rss

জালছেঁড়া নদী

জালছেঁড়া নদী
আমার প্রথম কাব্যগ্রন্থ। প্রকাশকাল: ফেব্রুয়ারি, ২০০৯। প্রকাশক: ভাষাচিত্র, ৩য় তলা, আজিজ সুপার মার্কেট, ঢাকা।

প্রান্তজন

প্রান্তজন
শহীদুল ইসলাম মুকুল

রবিবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০০৭

অভিমানী



তার মৃত্যুতে কোন রকম হুলস্থুল পড়ে যাবেনা
পাড়াময় শোকের মাতম উঠবেনা
কেউ গম্ভীর স্বরে ‘একটি শোক সংবাদ’ বলে মাইকিং করবেনা!

তার মৃত্যুতে ঘরময় প্রিয়জনদের ঢল নামবে না
লোবানের গন্ধে ভারি হবেনা বাতাস
কাফনের কাপড় কেনার জন্য ব্যস্ত হবেনা কেউ!

তার মৃত্যুতে পত্রিকার পাতায় ছাপানো হবেনা কোন শোকবার্তা
শেয়ার বাজারে নামবেনা ধ্বস
জাতীয় পতাকা হবেনা অর্ধনমিত
শহরের জীবনযাত্রা হবেনা অচল!

রোজ ভোরে বাবা তার আগের মতই সোফায় বসে খবরের কাগজ পড়বেন
মা আগের মতই ব্যস্ত থাকবেন রান্নাঘরে
ভাই-বোনদের কেউবা যাবে কলেজে কেউবা অফিসে!

মানসী তার, যাকে নিয়ে সবুজ দূর্বাঘাসের ’পরে বসে গল্প করার স্বপ্ন দেখতো
সে থাকবে প্রগলভ বন্ধুদের আড্ডায় আগের মতই!
খেলার মাঠে এত লোকের মাঝে তার অনুপস্থিতি বন্ধুদের চোখে পড়ার কথা নয়!

কোন এক পথহীন পথের ধারে পড়ে থাকবে
অভিমানী যুবকটির লাশ
কেউ জানবেনা
জানবেনা কেউ...

ফেইসবুকে যোগ করুন

বুধবার, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০০৭

নতুন ফোনসেট নিলাম।। টেলিটক ব্যবহার করবো।। দেশের টাকা দেশেই রাখবো



প্রথম থেকেই গ্রামীন ব্যবহার করছি। টেলিটক আসার পর ভাবলাম দেশিটাই ব্যবহার করবো। কিন্তু গ্রামীন নাম্বারটা সবার জানা বলে পরিবর্তন করতে পারছিলাম না। সমাধান হল দুইটা সেট ব্যবহার করা। তাই করলাম আজ। গ্রামীন সেন্টার থেকে নিয়ে আসলাম SAGEM 213x সেট। কালার মনিটর, জিপিআরএস এনাবলড। দাম গ্রামীনের আইএসডি সিমসহ মাত্র ২৩৯০ টাকা।

টেলিটকের সিম আগেই ছিলো। নতুন সেটে টেলিটকই ব্যবহার করবো। আগের সেটটাতে গ্রামীন সিম থাকলো। গ্রামীনকে তো অনেক দিলাম! এবার ভাবছি আউটগোয়িং কল সব করবো টেলিটক থেকে। দেশের টাকা দেশেই থাকুক।

ফেইসবুকে যোগ করুন

মঙ্গলবার, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০০৭

মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণাপত্র, ১৯৪৮


মুখবন্ধ

যেহেতু মানব পরিবারের সকল সদস্যের সহজাত মর্যাদা ও সম অবিচ্ছেদ্য অধিকার-সমূহের স্বীকৃতি বিশ্বে স্বাধীনতা, ন্যায়-বিচার ও শান্তির ভিত্তি;

যেহেতু মানবিক অধিকারসমূহের প্রতি অবজ্ঞা ও ঘৃণা মানবজাতির বিবেকের পক্ষে অপমানজনক বর্বরোচিত কাযর্কলাপে পরিণতি লাভ করেছে এবং সাধারণ মানুষের সর্বোচ্চ আশা-আকাঙ্খার প্রতীক হিসেবে এমন একটি পৃথিবীর সূচনা ঘোষিত হয়েছে যেখানে মানুষ বাক ও বিশ্বাসের স্বাধীনতা এবং ভয় ও অভাব থেকে নিষ্কৃতি ভোগ করবে;

