rss

জালছেঁড়া নদী

জালছেঁড়া নদী
আমার প্রথম কাব্যগ্রন্থ। প্রকাশকাল: ফেব্রুয়ারি, ২০০৯। প্রকাশক: ভাষাচিত্র, ৩য় তলা, আজিজ সুপার মার্কেট, ঢাকা।

প্রান্তজন

প্রান্তজন
শহীদুল ইসলাম মুকুল

মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর, ২০০৮

অতিথি

আবার বিষণ্ণ বিকেল নামে
অতিথিরা যায় দক্ষিণের পথে
হিম নামলে সুদুরের পরিব্রাজক
কি এক টানে পেরোয় মহাদেশ।

পুরোনো পথের নতুন উত্তরাধিকার
মুছে ফ্যালে পারাবারের ক্লান্তি
ক্ষণিক জলকেলি শেষে অন্তরঙ্গ দল
নদীর কাছে খোঁজে তৃষ্ণার জল।

হিম ফুরোলে পর অতিথিরা
চলে যায় ফিরতি পথে
আসা যাওয়ার চক্রের মাঝে
রেখে যায় কিছু পালক।

আর কিছু নয়…

- - -
১৮ নভেম্বর ২০০৮

ফেইসবুকে যোগ করুন

মঙ্গলবার, ৪ নভেম্বর, ২০০৮

ইভ


প্রথাগত এক প্রেমিকের কাছে একাকী
সারাদিন এবং সারারাত্রি
তপ্ত মরুময়-
প্রেমাস্পদের বিহনে
কাটে অথবা কাটেনা
পাথর সময়;
সুরভী মাখে গায়ে বুঝিবা ব্যর্থতার,
উর্ণনাভ জাল বুনে কষ্টের স্বরলিপি তার।

প্রেয়সীর আঙুল যেন এক একটি
প্রবাহিত ঝর্ণাধারার স্পর্শ,
স্বর্গীয় নহর, কুসুম গরম।
আহ! স্পর্শে স্পর্শে আনন্দ বারেবার!
এক সুতীব্র আবেগ গ্রাস করে যখন
নিজস্বতা হারিয়ে বিলীন আলিঙ্গনাবদ্ধ আমিত্ব!
এক একটি চুম্বন, এক একটি সম্মতির সিঁড়ি
অতিক্রম করে যখন আহবান করে--
তীব্র আনন্দ খুবলে খায় হৃদয়ের লাল,
প্রবাহিত উষ্ণ রক্তস্রোত, জ্বলন্ত লাভা।

প্রেয়সীর আঁখি পল্লব যখন পিটপিট করে
হাসে আনন্দে এবং পরিতৃপ্তিতে,
প্রেমিক মনের আনন্দ অপ্রকাশিতই থেকে যায়
সমস্ত অনুভূতি প্রকাশের পরেও একান্ত ভাষায়।
কানে ভেসে আসে স্বর্গীয় ঐকতান... চাই আনন্দ চিরকাল...

হায়! নিষ্ঠুরতা আমাদের প্রেমের সঙ্গে কখন কিভাবে যেন
অঙ্গাঅঙ্গি জড়িয়ে যায়, যেমন জলে মিশে লবণ--স্বচ্ছ দ্রবণ;
নেমে আসে শাস্তি -- বিচ্ছেদের, হতাশায় নিমজ্জিত প্রাণ।

জানা হলো না,
আদিম সর্প দিয়েছিলো
কী কুটিল প্ররোচনা!

- - -
মাইজদী, নোয়াখালী
৪ নভেম্বর, ২০০৮


* ছবিসূত্র

ফেইসবুকে যোগ করুন

সোমবার, ২০ অক্টোবর, ২০০৮

তুই আঁর বুকের লগে মিশি থাক

ম্যালা দিন আঁর বালা ঘুম অয় না,
আঁই খালি বালিশ লই ইমুই উমুই গড়াগড়ি করি।
তোর কি ঠিকমত ঘুম অয়নি বউ?
হেই যে বাফের বাড়ী গেলি
একবারও কি আঁর কতা মনে হড়ে ন তোর?
বউ তুই হিরি আয়
আঁরে আর কষ্ট দিছনা
কসম, আঁই ও তোরে আর কষ্ট দিতাম ন।
তুই আঁর বুকের লগে মিশি থাক,
আঁই হারা রাইত শান্তির ঘুম যামু।


