rss

জালছেঁড়া নদী

জালছেঁড়া নদী
আমার প্রথম কাব্যগ্রন্থ। প্রকাশকাল: ফেব্রুয়ারি, ২০০৯। প্রকাশক: ভাষাচিত্র, ৩য় তলা, আজিজ সুপার মার্কেট, ঢাকা।

প্রান্তজন

প্রান্তজন
শহীদুল ইসলাম মুকুল

বৃহস্পতিবার, ২৮ আগস্ট, ২০০৮

কোন কিছুই ব্যক্তিগত নয় ( হোসেইনের কবিতাঞ্জাল )

আমার খুবই প্রিয় একজন কবি হোসেইন। আমার খুব সৌভাগ্য যে তিনি আমাকে তাঁর একটি কবিতা উৎসর্গ করেছিলেন। কবিতাটি "আমারব্লগে" প্রকাশিত হয়েছিলো। কিন্তু দূর্ভাগ্যবশত: ওয়েবমাস্টারের ভুলে পোস্টটি মুছে যায়। তাই আমার এই ব্লগে লেখাটির কপি তুলে রাখলাম।

কোন কিছুই ব্যক্তিগত নয় ( হোসেইনের কবিতাঞ্জাল )
শুক্র, অগা 8, 2008

( উৎসর্গ : মুকুল )
বাবার একটা কালো ইয়থ কলম ছিল ,
রোজ রবিবারের ছুটির দিনে সেই কলমটাকে
হালকা গরম পানিতে ধুয়া হতো আয়েশ করে ।
আমার চাচার একটা রেজর ছিল জার্মানি মেড ।
ব্রাশে সাবান ঘষে ঘষে গালভর্তি ফেনা করে ,
সেই জার্মান মেড রেজরে দাড়ি কামাতেন বারান্দার কোনায় বসে ,
প্রতিদিন অফিস যাওয়ার আগে ।
তাদের প্রত্যেকেরই ছিল নির্দিষ্ট গ্লাস , প্লেট ,
চশমার মোটা ফ্রেম , পুলওভার ,খড়ম ।
মারা যাওয়ার পরেও সেই জিনিষগুলো এখনও পরম যত্নে
দাদী আগলে রেখেছেন তার টিনের ট্রান্কে ,
ফুলের ছবি দেয়া সেই ট্রান্কটিও দাদীর ব্যক্তিগত
কলকাতা থেকে দাদা এনেছিলেন বিয়াল্লিশ বছর আগে ।
আজও সেই জিনিষগুলোর মাঝে আমি বাবাকে পাই , চাচাকে পাই।
চরম উৎকর্ষের যুগে , আমিই পরিবারের সর্বোচ্চ শিক্ষিত
কিন্তু আমার কোন নির্দিষ্ট কলম নেই সারাটা জীবন ধরেই ।
বলপয়েন্টগুলো ডজন হিসেবে কিনে আনি আর হারাই ,
জিলেটের ওয়ানটাইম রেজরগুলো সপ্তাহ শেষে ছুড়ে ফেলি ডাস্টবিনে ।
প্রতিবছর পাল্টাই মোবাইল সেট , সানগ্লাস , ডিনার সেটের নতুন ডিজাইনের প্লেট , আরো যতো টুকিটাকি ।
মৃত্যুর পর কোন দ্রব্যে আমাকে খুঁজে পাওয়া যাবে না ,
কারন ওসব আমার ব্যক্তিগত ছিল না ।
আমি যেমন বাবাকে খুঁজি , মৃত্যুর পরে আমাকে কেউ খুঁজবে না
কারন বাবার ব্যক্তিগত দ্রব্য ছিল , নিজের সন্তান ছিল ।
ভুল সময়ে জন্মানোর কারনে , আমার ব্যক্তিগত কিছুই ছিল না কোনকালে ।

ফেইসবুকে যোগ করুন

শুক্রবার, ১৫ আগস্ট, ২০০৮

একটি হারানো বিজ্ঞপ্তি

একটি হারানো বিজ্ঞপ্তি:
গতকল্য বিকাল‍ ছয় ঘটিকায়
ম্লান গোধূলীবেলায় একজন যুবক
মানুষের পৃথিবী থেকে হারাইয়া গিয়াছে।