যেহেতু চূড়ান্ত পদক্ষেপ হিসেবে মানুষকে অত্যাচার ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হতে বাধ্য করা না হলে মানবিক অধিকারসমূহ অবশ্যই আইনের শাসনের দ্বারা সংরক্ষিত করা উচিত;

যেহেতু জাতিসমূহের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের উন্নয়নে সহায়তা করা অবশ্যক; যেহেতু জাতিসংঘভুক্ত জনগণ সনদের মাধ্যমে মৌল মানবিক অধিকারসমূহ অধিকারসমূহ, মানুষের মর্যাদা ও মূল্য এবং নারী ও পুরুষের সম-অধিকারের প্রতি আস্থা পুনর্ব্যক্ত করেছে এবং সামাজিক অগ্রগতি ও ব্যাপকতর স্বাধীনতা উন্নততর জীবনমান প্রতিষ্ঠাকল্পে দৃঢপ্রতিজ্ঞ;

যেহেতু সদস্যরাষ্ট্রসমূহ জাতিসংঘের সহযোগিতায় মানবিক অধিকার ও মৌল স্বাধিকারসমূহের প্রতি সার্বজনীন শ্রদ্ধা ও মান্যতা বৃদ্ধি অর্জনে অঙ্গীকারবদ্ধ;

যেহেতু সকল অধিকার ও স্বাধিকারের ব্যাপারে একটি সাধারণ সমঝোতা উক্ত অঙ্গীকার সম্পূর্ণরূপে আদায় করার জন্য সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ;

তাই সাধারণ পরিষদ সকল জাতি ও জনগোষ্ঠীর অগ্রগতির একটি সাধারণ মানদন্ড হিসেবে জারি করছে এই মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্র

ঐ লক্ষ্যে প্রত্যেক ব্যক্তি ও সমাজের প্রত্যেক অঙ্গ মানবিক অধিকারসমূহের এই সর্বজনীন ঘোষণাপত্রটিকে সর্বদা স্মরণ রেখে শিক্ষাদান ও জ্ঞান প্রসারের মাধ্যমে এ সকল অধিকার ও স্বাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাবোধে জাগ্রত করতে এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রগতিশীল ব্যবস্থাদির দ্বারা সদস্য-রাষ্ট্রসমুহের জনগণ ও তাদের অধীনস্থ অঞ্চলসমূহের অধিবাসীবৃন্দ উভয়ের মধ্যে ঐগুলোর সর্বজনীন ও কার্যকর স্বীকৃতি ও মান্যতা অর্জনের জন্য জোর প্রচেষ্টা চালাবে৷

অনুচ্ছেদ-১
বন্ধনহীন অবস্থায় এবং সম-মর্যাদা ও অধিকারাদি নিয়ে সকল মানুষই জণ্মগ্রহণ করে৷ বুদ্ধি ও বিবেক তাদের অপর্ণ করা হয়েছে; অতএব ভ্রাতৃত্বসুলভ মনোভাব নিয়ে তাদের একে অন্যের প্রতি আচরণ করা উচিত৷

অনুচ্ছেদ- ২
* যে কোন প্রকার পার্থক্য যথা জাতি, গোত্র, বর্ণ, নারী-পুরুষ, ভাষা, ধর্ম, রাজনৈতিক বা অন্য মতবাদ, জাতীয় বা সামাজিক উত্পত্তি, সম্পক্তি, জণ্ম, বা অন্য মর্যাদা নির্বিশেষে প্রত্যেকেই ঘোষণাপত্রে উল্লিখিত সকল অধিকার ও স্বাধিকারে স্বত্ববান৷
* অধিকন্তু, কোন ব্যক্তি যে দেশ বা অঞ্চলের অধিবাসী, তা স্বাধীন, অছিভুক্ত এলাকা, অস্বায়ত্তশাসিত অথবা অন্য যে কোন প্রকার সীমিত সার্বভৌমত্বের মধ্যে থাকুক না কেন, তার রাজনৈতিক, সীমানাগত ও আন্তর্জাতিক মর্যাদার ভিত্তিতে কোন পার্থক্য করা চলবে না৷

