rss

জালছেঁড়া নদী

জালছেঁড়া নদী
আমার প্রথম কাব্যগ্রন্থ। প্রকাশকাল: ফেব্রুয়ারি, ২০০৯। প্রকাশক: ভাষাচিত্র, ৩য় তলা, আজিজ সুপার মার্কেট, ঢাকা।

প্রান্তজন

প্রান্তজন
শহীদুল ইসলাম মুকুল

বৃহস্পতিবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০০৯

লাল শাড়ী’র মালিকিনী

তুমি দোলাও
আমি দুলি
আমি আড় চোখে চাইতে চাইতে
কানাগলি দিয়া হাঁটি।

ওগো লাল শাড়ীর মালিকিনী
তুমি কোথা হইতে কোথা যাও
আমি বুঝিতে না পারি।

ফেইসবুকে যোগ করুন

বুধবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০০৯

একটি গান গাও আজ



প্রিয়, একটি গান গাও আজ -
শীত সকালের রোদ্দুরের মত নম্র উষ্ণ,
চড়ুইয়ের পালকের মত মোলায়েম, আদরমাখা।


ফেইসবুকে যোগ করুন

আজ কোন কাজ নয়

আজ কোন কাজ নয়
আজ আলসেমির গলা জড়াজড়ি করে শুয়ে থাকবো।

যে যাই বলুক,
আজ কোন কথা নয়
হাসি নয় ঠাট্টা নয়
রাগ নয় অভিমান নয়
আজ দুঃখগুলোকে হিমঘরে পাঠিয়ে
পর্দা টানবো কাঁথা মুড়ি দেবো।

আজ কোন ফোনকল নয় টিভি নয়
স্মৃতিকাতরতা নয় সংক্ষিপ্ত বার্তা নয়
চুলোয় দাউ দাউ আগুণ নয়
জলকেলি নয় প্রার্থনা নয়
বাইনারী আবেগ বিনিময় নয়
কামনা জর্জরিত কল্পনাবিলাস নয়।

আজ নিজস্ব কঠিন কঠোর সাব্বাথ;
আজ কোন কাজ নয়
আজ আলসেমির গলা জড়াজড়ি করে শুয়ে থাকবো।



১৪ নভেম্বর ২০০৮

ফেইসবুকে যোগ করুন

আকাশের গল্প

আমি আকাশ ছুঁইনি অনেক দিন,
দু'বছর আগেও নিয়ম করে প্রতি সন্ধ্যায়
অন্তত: একবার আকাশ ছুঁতাম।
আমাদের সম্পর্ক ছিলো বন্ধুত্বপূর্ণ,
সূর্যাস্তের পর আকাশ ছাদের খুব কাছাকাছি চলে আসতো
হাঁটতে হাঁটতে পাশাপাশি দুই বন্ধুর মত আমি
আকাশের হাত ধরে মৃদু ঝাঁকুনি দিতাম।

দু'বছর আগেও দুপুরবেলা রোদ গাঢ় হলে পর
ঘর্মাক্ত গায়ে আকাশকে ডেকে নরম বকুনি দিতাম।
নরম ধমকেই কাজ হতো, আকাশ আমার কথা শুনতো,
কখনো পাঠিয়ে দিতো ছায়ার মত যাযাবর মেঘদল,
কখনো বঙ্গোপসাগর থেকে উপকূলে হামলে পড়তো ঠান্ডা হাওয়া।
উদাসী হাওয়ায় স্বস্তি পেয়ে ফুরফুরে মেজাজে মোল্লার চা দোকানে বসে
এককাপ গরম চা, সাথে সদ্য প্যাকেট ভাঙা তাজা তামাক...