যুবকটির গায়ের রঙ চরের মাটির মত শ্যামল
চোখের রঙ শতবর্ষী পুকুরের জলের মত কালচে তরল,
কুঞ্চিত কেশদল ঘোর কৃষ্ণকায়, ঘাড় ছেয়ে কাঁধের কাছে নিঃশ্বাস ফেলিতেছিলো।
যুবকটি উচ্চতায় ছোট টিলার সমান কিন্তু পাহাড়ের চেয়ে খাটো।

যুবকটির বুক পকেটে ছিলো তিনটি জ্বলজ্বলে নক্ষত্র
প্যান্টের বাম পকেটে ছিলো একটি আস্ত নীহারিকা
ডান পকেটে ছিলো সর্বগ্রাসী এক কৃষ্ণগহবর,
যুবকটির পরণে ছিলো মিহি কুয়াশার চাদর।

হারাইয়া যাইবার আগ মুহুর্তে যুবকটিকে
আষাঢ়ের ঘন কালো মেঘমালা আবৃত করিয়া রাখে
মিনিট খানেক, মেঘ সরিয়া যাইতেই যুবকটিকে
আর দৃষ্টির সীমানায় পাওয়া যায় নাই।

যুবকটির সন্ধান না পাইয়া তাহার মাতা গভীর শোকে শয্যাশায়ী
তাহার সহোদর এবং সহোদরাগণ চরম উৎকন্ঠায় দিন কাটাইতেছেন।
যদি কেহ যুবকটির সন্ধান পাইয়া থাকেন
তাহাকে নিম্নবর্ণিত ঠিকানায় যোগাযোগ করিবার জন্য অনুরোধ করা যাইতেছে-
ঠিকানা: মেঘনা পাড়ের ধবল জোৎস্নার ঘাট।


- - -
মাইজদী, নোয়াখালী
৫ জুলাই, ২০০৮

ফেইসবুকে যোগ করুন

ঘুম ভাঙানো ঘড়ি

চুড়ির রিনিঝিনি ধ্বনি
নয়তো আঁচলের মৃদু আঘাতে
রাত ভোর হতো সুনির্দিষ্ট সময়ে।

ভাবতাম, তুমি না থাকলে কি যে হতো!
সময় মতো ঘুম ভাঙতো না,
হতো না সঠিক সময়ে অফিস যাওয়া ।

কোন কিছুই আবশ্যিক নয়,
এ সত্যটি না জেনেই ভুগতাম
হারানোর অসম্ভব প্রায় উৎকন্ঠায়।

জেবিন, চুপিচুপি বলি শোন -
অ্যালার্ম দেয়া ঘড়িটা এখন
ঠিক সময় মতোই আমার ঘুম ভাঙায়।


৩ জুলাই, ২০০৮

ফেইসবুকে যোগ করুন

এমন বৃষ্টি ঝরা দিনে

বৃষ্টি না পেলে শস্যের প্রাণ জেগে ওঠে না সুপ্ত বীজ থেকে,
হবে না নতুন জলে পোনা মাছের ছোটাছুটি।
বৃষ্টি না পেলে ময়লা ধুয়ে যাবে না,
শহর দিনে দিনে চলে যাবে নোংরা আবর্জনার দখলে।
বৃষ্টি না ঝরলে জমিন ফেটে চৌচির হবে
শুকনো মাঠে শকুনও ঠাঁই পাবে না।

বৃষ্টি না হলে ধূলি কনায় ভরে যাবে আকাশের নীল
মিটি মিটি তারা দেখবো না আর।
বৃষ্টি না হলে পাখির লাশ পড়ে থাকবে মরা গাছের ডালে
লজ্জাবতী চিরস্থায়ীভাবে গুটিয়ে নেবে সকল পাতা।
বৃষ্টি না হলে কচু পাতায় জমে থাকা সুন্দর দেখা হবে না,
হবে না ভরা পুকুরে ডুবসাঁতার।

বৃষ্টি সবাইকেই কিছু না কিছু দেয়,
কখনো অকস্মাৎ মনে করিয়ে দেয় ভুলে থাকা স্মৃতি।
মনে করতে বাধ্য হই, এমনি এক দিনে শেষবার দ্যাখা হয়েছিলো;
এমন বৃষ্টি ঝরা দিনে অনেক অভিমান বুকে বাজে।


- - -
মাইজদী, নোয়াখালী

০২ রা জুলাই, ২০০৮ রাত ৮:০৪


ফেইসবুকে যোগ করুন