অনুচ্ছেদ- ৩
প্রত্যেকেরই জীবন-ধারণ, স্বাধীনতা ও ব্যক্তি নিরাপত্তার অধিকার রয়েছে৷

অনুচ্ছেদ-৪
কাউকে দাস হিসেবে বা দাসত্বে রাখা চলবে না, সকল প্রকার দাস-প্রথা ও দাস-ব্যবসা নিষিদ্ধ থাকাবে৷

অনুচ্ছেদ-৫
কাউকে নির্যাতন অথবা নিষ্ঠুর, অমানুষিক অথবা অবমাননাকর আচরণ অথবা শাস্তি ভোগে বাধ্য করা চলবে না৷

অনুচ্ছেদ-৬
আইনের সমক্ষে প্রত্যেকেরই সর্বত্র ব্যক্তি হিসেবে স্বীকৃতিলাভের অধিকার রয়েছে৷

অনুচ্ছেদ-৭
আইনের কাছে সকলেরই সমান এবং কোনরূপ বৈষম্য ব্যতিরেকে সকলেরই আইনের দ্বারা সমভাবে রক্ষিত হওয়ার অধিকার রয়েছে৷ এই ঘোষণাপত্রের লঙ্ঘনজনিত বৈষম্য বা এরূপ বৈষম্যের উস্কানির বিরুদ্ধে সমভাবে রক্ষিত হওয়ার অধিকার সকলেরই আছে৷

অনুচ্ছেদ-৮
যে কার্যাদির ফলে শাসনতন্ত্র বা আইন কর্তৃক প্রদত্ত মৌল অধিকারসমূহ লঙ্ঘিত হয় সে সবের জন্য উপযুক্ত জাতীয় বিচার আদালতের মারফত কার্যকর প্রতিকার লাভের অধিকার প্রত্যেকেরই রয়েছে৷

অনুচ্ছেদ-৯
কাউকে খেয়ালখুশীমত গ্রেফতার, আটক অথবা নির্বাসন করা যাবে না৷

অনুচ্ছেদ-১০
প্রত্যেকেরই তার অধিকার ও দায়িত্বসমূহ এবং তার বিরুদ্ধে আনীত যে কোন ফৌজদারী অভিযোগ নিরূপণের জন্য পূর্ণ সমতার ভিত্তিতে একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ বিচার-আদালতে ন্যায্যভাবে ও প্রকাশ্যে শুনানী লাভের অধিকার রয়েছে৷

অনুচ্ছেদ-১১
* কোন দন্ডযোগ্য অপরাধে অভিযুক্ত হলে প্রত্যেকেরই আত্নপক্ষ সমর্থনের নিশ্চয়তা দেয় এমন গণ-আদালত কর্তৃক আইন অনুযায়ী দোষী সাব্যস্ত না হওয়া পর্যন্ত নির্দোষ বলে বিবেচিত হওয়ার অধিকার রয়েছে৷
* কাউকেই কোন কাজ বা ক্রটির জন্য দন্ডযোগ্য অপরাধে দোষী সাবাস্ত করা চলবে না, যদি সংঘটনকালে তা জাতীয় বা আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী দন্ডযোগ্য অপরাধ বলে গণ্য না হয়ে থাকে৷ আবার দন্ডযোগ্য অপরাধ সংঘটনকালে যতটুকু শাস্তি প্রযোজ্য ছিল তার চেয়ে শাস্তি প্রয়োগ চলবে না৷

অনুচ্ছেদ-১২
কাউকে তার ব্যক্তিগত গোপনীয়তা, পরিবার, বসতবাড়ি বা চিঠিপত্রের ব্যাপারে খেয়ালখুশীমত হস্তক্ষেপ অথবা সম্মান ও সুনামের ওপর আক্রমণ করা চলবে না৷

অনুচ্ছেদ-১৩
* নিজ রাষ্ট্রে সীমানার মধ্যে চলাচল ও বসতি স্থাপনের অধিকার প্রত্যেকেরই রয়েছে৷
* প্রত্যেকেরই নিজ দেশসহ যে কোন দেশ ছেড়ে যাওয়ার ও স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের অধিকার রয়েছে৷