সন্ধ্যায়, বিদ্যুৎ বিভ্রাটের সময়টাতে আড়াইতলার খোলা বারান্দায়
আকাশের সাথে জমজমাট আড্ডা হতো,
আকাশের বন্ধুরা-- মিল্কিওয়ে, অ্যান্ড্রোমিডা নক্ষত্রপুঞ্জ, আরো যতো খটোমটো
নামের অজানা অচেনা মহাজাগতিক বন্ধুরাও সাথী হতো।

আড্ডার অন্তরঙ্গতায় তোমার কথাও হতো;
আকাশ সবই জানতো--
প্রথম দেখাদেখির সলাজ দৌড়, ফোনে খুনসুটির নানান সূত্র
ধরে হাসি ঠাট্টাও চলতো।
এমনকি কখনো কখনো আকাশ আমাদের সম্মানে উপহার দিতো
তারা খসার দৃশ্য- ভবিষ্যত সুখ কল্পনায় সংস্কারাচ্ছ্‌ন আমরা
মোনাজাতের ভঙ্গিতে মুখে হাত বুলিয়ে নিতাম।
শত মাইল দূর থেকেও মহাজাগতিক ঘটনাগুলো
দু'জনে মিলে উপভোগ করা যেতো--
যেমন পূর্ণিমা দেখতাম দু'জনে একই সাথে - যদিও মধ্যিখানে একবেলার পথ!
আমি আকাশকে নিয়ে সদ্য লিখিত কোন কবিতা উৎসর্গ
করবো বলে মনে মনে ঠিক করেছিলাম, একদিন তুমুল
আড্ডার ফাঁকে তাকে সে কথা জানিয়েও দিয়েছিলাম।

আমি কথা রাখতে পারিনি, যেমন তুমি রাখোনি;
আকাশকে নিয়ে কোন কবিতা লেখা হয়নি আর।
তুমি চলে যাওয়ার পর গত দু'বছর ধরে
আমি তাই একটিবারও আকাশের মুখোমুখি হইনি।



২ নভেম্বর, ২০০৮

ফেইসবুকে যোগ করুন

একজীবনে (কুট্টিকালের একখান কোবতে)

একজীবনে তোমায় চেয়ে
নিঃস্ব হলাম বিশ্বলয়ে
সকল স্বপন হারিয়ে গেলো
অন্ধকারের অচিন গাঁয়ে।

সকল স্মৃতি সকল প্রীতি
শূন্য হল এক নিমেষে
স্থবির হলাম বধির হলাম
হৃদয় জ্বলে বিষে।


২৯.৩.১৯৯৭

ফেইসবুকে যোগ করুন

কন্যা সিনান করিতে যায়

কন্যা সিনান করিতে যায়
হিয়া দোলে তাহার টানে
ঢেউ খেলে পুকুরের পাড়ে
আমার মনটা আনচান করে।

কন্যা সিনান করিতে যায়
আঁচল লুটিয়া পড়ে ঘাটে
গলার ভাঁজে শ্যামল ত্বকে
রুপার চমক ঝিলিক মারে।

জলেশ্বরী জলেতে নামে
ডুব ডুব ডুব খেলে নরম স্রোতে
ভরা গতরের মায়া মিশে যায়
নিস্তরঙ্গ দেশে প্লাবন উঠায়।

তাহার দীঘল ঘন কেশে
আষাঢ়ের কালো মেঘেরা লুকায়
ভেজা ভেজা কেশে
যেন জলপ্রপাত ঝরে।

দূরে বসে দে‍খি সঙ্গোপনে
আর কেউ না দেখুক
আর কেউ না জানুক
শুধু আমি দেখিবো রুপের ঝলক।


