rss

সোমবার, ২ নভেম্বর, ২০০৯

থ্যালাসেমিয়া

জাতীয় স্বেচ্ছায় রক্তদান ও মরণোত্তর চক্ষুদান দিবস আজ। সকালেও এটা জানতাম না। ব্লগে চোখ বুলিয়ে এক পোস্ট থেকে জানলাম। কাকতাল হলো, আজ সকালেই এনসিটিএফ'র এক শিশু সদস্যের ভাইকে রক্ত দিলাম। ওর ভাইয়ের বয়স ৫ এর মতো। জন্ম সূত্রেই থ্যালাসেমিয়া। উইকিপিডিয়াতে থ্যালাসেমিয়া সম্পর্কে কিছু তথ্য পেলাম:


একটি বংশগত রক্তের রোগ। এই রোগে রক্তে অক্সিজেন পরিবহনকারী হিমোগ্লোবিন কণার উৎপাদনে ত্রুটি হয়। থ্যালাসেমিয়া ধারণকারী মানুষ সাধারণত রক্তে অক্সিজেনস্বল্পতা বা অ্যানিমিয়াতে ভুগে থাকেন। অ্যানিমিয়ার ফলে অবসাদগ্রস্ততা থেকে শুরু করে অঙ্গহানি ঘটতে পারে। থ্যালাসেমিয়া দুইটি প্রধান ধরনের হতে পারে: আলফা থ্যালাসেমিয়া ও বেটা থ্যালাসেমিয়া। সাধারণভাবে আলফা থ্যালাসেমিয়া বেটা থ্যালাসেমিয়া থেকে কম তীব্র। আলফা থ্যালাসেমিয়াবিশিষ্ট ব্যক্তির ক্ষেত্রে রোগের উপসর্গ মৃদু বা মাঝারি প্রকৃতির হয়। অন্যদিকে বেটা থ্যালাসেমিয়ার ক্ষেত্রে রোগের তীব্রতা বা প্রকোপ অনেক বেশি; এক-দুই বছরের শিশুর ক্ষেত্রে ঠিকমত চিকিৎসা না করলে এটি শিশুর মৃত্যুর কারণ হতে পারে।
বিশ্বে বেটা থ্যালাসেমিয়ার চেয়ে আলফা থ্যালাসেমিয়ার প্রাদুর্ভাব বেশি। আলফা থ্যালাসেমিয়া দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও চীনের সর্বত্র এবং কখনও কখনও ভূমধ্যসাগরীয় ও মধ্যপ্রাচ্যের লোকদের মধ্যে দেখতে পাওয়া যায়। প্রতিবছর বিশ্বে প্রায় ১ লক্ষ শিশু থ্যালাসেমিয়া নিয়ে জন্মগ্রহণ করে।
ওর আরেকটা বোনেরও থ্যালাসেমিয়া। ক্লাস ৫ এ পড়ে। প্রতি ১৫ দিন পর পর এক ব্যাগ করে দুই জনকেই রক্ত দিতে হয়। ১৫ দিন পর পর দুই ব্যাগ রক্ত জোগাড় করা যে একটা সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের কতটা বিড়ম্বনার এবং খরুচে, সেটা জেনে মনটা খারাপ হলো। স্বেচ্ছায় রক্তদাতা পাওয়া গেলেও রক্ত পরিসঞ্চালন করতে প্রায় হাজার খানেক খরচ হয়। সেই সাথে প্রতি মাসে হাজার হাজার টাকার ঔষধ তো আছেই। এভাবেই হয়তো বাকি জীবন দিয়ে যেতে হবে। গত বছরই ওর আরেকটা বোনকে একমাসের মধ্যে রক্ত না দেয়ায় মারা যায়।

ক্যান্সারের মত এই রোগেরও এখনো কার্যকর চিকিৎসা নেই বলতে গেলে। শুনলাম আমেরিকাতে নাকি চিকিৎসা সম্ভব। তবে প্রায় কোটি টাকা খরচ হয়। বাংলাদেশের একটি মধ্যবিত্ত পরিবারের পক্ষে এটা অসম্ভব। যেখানে ওইপরিবারের দুইজন থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত।

