি কর্মীকে দেখা গেলো। বললো এই জায়গায় ক্যামেরায় ছবি তোলার অনুমতি নেই। আমাকে বললো ছবি মুছে ফেলতে। কোনমতে সর্বশেষ ছবিটা মুছে তাকে বুঝ দিলাম। সে ভাবলো বুঝি একটা ছবিই তুলেছি! তাই ছেড়ে দিলো। ;)

হাঁটতে হাঁটতে ক্যাম্পাসের পাশে মেডিকেল কলেজ প্রাঙ্গণে আসলাম। বেলা তখন তিনটা। হঠাৎ দেখি দুটো গাড়ী আসলো। পেছনে পুলিশের একটা কার। গাড়ীর ভেতরে দেখেই চিনলাম, বিল গেটস চলে এসেছে। বিল নিজেই গাড়ী থেকে নেমে দরজা ধরে দাড়িয়ে থাকলো। আরো দুজন নামার পর বিল নিজেই দরজা বন্ধ করলো। তারপর ক্যাম্পাসে ঢুকে গেলো।

মনে হলো, কিছুদিন আগেও যে পৃথিবীর সেরা ধনী ছিলো, তার আচার আচরণ দেখলে মনে হয় না তেমন! অথচ আমরা কিছু কাঁচা টাকা পয়সা হলেই "মুই কি হনুরে" টাইপ ভাব ধরি!

আমাদের দেশে এরকম কল্পনাই করা যায় না। বিল যখন বাংলাদেশে আসলো, তখনকার কথা মনে হলো। সর্বক্ষণ তার চারপাশে মানুষজন গিজগিজ করছিলো। কাউকে অতিরিক্ত ভক্তি না করতে পারলে আমাদের মন তৃপ্ত হয়না মনে হয়!

বিল গেটস আইসিটি কাতারের কর্মকর্তাদের সাথে মিটিং সেরে সম্মেলন কক্ষে আসলো। প্রায় ঘন্টাখানেক তার বক্তৃতা দিলো। শিশুদের জন্য কাজ করার, দরিদ্রদের জন্য কাজ করার প্রতি গুরুত্বারোপ করলো। বক্তৃতা শেষে প্রশ্নোত্তর পর্বে সঞ্চালক মজা করে বললেন, বিলকে উইন্ডোজ নিয়ে প্রশ্ন করা যাবেনা। এই নিয়ে একচোট হাসি হয়ে গেলো।

বিলের বক্তৃতার সময় কাতারের আমীরের দ্বিতীয় স্ত্রী উপস্থিত ছিলো। বিলের বক্তৃতা এবং প্রশ্নোত্তর পর্ব শেষ হওয়ার পর সবাই দাড়িয়ে হাততালি দিলো। আমীরের স্ত্রীও বিলের সাথে হ্যান্ডশেক করে তারা সম্মেলন কক্ষ থেকে বেরিয়ে গেলেন।

এরপর যথারীতি ডিনারে সেরে আমরা হোটেলে ফিরলাম। হোটেল ফিরে বেরুলাম মার্কেটে যাবো বলে। কিন্তু রাত দশটার পর মার্কেটে লোকজন তেমন একটা থাকে না। তাছাড়া আল সাদ এলাকায় কোন সস্তা মার্কেট ও পেলাম না। সব দামী ব্রান্ডের দোকান। তাই কেনাকাটা স্থগিত রেখে হোটেলে ফিরে আসলাম।




ফেইসবুকে যোগ করুন