- - -
মাইজদী, নোয়াখালী
২৪ অক্টোবর ২০০৮

ফেইসবুকে যোগ করুন

শততম দুঃখ গাঁথা

আমার মৃত্যুর পর সবকিছুই স্বাভাবিক থাকবে।
কলেজ পড়ুয়া তরুণীরা বরাবরের মতই মুখরিত
আনন্দে প্রধান সড়ক দিয়ে হেঁটে যাবে,
বাতাসে তাদের বেণী দুলবে নিয়মিত ছন্দে।
মুঠোফোনে, এসএমএসে, ইমেইলে বিনিময় হবে হৃদয়ের মৌলিক ভাষা।
আমার মৃত্যুর পর শহরের প্রতিটি রাস্তায়
ট্রাফিক সিগনালগুলো নিয়মিত বিরতিতে জ্বলবে নিভবে
যান্ত্রিক সময় নির্ধারক একমুহুর্তও এদিক ওদিক করবে না।
আমার মৃত্যুর পর সিনেমাহলগুলোতে উপচে পড়া ভীড়ের কমতি হবে না
বক্স অফিসে নতুন নতুন হিট ছবি নতুন আয়োজনে আসতেই থাকবে;
সন্ধ্যার পর জেগে উঠবে মার্কেট, পার্ক, নিষিদ্ধ আনন্দের ঘর।
আমার মৃত্যুর পর শহরের প্রতিটি অলিগলিতে হবে স্বাভাবিক কলরব,
লেকের পাড়ের ঝুলন্ত রেস্তোরায় হাসবে সদ্য প্রেমে পড়া তরুণ তরুণীরা,
কোথাও সুনসান নিরবতা নামবে না, যেমন নেমেছিলো এক কারফিউর রাত্রিতে।
আমার মৃত্যুর পর আন্তর্জালের জগতে আলোড়ন উঠবে না,
সার্চের ঘরে কৌতুহলী কেউ লিখবে না নাম, জানতে চাইবে না
ঐ মায়ার জগতে আমার কোন অনুভূতি ছড়ানো আছে কি না।

আমার মৃত্যুর পর স্বজনরা কাঁদবে, ওদের কান্নাটাই স্বাভাবিক
— ওটা অস্বাভাবিক নয়, ভীষণ রকম প্রত্যাশিত।
আমার মৃত্যুর পর সবকিছুই স্বাভাবিক থাকবে
কেবল অস্বাভাবিক হবে এক জোড়া জীবিত চোখ
একদিন যে চোখে উপেক্ষার বাণী ছিলো, ছেড়ে যাবার
তাড়না ছিলো, সেই জোড়া চোখ ম্লান হবে মুহুর্তের অপরাধবোধে…



মাইজদী, নোয়াখালী
২৬ সেপ্টেম্বর, ২০০৮

ফেইসবুকে যোগ করুন

শরৎ বিকেলে

জানালা গলে বখাটে রৌদ্র
আঘাত হানে বিকেলের ঘুমে।
কাশরঙা মেঘ চঞ্চলতা দেখায়
এই আসে এই যায়।

চপলা তরুণীরা হেঁটে যায়
তাদের ই‍ষৎ সলজ্জ গালে চুমু
খেয়ে যায় কনে দেখা আলো;
কি নির্মম সুন্দর হেঁটে যায়!

শরৎ মেঘ কোথায় যায়?
কোথায় হারায়?
তরুণীরা হেঁটে যায়,
তরুণীরা কোথায় যায়?


মাইজদী, নোয়াখালী
১৮ সেপ্টেম্বর, ২০০৮

ফেইসবুকে যোগ করুন

তুই

তুই খুব খিটখিটে হয়ে যাচ্ছিস
সারাক্ষণ ভ্রু কুঁচকে রাখছিস আজকাল।
তুই এখন শরীরের যত্ন নিচ্ছিস না, ঘামে ভেজা কাপড়
দলা করে রাখছিস আলনায়, খেয়াল আছে?
লোডশেডিং এর অবসরে চাঁদ দেখিস না বারান্দায় বসে,
পূর্ণিমা তোর কাছে অসহ্য লাগে?
তুই দুর্ব্যবহার করছিস ঘরের মানুষের সাথে,
বন্ধুদের কথার পিঠে ঠেস মারছিস বেশি বেশি।
তুই সিগারেট বেশি টানছিস এখন,
ছাই ফেলে নোংরা করছিস মেঝে।
তুই অসামাজিক হয়ে যাচ্ছিস,
কাউকে ফোন করিস না, একসাথে বসে
সিনেমা দেখিস না, গুণগুণ করে গান গাইতে গাইতে
পাড়ার রাস্তা দিয়ে হাঁটিস না।
কথার ফাঁকে তোর মুখে এখন খিস্তি আসে
তোর কপালে গোপন রাগের ভাঁজ ফুটে ওঠে আনমনে;
কিসের অভিমানে?
তু্ই আগের মত নেই; তোর কী হয়েছে?