স্রেফ এক সপ্তাহ যুদ্ধ বন্ধ রাখলেই নাকি সেই খরচের টাকা দিয়ে পৃথিবীর সমস্ত শিশুকে এক বছর ফ্রি খাওয়ানো যায়। টাকাটা সমস্ত জটিল রোগের গবেষণা করে প্রতিকারও হয়তো আবিস্কার করা সম্ভব। হায়, সেই পৃথিবী কি কখনো তৈরি হবে? এত এত শিশু যে প্রতিদিন কোথাও না কোথাও মারা যাচ্ছে যুদ্ধে, তা নিয়ে পৃথিবীর কোন সেভ দ্য চিল্ড্রেন কখনো নূন্যতম বিবৃতিও দিয়েছে? অথচ আমাদের দেশের সেভ দ্য চিল্ড্রেন এর অভাব নেই। সেভ দ্য চিল্ড্রেন ইউকে, সেভ দ্য চিল্ড্রেন ইউএসএ, সেভ দ্য চিল্ড্রেন সুইডেন-ডেনমার্ক, সেভ দ্য চিল্ড্রেন অস্ট্রেলিয়া- সবারই অফিস এবং কার্যক্রম আছে বাংলাদেশে। অথচ যুদ্ধ বন্ধের দাবিতে, যুদ্ধে শিশু মৃত্যু নিয়ে কখনো তাদের কোন প্রতিবাদ অথবা অন্য কোন কার্যক্রম চোখে পড়েনি। না দেশে, না বিদেশে।

কথাটা এই জন্যেই বললাম, কয়েকদিন আগে সেভ দ্য চিল্ড্রেন সুইডেন-ডেনমার্কের এক বিভাগীয় কর্মশালায় চট্টগ্রাম গিয়েই শিশুটির মার সাথে কথা হয়। উনাকে অভিভাবক হিসেবে জেলার প্রতিনিধি ৪জন শিশুর সাথে নিয়ে গিয়েছিলাম। তখনই জানতে পারলাম উনার দুই সন্তানেরই থ্যালাসেমিয়া। যাই হোক, কর্মশালায় আন্তর্জাতিক নীতি নিয়ে কথা বলার কোন সুযোগ ছিলো না। নইলে হয়তো সেভ দ্য চিল্ড্রেন এর কর্মসূচী নিয়ে দু'-চার কথা বলতে পারতাম !

যে কথা বলছিলাম। জাতীয় স্বেচ্ছায় রক্তদান ও মরণোত্তর চক্ষুদান দিবস আজ। স্বেচ্ছায় রক্ত দানে আগ্রহী মানুষ এখনো আছে। যদিও সংখ্যায় তা কমই বলা যায়। রক্ত দিতে ভয় পায় অনেকে। তবে মরণোত্তর চক্ষুদানে আগ্রহী মানুষ একেবারেই নগন্য। আমি নিজেও দেবার মত সাহস অর্জন করতে পারবো কিনা, সন্দিহান! কেমন যেন একটা অস্বস্ত্বিবোধ কাজ করে। হয়তো গোপন কোন সংস্কার কাজ করে ভিতরে! মৃত্যুর পরই তা দেবার কথা কি না! মৃত্যু ব্যাপারটাই কেমন যেন!

তবে স্বেচ্ছায় রক্তদানের আগ্রহী মানুষের সংখ্যা বাড়ানো সম্ভব। সামান্য সচেতনতাই পারে তা। আমার নিজের কাছে রক্ত দিতে বেশ লাগে। এই নিয়ে এখন পর্যন্ত ৭ বার দিয়েছি। যেদিন রক্ত দিই, সেদিন ভালো ঘুম হয়। মনে হয় ঘুমের মধ্যে ডুবে যাচ্ছি.... ডুবে যাচ্ছি... বেশ অন্যরকম একটা অনুভূতি!

ফেইসবুকে যোগ করুন

7 টি মন্তব্য:

হাসিব on ২ নভেম্বর, ২০০৯ এ ৩:১৩ PM বলেছেন...

- আমি লাইফে ১৯বার রক্ত দিছি । জার্মানি আয়া ২০তম বার দিতে গিয়া শুনলাম আমি নট-এলিজিবল । কারন আম্গো দেশে নাকি ম্যালেরিয়া আছে । কৈত্থিকা এই তথ্য হেরা পাইছে আল্লাই জানে !

- যাউগ্গা, সেইভ দি চিলড্রেন নিয়া এইখানে ব্লগে লিখেন । ব্লগ তো আছেই এই জন্য ।

admin on ২ নভেম্বর, ২০০৯ এ ৩:২১ PM বলেছেন...