- - -
মাইজদী, নোয়াখালী
১৪ জুলাই, ২০০৮

ফেইসবুকে যোগ করুন

কবিতার জন্য ঋণস্বীকার

নদীর কাছে ফুলের কাছে
সবুজ বৃক্ষরাজির কাছে
আমার অনেক ঋণ আছে।

জোনাক জ্বলা খুব নিশুতি
জ্বলজ্বলে এক রাতের কাছে
আমার অনেক ঋণ আছে।

অবহেলায় উড়ে যাওয়া
ছোট্ট প্রজাপতির কাছে
আমার অনেক ঋণ আছে।

খুব গোপনে ছুঁয়ে যাওয়া
ছোট্ট একটি ব্যথার কাছে
আমার অনেক ঋণ আছে।

ছয়টি দিনের স্মৃতির কাছে
চলে যাওয়া তোমার কাছে
আমার অনেক ঋণ আছে।


১১ জুলাই, ২০০৮

ফেইসবুকে যোগ করুন

বৃহস্পতিবার, ২৮ আগস্ট, ২০০৮

কোন কিছুই ব্যক্তিগত নয় ( হোসেইনের কবিতাঞ্জাল )

আমার খুবই প্রিয় একজন কবি হোসেইন। আমার খুব সৌভাগ্য যে তিনি আমাকে তাঁর একটি কবিতা উৎসর্গ করেছিলেন। কবিতাটি "আমারব্লগে" প্রকাশিত হয়েছিলো। কিন্তু দূর্ভাগ্যবশত: ওয়েবমাস্টারের ভুলে পোস্টটি মুছে যায়। তাই আমার এই ব্লগে লেখাটির কপি তুলে রাখলাম।

কোন কিছুই ব্যক্তিগত নয় ( হোসেইনের কবিতাঞ্জাল )
শুক্র, অগা 8, 2008

( উৎসর্গ : মুকুল )
বাবার একটা কালো ইয়থ কলম ছিল ,
রোজ রবিবারের ছুটির দিনে সেই কলমটাকে
হালকা গরম পানিতে ধুয়া হতো আয়েশ করে ।
আমার চাচার একটা রেজর ছিল জার্মানি মেড ।
ব্রাশে সাবান ঘষে ঘষে গালভর্তি ফেনা করে ,
সেই জার্মান মেড রেজরে দাড়ি কামাতেন বারান্দার কোনায় বসে ,
প্রতিদিন অফিস যাওয়ার আগে ।
তাদের প্রত্যেকেরই ছিল নির্দিষ্ট গ্লাস , প্লেট ,
চশমার মোটা ফ্রেম , পুলওভার ,খড়ম ।
মারা যাওয়ার পরেও সেই জিনিষগুলো এখনও পরম যত্নে
দাদী আগলে রেখেছেন তার টিনের ট্রান্কে ,
ফুলের ছবি দেয়া সেই ট্রান্কটিও দাদীর ব্যক্তিগত
কলকাতা থেকে দাদা এনেছিলেন বিয়াল্লিশ বছর আগে ।
আজও সেই জিনিষগুলোর মাঝে আমি বাবাকে পাই , চাচাকে পাই।
চরম উৎকর্ষের যুগে , আমিই পরিবারের সর্বোচ্চ শিক্ষিত
কিন্তু আমার কোন নির্দিষ্ট কলম নেই সারাটা জীবন ধরেই ।
বলপয়েন্টগুলো ডজন হিসেবে কিনে আনি আর হারাই ,
জিলেটের ওয়ানটাইম রেজরগুলো সপ্তাহ শেষে ছুড়ে ফেলি ডাস্টবিনে ।
প্রতিবছর পাল্টাই মোবাইল সেট , সানগ্লাস , ডিনার সেটের নতুন ডিজাইনের প্লেট , আরো যতো টুকিটাকি ।
মৃত্যুর পর কোন দ্রব্যে আমাকে খুঁজে পাওয়া যাবে না ,
কারন ওসব আমার ব্যক্তিগত ছিল না ।
আমি যেমন বাবাকে খুঁজি , মৃত্যুর পরে আমাকে কেউ খুঁজবে না
কারন বাবার ব্যক্তিগত দ্রব্য ছিল , নিজের সন্তান ছিল ।
ভুল সময়ে জন্মানোর কারনে , আমার ব্যক্তিগত কিছুই ছিল না কোনকালে ।

ফেইসবুকে যোগ করুন

শুক্রবার, ১৫ আগস্ট, ২০০৮

একটি হারানো বিজ্ঞপ্তি

একটি হারানো বিজ্ঞপ্তি:
গতকল্য বিকাল‍ ছয় ঘটিকায়
ম্লান গোধূলীবেলায় একজন যুবক
মানুষের পৃথিবী থেকে হারাইয়া গিয়াছে।

যুবকটির গায়ের রঙ চরের মাটির মত শ্যামল
চোখের রঙ শতবর্ষী পুকুরের জলের মত কালচে তরল,
কুঞ্চিত কেশদল ঘোর কৃষ্ণকায়, ঘাড় ছেয়ে কাঁধের কাছে নিঃশ্বাস ফেলিতেছিলো।
যুবকটি উচ্চতায় ছোট টিলার সমান কিন্তু পাহাড়ের চেয়ে খাটো।