১৩ সেপ্টেম্বর, ২০০৮

ফেইসবুকে যোগ করুন

যখন তোমার শহরে যাই

যে শহরে জন্মেছি- প্রিয় মাইজদীতে, সে শহর ছাড়া
আর কোন শহর আপন মনে হয় না; আপন হয়ে ওঠে না।
তুমি যে শহরে আছো, সে আমার জন্ম শহর নয়।
স্বভাবতই আমার আপন শহর নয়,
প্রিয় নয়, নয় পুরোনো ভৃত্যের মত বিশ্বস্ত।
তোমার সুবাদে ওই শহরের প্রতিটি রাস্তা আমার হয়ে ওঠার প্রবল
সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও, আমার হয়ে ওঠে না।
তোমার শহর তার সমস্ত ঐশ্বর্যের ডালি মেলে ধরেও
আমাকে সুখী করতে পারে না,
অসুস্থ্য বোধ করি কৃত্রিম চাকচিক্যের শহরে।

তোমার শহর আমার শহর নয়,
তবু তা আমার হয়ে উঠেছিলো কয়েকটি মাস।
যেমন হাসপাতালের নার্সগুলো আপন হয়ে ওঠে কিছুকাল।
তারপর রোগ সারলে পরে ভুলে যাওয়া হয় ক'দিন পরেই।

তোমার শহরের প্রতিটি ধূলিকনা আমাকে উত্তপ্ত লেজারবীমের মত আঘাত করে,
আমাকে অসুস্থ্য করে। তারপরও আমি যাই, কখনো যেতে হয় দায়িত্বের টানে।
তখন ওই শহরের প্রতিটি রিক্সা খেয়াল করি,
প্রতিটি সিএনজি, প্রতিটি বাসের জানালার পাশের সীট।
প্রতিটি রাস্তার পাশের আকাশ ছোঁয়া অ্যাপার্টমেন্টের জানালার পর্দা গলে উঁকি দেয় তোমার মুখ-
তোমার মুখের আদলের মত ছায়া ক্রমাগত বিভ্রমে নিমজ্জিত করে আমায় ।

তোমার শহরের সকল তরুণী সেকেন্ডের ভগ্নাংশ সময়
আমার হৃদস্পন্দন বন্ধ করে দেয়,
সবার মাঝে যেন তোমার ছায়া দেখে চমকে উঠি;
পরক্ষণেই ভুল বুঝতে পেরে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিই।

তোমার শহরে গেলে আকাশছোঁয়া দালানের শোভা দেখি না,
শপিং মল খুঁজি না, লোভনীয় অ্যাপার্টমেন্টের বিজ্ঞাপন সন্ধান করি না।
তোমার শহরে আমি শেয়ার কেনাবেচা করতে যাই না,
উচ্চ বেতনের চাকরির ইন্টারভ্যু ও দিতে যাই না।

বিশ্বাস করো, জাগতিক কাজের ছুতোয়
ওই নির্মম শহরে কেবল তোমাকেই খুঁজতে যাই
আর কিছু নয়...


১৬ সেপ্টেম্বর, ২০০৮

ফেইসবুকে যোগ করুন

বহুগামী

এক পোশাক পরি সর্বোচ্চ ত্রিশ দিন,
জুতো পাল্টাই ছ’মাসে একবার,
মুঠোফোনের মডেল পাল্টে একবার বছরে,
খাদ্যাভ্যাস তিনবেলায় তিনরকম!

সিগারেট শুরু গোল্ডলীফে, তারপর
ট্রিপল ফাইভ হয়ে বেনসন।
প্রতিদিনকার আড্ডায় নবাগত মুখ
নিত্য নতুন বৈচিত্র্যে ভরপুর।

ভালো লাগে নতুন ফিল্ম, নতুন সুগন্ধী,
নতুন অর্কিড, নতুন প্রযুক্তি।

স্বভাবে বহুগামী, চিন্তায় বহুগামী,
সচেতনে বহুগামী, অবচেতনেও বহুগামী।
কেবল তোমার বেলায় বিপরীত-
সেই যে প্রেমে পড়লাম, নতুন করে আর
কাউকে পাওয়ার ইচ্ছে জাগলো না!


মাইজদী, নোয়াখালী
৬ সেপ্টেম্বর ২০০৮

ফেইসবুকে যোগ করুন