অনুচ্ছেদ-১৪
* নির্যাতন এড়ানোর জন্য প্রত্যেকেরই অপর দেশসমূহে আশ্রয় প্রার্থনা ও আশ্রয় লাভ করার অধিকার রয়েছে৷
* অরাজনৈতিক অপরাধসমূহ অথবা জাতিসংঘের উদ্দেশ্যে ও মূলনীতি বিরোধী কার্যকলাপ থেকে সত্যিকারভাবে উদ্ভুত নির্যাতনের ক্ষেত্রে এই অধিকার নাও পাওয়া যেতে পারে৷

অনুচ্ছেদ-১৫
* প্রত্যেকেরই একটি জাতীয়তার অধিকার রয়েছে৷
* কাউকেই যথেচ্ছভাবে তার জাতীয়তা থেকে বঞ্চিত করা অথবা তাকে তার জাতীয়তা পরিবর্তনের অধিকার অস্বীকার করা চলবে না৷

অনুচ্ছেদ--১৬
* পূর্ণ-বয়স্ক পুরুষ ও নারীদের জাতিগত, জাতীয়তা অথবা ধর্মের কারণে কোন সীমাবব্ধতা ব্যতিরেকে বিবাহ করা ও পরিবার গঠনের অধিকার রয়েছে৷ বিবাহের ব্যাপারে, বিবাহিত অবস্থায় এবং বিবাহ বিচ্ছেদকালে তাদের সম-অধিকার রয়েছে৷
* কেবল বিবাহ -ইচ্ছুক পাত্র-পাত্রীর অবাধ ও পূর্ণ সম্মতির দ্বারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া যাবে৷
* পরিবার হচ্ছে সমাজের স্বাভাবিক ও মৌলিক একক গোষ্ঠী; সমাজ ও রাষ্ট্র কর্তৃক এর সংরক্ষিত হওয়ার অধিকার রয়েছে৷

অনুচ্ছেদ--১৭
* প্রত্যেকেরই একাকী এবং অপরের সহযোগিতায় সম্পক্তির মালিক হওয়ার অধিকার রয়েছে৷
* কাউকেই তার সম্পত্তি থেকে খেয়ালখুশীমত বঞ্চিত করা চলবে না৷

অনুচ্ছেদ--১৮
প্রত্যেকেরই চিন্তা, বিবেক ও ধর্মের স্বাধীনতার অধিকার রয়েছে৷ নিজ ধর্ম অথবা বিশ্বাস পরিবর্তনের স্বাধীনতা এবং একাই অথবা অপরের সহিত যোগসাজশে ও প্রকাশ্যে বা গোপনের নিজ ধর্ম বা বিশ্বাস শিক্ষাদান, প্রচার, উপাসনা ও পালনের মাধ্যমে প্রকাশ করার স্বাধীনতা এই অধিকারের অন্তর্ভুক্ত৷

অনুচ্ছেদ--১৯
প্রত্যেকেরই মতামতের ও মতামত প্রকাশের স্বাধিকার রয়েছে; বিনা হস্তক্ষেপে মতামত পোষণ এবং যে কোন উপায়ে ও রাষ্ট্রীয় সীমানা নির্বিশেষে তথ্য ও মতামত সন্ধান, গ্রহণ ও জ্ঞাত করার স্বাধীনতা এই অধিকারের অন্তর্ভুক্ত৷

অনুচ্ছেদ--২০
* প্রত্যেকেরই শান্তিপূর্ণভাবে সম্মিলিত হওয়ার অধিকার রয়েছে৷
* কাউকেই কোন সংঘভুক্ত হতে বাধ্য করা যাবে না৷