১৯ বার তো অনেক! স্যালুট হাসিব ভাই।

ম্যালেরিয়া হলে রক্ত দেয়া যাবে না, জানা ছিলো না !
এখন অবশ্য এখানে রক্ত পরিসঞ্চালনের আগে "হেপাটাইটিস বি" সহ বিভিন্ন রোগ আছে কিনা , নিশ্চিত হয়ে নেয়। টেস্টের পিছনে তাই অনেক টাকা যায়।

হাসিব on ২ নভেম্বর, ২০০৯ এ ৩:৩৮ PM বলেছেন...

আমার ম্যালেরিয়া হয় নাই কখনো । কান্ট্রি অফ অরিজিন ম্যালেরিয়া উপদ্রুত বলে আমার বা আমাগো দেশের কারো রক্ত এরা নেয় না ।

admin on ২ নভেম্বর, ২০০৯ এ ৩:৪৫ PM বলেছেন...

আমাদের দেশ ম্যালেরিয়া প্রবণ বলে একটা জাতিগোষ্ঠীর কারুরই রক্ত নেয়া যাবে না! ম্যালেরিয়া তো বংশগত রোগ না। তাছাড়া ম্যালেরিয়ার এখন ভালো ঔষধ আছে। এখন ঔষধ নিলে কেউ মরে না ম্যালেরিয়ায়।

জানিনা, চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা হয়তো ভালো বলতে পারবেন কেন এই সিদ্ধান্ত। আমিতো মেডিকেল স্টুডেন্ট না। এর মধ্যে কোন গোপন বর্ণবাদী চিন্তা আছে কিনা কে জানে ! এইডস প্রবণ বলে আফ্রিকাও বাদ নিশ্চয়ই! বাকি থাকলো কী? আজব !

Mahbub on ১৪ নভেম্বর, ২০০৯ এ ৬:১৬ PM বলেছেন...

অস্ট্রেলিয়া এসে মোট ১১ বার দেয়া হয়েছে, দেশে ২৫ বার। ম্যালেরিয়া প্রবন দেশ হতে আসা বলে রক্ত দেবার পর ব‌্যাগে লাল রঙের M স্টিকার লাগিয়ে দেয়, যদি ম্যালেরিয়ার কোনো আলামত পায় তবে সেটা দাতাকে জানায়। ভাগ‌্যিস এটা হয়নি আমার বেলায়। যদি কেউ গত ১ বছরের মাঝে ম্যালেরিয়া প্রবন দেশে বেড়াতে যায় তবে তার জন্য এটা করা হয়। আরো কিছু কারনে ১৯৮০ - ১৯৯৬ সালে যারা ব্রিটিশ আইলে যারা ৬ মাস বা তার বেশী ছিলো তাদের রক্ত নেয়া হয় না এবং মেল টু মেল সেক্স এর কোনো ব্যপার থাকলেও রক্ত নেয়া হয় না।

admin on ১৪ নভেম্বর, ২০০৯ এ ৬:৩৪ PM বলেছেন...

ধন্যবাদ সুমন ভাই। অনেক তথ্য পেলাম।
কিন্তু বুঝলাম না, রক্ত দেয়ার পর কেন ম্যালেরিয়া টেস্ট করে! আমাদের এখানে তো রক্ত দেয়ার আগেই সিরিঞ্জে করে রক্ত নিয়ে রক্ত ম্যাচিং থেকে শুরু করে যাবতীয় টেস্ট করে নেয়। সব টেস্টের পর ওকে হলেই রক্ত দেয়া হয়।

মাহবুব on ১৪ নভেম্বর, ২০০৯ এ ৭:০৬ PM বলেছেন...

এখানে প্রথমেই যেটা করে সেটা হলো ব্লাড গ্রুপ বের করা (যদি নতুন ডোনার হয় ও ব্লাড গ্রুপ না জানা থাকে)। এর পরের কাজগুলো ল্যাবে করা হয়।বাংলাদেশেও এটা দেখেছি, বিশেষ করে রেড ক্রিসেন্টের বেলায়। অন্য জায়গাগুলোতেও একই কাজ করা হয়। প্যাথলজিক্যাল টেস্টগুলোতো ল্যাব ছাড়া সম্ভব না। রক্তে কোনো রকম সমস্যা পাওয়া গেলে তবেও ডোনারের সাথে যোগাযোগ করে, এটা সব খানেই করা হয়।