যুবকটির বুক পকেটে ছিলো তিনটি জ্বলজ্বলে নক্ষত্র
প্যান্টের বাম পকেটে ছিলো একটি আস্ত নীহারিকা
ডান পকেটে ছিলো সর্বগ্রাসী এক কৃষ্ণগহবর,
যুবকটির পরণে ছিলো মিহি কুয়াশার চাদর।

হারাইয়া যাইবার আগ মুহুর্তে যুবকটিকে
আষাঢ়ের ঘন কালো মেঘমালা আবৃত করিয়া রাখে
মিনিট খানেক, মেঘ সরিয়া যাইতেই যুবকটিকে
আর দৃষ্টির সীমানায় পাওয়া যায় নাই।

যুবকটির সন্ধান না পাইয়া তাহার মাতা গভীর শোকে শয্যাশায়ী
তাহার সহোদর এবং সহোদরাগণ চরম উৎকন্ঠায় দিন কাটাইতেছেন।
যদি কেহ যুবকটির সন্ধান পাইয়া থাকেন
তাহাকে নিম্নবর্ণিত ঠিকানায় যোগাযোগ করিবার জন্য অনুরোধ করা যাইতেছে-
ঠিকানা: মেঘনা পাড়ের ধবল জোৎস্নার ঘাট।


- - -
মাইজদী, নোয়াখালী
৫ জুলাই, ২০০৮

ফেইসবুকে যোগ করুন

ঘুম ভাঙানো ঘড়ি

চুড়ির রিনিঝিনি ধ্বনি
নয়তো আঁচলের মৃদু আঘাতে
রাত ভোর হতো সুনির্দিষ্ট সময়ে।

ভাবতাম, তুমি না থাকলে কি যে হতো!
সময় মতো ঘুম ভাঙতো না,
হতো না সঠিক সময়ে অফিস যাওয়া ।

কোন কিছুই আবশ্যিক নয়,
এ সত্যটি না জেনেই ভুগতাম
হারানোর অসম্ভব প্রায় উৎকন্ঠায়।

জেবিন, চুপিচুপি বলি শোন -
অ্যালার্ম দেয়া ঘড়িটা এখন
ঠিক সময় মতোই আমার ঘুম ভাঙায়।


৩ জুলাই, ২০০৮

ফেইসবুকে যোগ করুন

এমন বৃষ্টি ঝরা দিনে

বৃষ্টি না পেলে শস্যের প্রাণ জেগে ওঠে না সুপ্ত বীজ থেকে,
হবে না নতুন জলে পোনা মাছের ছোটাছুটি।
বৃষ্টি না পেলে ময়লা ধুয়ে যাবে না,
শহর দিনে দিনে চলে যাবে নোংরা আবর্জনার দখলে।
বৃষ্টি না ঝরলে জমিন ফেটে চৌচির হবে
শুকনো মাঠে শকুনও ঠাঁই পাবে না।

বৃষ্টি না হলে ধূলি কনায় ভরে যাবে আকাশের নীল
মিটি মিটি তারা দেখবো না আর।
বৃষ্টি না হলে পাখির লাশ পড়ে থাকবে মরা গাছের ডালে
লজ্জাবতী চিরস্থায়ীভাবে গুটিয়ে নেবে সকল পাতা।
বৃষ্টি না হলে কচু পাতায় জমে থাকা সুন্দর দেখা হবে না,
হবে না ভরা পুকুরে ডুবসাঁতার।

বৃষ্টি সবাইকেই কিছু না কিছু দেয়,
কখনো অকস্মাৎ মনে করিয়ে দেয় ভুলে থাকা স্মৃতি।
মনে করতে বাধ্য হই, এমনি এক দিনে শেষবার দ্যাখা হয়েছিলো;
এমন বৃষ্টি ঝরা দিনে অনেক অভিমান বুকে বাজে।


- - -
মাইজদী, নোয়াখালী

০২ রা জুলাই, ২০০৮ রাত ৮:০৪


ফেইসবুকে যোগ করুন

মঙ্গলবার, ২৯ জুলাই, ২০০৮

Bangla Help

General Recommendations

Font: Solaimanlipi, developed by Solaiman Karim. Download it from here.
Software for Writing Bangla: Avro, developed by Omicrolab. Download it from here.
Browser: Firefox. Download it from here. [Why firefox?]

Windows Vista

Internet Explorer 7/8
You can see Bangla without configuring anything in Windows Vista. By default, Windows uses Vrinda font, which is not quite aesthetically beatiful font.

IE_vrinda
For a better view of Bangla unicode text, you can install SolaimanLipi font into your system and change the default font from Vrinda to Solaimanlipi. Please follow these steps to do that.