অনুচ্ছেদ-২১
* প্রত্যক্ষভাবে অথবা অবাধে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে নিজ দেশের সরকারে অংশগ্রহণের অধিকার প্রত্যেকেরই রয়েছে৷
* প্রত্যেকেরই নিজ দেশের সরকারী চাকুরীতে সমান সুযোগ লাভের অধিকার রয়েছে৷
* জনগণের ইচ্ছাই হবে সরকারের ক্ষমতার ভিত্তি; এই ইচ্ছা সর্বজনীন ও সমান ভোটাধিকারের ভিত্তিতে নৈমিত্তিকভাবে এবং প্রকৃত নির্বাচন দ্বারা ব্যক্ত হবে; গোপন ব্যালট অথবা অনুরূপ অবাধ ভোটদান পদ্ধতিতে এরূপ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে৷

অনুচ্ছেদ-২২
সমাজের সদস্য হিসেবে প্রত্যেকেরই সামাজিক নিরাপত্তার অধিকার রয়েছে; প্রত্যেকেই জাতীয় প্রচেষ্টা ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে এবং প্রতিটি রাষ্ট্রের সংগঠন ও সম্পদ অনুসারে তার মর্যাদা ও অবাধে ব্যক্তিত্ব বিকাশের জন্য অপরিহার্য অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকারসমূহ আদায় করতে পারবে৷

অনুচ্ছেদ-২৩
* প্রত্যেকেরই কাজ করার, অবাধে চাকুরী নির্বাচনের, কাজের জন্য ন্যায্য অনুকূল অবস্থা লাভের এবং বেকারত্ব থেকে রক্ষিত হওয়ার অধিকার রয়েছে৷
* প্রত্যেকেরই কোন বৈষম্য ব্যতিরেকে সমান কাজের জন্য সমান বেতন পাওয়ার অধিকার রয়েছে৷
* প্রত্যেক কর্মী তার নিজের ও পরিবারের মানবিক মর্যাদা রক্ষার নিশ্চয়তা দিতে সক্ষম এমন ন্যায্য ও অনুকূল পারিশ্রমিক এবং প্রয়োজনবোধে সেই সঙ্গে সামাজেক নিরাপত্তার জন্য অন্যান্য সুবিধা লাভের অধিকারী৷
* প্রত্যেকেরই নিজ স্বার্থ রক্ষার্থে শ্রমিক ইউনিয়ন গঠন ও এতে যোগদানের অধিকার রয়েছে৷

অনুচ্ছেদ-২৪
প্রত্যেকেরই বিশ্রাম ও অবসর বিনোদনের অধিকার রয়েছে৷ কাজের সময়ের যুক্তিসঙ্গত সীমা ও বেতনসহ নৈমিত্তিক ছুটি এ অধিকারের অন্তর্ভূক্ত৷

অনুচ্ছেদ-২৫

* নিজের ও নিজ পরিবারের স্বাস্থ্য ও কল্যাণের নিমিত্ত পর্যাপ্ত জীবনমানের অধিকার প্রত্যেকেরই রয়েছে৷ খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিত্সা ও প্রয়োজনীয় সামাজিক সেবামূলক কার্যাদির সুযোগ এবং বেকারত্ব , পীড়া, অক্ষমতা, বৈধব্য, বার্ধক্য অথবা অনিবার্য কারণে জীবন যাপনে অন্যান্য অপারগতার ক্ষেত্রে নিরাপত্তা এই অধিকারের অন্তর্ভুক্ত৷
* মাতৃত্ব কালে ও শৈশব অবস্থায় প্রত্যেকের বিশেষ যত্ন ও সহায়তা লাভের অধিকার রয়েছে৷ জণ্ম বৈবাহিক বন্ধনের ফলে বা বৈবাহিক বন্ধনের বাইরে হোক, সকল শিশুই অভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তা ভোগ করবে৷

অনুচ্ছেদ-২৬
* প্রত্যেকেরই শিক্ষালাভের অধিকার রয়েছে৷ অন্তত - পক্ষে প্রাথমিক ও মৌলিক পর্যায়ে শিক্ষা অবৈতনিক হবে৷ প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক হবে৷ কারিগরী ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা সাধারণভাবে লভ্য থাকবে এবং উচ্চতর শিক্ষা মেধার ভিত্তিতে সকলের জন্য উণ্মুক্ত থাকবে৷
* ব্যক্তিত্বের পূর্ণ বিকাশ ও মানবিক অধিকার ও মৌলিক স্বাধিকারসমূহের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ দৃঢ করার উদ্দেশ্যে শিক্ষা পরিচালিত হবে৷ সমঝোতা, সহিষ্ঞুতা ও সকল জাতি, বর্ণ ও ধর্মীয় গোষ্ঠীর মধ্যে বন্ধুত্ব উন্নয়ন এবং শান্তি রক্ষার্থে জাতিসংঘ কর্মতত্পরতা বৃদ্ধি করবে৷
* যে প্রকার শিক্ষা তাদের সন্তানদের দেওয়া হবে তা পূর্ব থেকে বেছে নেওয়ার অধিকার পিতামাতার রয়েছে৷

অনুচ্ছেদ-২৭
* প্রত্যেকেরই গোষ্ঠীমত সাংস্কৃতিক জীবনে অবাধে অংশগ্রহণ, শিল্পকলা চর্চা করা এবং বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি ও এর সুফলসমূহের অংশীদার হওয়ার অধিকার রয়েছে৷
* প্রত্যেকেরই বিজ্ঞান, সাহিত্য অথবা শিল্পকলা-ভিত্তিক সৃজনমীল কাজ থেকে উদ্ভুত নৈতিক ও বৈষয়িক স্বার্থসমূহ রক্ষনের অধিকার রয়েছে৷

অনুচ্ছেদ-২৮
প্রত্যেকেই এমন একটি সামাজিক ও আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার জন্য স্বত্ববান যেখানে এই ঘোষণাপত্রে উল্লিখিত অধিকার ও স্বাধীনতাসমূহ পূর্ণভাবে আদায় করা যেতে পারে৷

অনুচ্ছেদ-২৯
* প্রত্যেকেরই সমাজের প্রতি কর্তব্যাদি রয়েছে কেবল যার অন্তর্গত হয়েই তার ব্যক্তিত্বের অবাধ ও পূর্ণ বিকাশ সম্ভব৷
* স্বীয় অধিকার ও স্বাধীনতাসমূহ প্রয়োগকালে প্রত্যেকেরই শুধু ঐ ধরনের সীমাবদ্ধ থাকবে যা কেবল অপরের অধিকার ও স্বাধীনতাসমূহের যর্থাথ স্বীকৃতি ও শ্রদ্ধা নিশ্চিত করতে পারে৷ এরূপ সীমাবদ্ধ একটি গণতান্ত্রিক সমাজে নৈতিকতা, গণশৃঙ্খলা ও সাধারণ কল্যাণের ন্যায্য প্রয়োজনসমূহ মিটানোর উদ্দেশ্যে আইনের দ্বারা নিরূপিত হবে৷
* ই সকল অধিকার ও স্বাধীনতা ভোগকালে কোন ক্ষেত্রেই জাতিসংঘের উদ্দেশ্য ও মূলনীতি লঙ্ঘন করা চলবে না৷

অনুচ্ছেদ-৩০
এই ঘোষণার উল্লিখিত কোন বিষয়কে এরূপভাবে ব্যাখ্যা করা চলবে না যাতে মনে হয় যে এই ঘোষণার অন্তর্ভুক্ত কোন অধিকার বা স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন করার উদ্দেশ্যে কোন রাষ্ট্র, দল বা ব্যক্তি বিশেষের আত্ননিয়োগের অধিকার রয়েছে৷

ফেইসবুকে যোগ করুন

গোপালপুরে গণহত্যা

নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ থানা সদর থেকে আনুমানিক নয় কিলোমিটার পশ্চিম-উত্তর দিকে গোপালপুর বাজারের অবস্থান। এরই পশ্চিমপার্শ্বে কালের সাক্ষী হয়ে রয়েছে গোপালপুর মির্জানগর পরগণার এক সময়ের প্রভাবশালী জমিদার বাড়ী। এছাড়া বাজারের কোলঘেঁষে গোপালপুর আলী হায়দার উচ্চ বিদ্যালয়। পশ্চিম-উত্তর মাথায় ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র, ব্যাংক ও পোস্ট অফিস।

মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালে অসহযোগ আন্দোলনে ছাত্র ইউনিয়ন নেতা আবু কায়েস মাহমুদ, মোঃ মোহসীন দুলাল, জাকির হোসেন, মাহমুদুল হোসেন চৌধুরী প্রমুখের নেতৃত্বে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে এ এলাকার বিশিষ্ট চিকিৎসক ডাঃ আনিছুজ্জামান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতা নিম চন্দ্র ভৌমিক, সাহাবউদ্দিন মিন্টু ও স্থানীয় সংগ্রাম পরিষদ নেতৃবৃন্দের সমন্বয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের খসংগঠিত করার কাজ শুরু হয়।

এপ্রিলে পাকিস্তানি বাহিনী নোয়াখালীতে প্রবেশ করার কিছুকাল পরও গোপালপুর রয়ে যায় মুক্তিযোদ্ধাদের দূর্জয় ঘাঁটি হিসাবে; পরিণত হয় মুক্তিযোদ্ধাদের রিক্রুটিং সেন্টারে। চলতে থাকে যুদ্ধের প্রাথমিক কলাকৌশলের ট্রেনিং। সময়ের সাহসী সন্তানেরা দলে দলে প্রাথমিক ট্রেনিং সমাপ্ত করে চূড়ান্ত ট্রেনিং গ্রহণের জন্য গোপনে চলে যেতো বজরার বগাদিয়া আফানিয়া হয়ে ভারতের দিকে। গোপালপুর এভাবেই পালন করে মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে এক অগ্রণী ভূমিকা। এ খবর পৌঁছে যায় জামাত, মুসলীম লীগ ও শান্তি কমিটির মাধ্যমে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর কাছে। তারা কয়েক দফা চেষ্টা চালায় এ এলাকার মুক্তিযুদ্ধের সংগঠকদের খুঁজে বের করার জন্য। দেখতে দেখতে চলে আসে বর্ষা।

সময়টা ১৯৭১ সালের আগস্ট মাস। প্রচুর বৃষ্টি হয় সেবার ১৮ আগস্ট রাতে। ভোররাতে বেগমগঞ্জ লক্ষীপুর সড়কের কাছে বাংলাবাজার শামসুননাহার হাইস্কুলে এসে অবস্থান নেয় বেশ কিছু পাকিস্তানী মিলিশিয়া ও রাজাকার। ১৯ আগস্ট সকাল বেলা - সূর্য তখনো মেঘের আড়ালে ঢাকা। গুড়িগুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। সকাল আনুমানিক আটটা নাগাদ গোপালপুর বাজারে পৌঁছে যায় প্রায় কয়েকশ পাকিস্তানী আর্মি ও রাজাকার। তারা দুভাগে বিভক্ত হয়। রাজাকারদের কুড়ি/পঁচিশ জনের একটি দল বাজারের পশ্চিমদিক দিয়ে এবং বাকীরা মূল রাস্তা দিয়ে এসে চতুর্দিক থেকে ঘিরে ফেলে। সকাল থেকেই বাজারের প্রায় অর্ধশতাধিক দোকান অগণন মানুষের প্রাণচাঞ্চল্যে মুখরিত ছিলো। কেউ চা পানে রত। আবার কেউ গতরাতে আশেপাশের কোন কোন এলাকায় গোলাগুলি হয়েছে তার অবস্থান নির্ণয় নিয়ে বিতর্করত। এমন সময় অতর্কিত হানা দিলো পাকিস্তানী হায়েনার দল। যারা পালাতে পারলো তারা বাঁচলো। যারা পারেনি এরকম অর্ধশতাধিক দূর্ভাগা নিরীহ গ্রামবাসী ও দোকানী শিকার হল নির্মম হিংস্রতার। একে একে ওদের সবাইকে ধরে এনে এক লাইনে দাঁড় করানো হয় বাজারের পূর্বপাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ছোট্ট খালটির পাড়ে। এ দলে ছিলেন ঐ এলাকার শান্তি কমিটির নেতা। তার অপরাধ তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় দিতেন। তাঁর কাছে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর কমান্ডিং অফিসার জানতে চায়- আনিস ডাক্তার, সুবেদার মেজর জবেদ আলী কোথায়? কোনো দেশপ্রেমিক মুক্তিপাগল মানুষ তাদের এ প্রশ্নের উত্তর দিতে বাধ্য নয় এবং তারা এর কোন জবাব কোনদিনই পায়নি। বাজারের দোকানে দোকানে তল্লাশি করে খুঁজতে থাকে স্বাধীন বাংলার পতাকা। জনৈক ছিদ্দিকউল্যাহর দোকানে ওরা পেয়ে যায় স্বাধীন বাংলার একটি পতাকা।- ক্রোধে ফেটে পড়ে ওরা। লাইনে দাঁড়ানো কয়েকজন মুসল্লিকে ছেড়ে দেয়া হয়। বাকী প্রায় পঞ্চাশজন নিরপরাধ নিরস্ত্র মানুষকে ব্রাশফায়ার করে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়। ব্রাশফায়ারের পরও যারা বেঁচেছিলো তাদেরকে বেয়নেট চার্জ করে পৈশাচিক উ‍ল্লাস প্রকাশ করার পর পাকিস্তানী পশুরা হত্যা করে। মানুষের তাজা রক্তে সয়লাব হয়ে যায় খালের পানি। রক্ত আর পানিকে পার্থক্য করা যায়নি। এই হতভাগ্য মানুষদের অপরাধ ছিলো- তারা বলেনি কারা এ‍লাকার মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, কারা মুক্তিযোদ্ধা। তাদের অপরাধ, দোকানে পাওয়া যায় স্বাধীন বাংলার পতাকা।

এই হত্যাকান্ড জঘন্য বর্বরতা। মানবতাবিরোধী। নোয়াখালীর মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে গোপালপুরের এই গণহত্যা এক কালো অধ্যায়। এই ঘটনায় যারা শহীদ হন তাদের পঁচিশ জনের নাম পরিচয় উদ্ধার করা সম্ভব হয়:
১. মাহবুবুল হায়দার চৌধুরী [নশা মিয়া] (গোপালপুর)
২. দীন ইসলাম (তুলাচরা)
৩. হাবিব উল্যাহ (তুলাচরা)
৪. ইসমাঈল মিয়া (তুলাচরা)
৫. অহিদউল্যাহ (সাহাদাপুর)
৬. মোহাম্মদউল্যাহ (সাহাদাপুর)
৭. মোহাম্মদ উল্যাহ (সাহাদাপুর)
৮. দুলাল মিয়া (সাহাদাপুর)
৯. সামছুল হক মাস্টার (আটিয়াকান্দি)
১০. মজিবউল্যাহ (আটিয়াকান্দি)
১১. বশিরউল্যাহ (আটিয়াকান্দি)
১২. আবুল কাশেম (মির্জানগর)
১৩. আবুল বশর ছিদ্দিক (মির্জানগর)
১৪. হারিছ মিয়া (দেবকালা)
১৫. ছিদ্দিক উ‍ল্যাহ মিয়া (সিরাজউদ্দিনপুর)
১৬. মমিনউল্যাহ মিয়া (মুহুল্লাপুর)
১৭. মন্তাজ মিয়া (মহল্লাপুর)
১৮. নূর মোহাম্মদ (মহল্লাপুর)
১৯. আবদুল মন্নান (মহল্লাপুর)
২০. মোবারক উল্যাহ (পানুয়া পাড়া)
২১. মোহাম্মদ উল্যাহ দর্জি (চাঁদ কাশেমপুর)
২২. আবদুর রসিদ (আমিরাবাদ)
২৩. আবদুল সাত্তার (বারাহীনগর)
২৪. আবদুল করিম (হীরাপুর)
২৫. ডা: মোহাম্মদ সুজায়েত উল্যাহ (দশঘরিয়া, চাটখিল)

১৯৭১ সালের ১৯ আগস্টের এই নিষ্ঠুর গণহত্যার স্মরণে গোলাম ছাত্তার নোমান, তপন কুমার ভৌমিক প্রমুখের প্রচেষ্টায় ১৯৮০ সালে শহীদদের নাম খোদাই একটি স্মৃতিস্তম্ভ ও শহীদ স্মৃতি সংসদ গড়ে উ‌ঠে‍। প্রতি বছর এই দিনে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়।


[লেখক: গোলাম আকবর, সদস্য সচিব, নোয়াখালী মানবাধিকার জোট]

ফেইসবুকে যোগ করুন