1. Go to Tool > Internet Options.
2. From the General Tab click Fonts (at the bottom).
3.
Fonts_options
From fonts window, select Bangla as the Language Script. And select Solaimanlipi font in Webpage Fonts field.

4. Click OK.

Now, go to Nirpata.com site and have a look. It should look like this -
IE_solaimanlipi

Windows Vista/XP
Firefox
1. Install the Solaimanlipi font.
2. Go Tools > Preferences.
3. Go to the Content tab. Select Default font to Solaimanlipi.
Firefox_options

4. Click OK.

Windows XP
Step: 1
First of all, you need to install support for Windows complex script to view complex Asian characters like Bangla. You can download it from here (alt). Download it and install.

Step: 2
Install SolaimanLipi font.

Step 3
Configure you browser for better a better view.
Internet Explorer: See the Internet Explorer part under MS Vista operating system.
Firefox: See the Firefox font configuration under Windows Vista.

Ubuntu Linux
You don’t need to do anything in Ubuntu Linux (7.x or higher.) to see the Bangla text correctly. However, to have the best view you can install and use the Solaimanlipi font in your browser.

1. Download Solaimanlipi font from here.
2. Press alt+f2, and then type

gksu nautilus /usr/share/fonts/truetype

3. Copy the font and paste it in the nautilus explorer.
4. Again press alt+F2 and type this,

sudo fc-cache -f -v

5. To view Bangla web pages in Solaimanlipi font, follow the instructions for Firefox in Windows Vista.

 ------------------------------------------------------------------
বি: দ্র: এই সহায়িকাটি তৈরি করেছেন হাসিব মাহমুদ। মূল লিঙ্ক এখানে

ফেইসবুকে যোগ করুন

বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই, ২০০৮

আষাঢ়ে স্বপ্ন

ইস্ত্রি করা কড়কড়ে শার্ট পরেছি ভাঁজ খুলে
জিন্স বেঁধেছি দামী বেল্টের বাঁধনে।
চকচকে পালিশ করা জুতোয় আলোর প্রতিফলন
প্রতিদিনকার চেয়ে দু’বার বেশি ছিটিয়েছি ফরাসী সৌরভ।
তারপর রিক্সা ডেকে মোলায়েম কন্ঠে দরদাম করে
হুড খুলে রাজকীয় ভঙ্গিতে যাত্রা শুরু।

এত আয়োজন শুধু আমাদের প্রথম দেখা, তাই।
তুমিও নিশ্চয়ই পথে, অথবা পৌছে গিয়েছো
চাইনিজ রেস্তোরাটার সামনে।
পাঁচটা বাজলো প্রায়;
হয়তো অধীর আগ্রহে কম্পমান প্রতীক্ষায়!

যেমন ভাবছি তেমনটিই দেখতে তুমি!
ভাবছি আর চলছি... চোখের সামনে দিয়ে হেঁটে যায় কতজন,
ভালো করে কাউকেই লক্ষ্য করি না।
আমি শুধু আজ তোমাকে দেখবো।

তোমার আজ নীল শাড়ী পরার কথা;
রাস্তার সমস্ত নীল রঙা পোশাকের দিকে আড়চোখে চাই-
পাশ কাটিয়ে যে যাচ্ছে, সে কি তুমি?
তোমার হাতে নীল চুড়ি থাকার কথা,
সব নীল চুড়ি পরা হাতের দিকে তাকাই-
চুড়ি হাতে শব্দ করছে যে, সে কি তুমি?

হৃদস্পন্দন মিনিটে দু’চারটি ব্যর্থ হচ্‍ছে উত্তেজনায়।
নির্দিষ্ট স্থানে পৌছালাম প্রায়; ঐতো তুমি!
দাঁড়িয়ে আছো ঠায়, ভীষণ রকম সলজ্জ ভঙ্গি।
তোমার পাশ ঘেঁষে দাঁড়াই।
হাত বাড়ালেই তুমি,
সমস্ত প্রতীক্ষার আজি হলো অবসান।

আমি হাত বাড়িয়ে দিই,
কিছুটা ইতস্তত করে তুমিও।
আমরা পরস্পরের হাত ধরে দাঁড়িয়েই থাকি... দাঁড়িয়েই থাকি...
যতক্ষণ না আষাঢ়ের মেঘমালা টিনের চালে
মৃদু জলপ্রপাতের ধারার মত গড়িয়ে পড়ে
টুপটাপ শব্দে ভোর রাত্রির ঘুম ভাঙিয়ে দেয়!


- - -
মাইজদী, নোয়াখালী
২৬ জুন ২০০৮
মাঝরাত

ফেইসবুকে যোগ করুন

আষাঢ়ের কাছে অনুরোধ

কাপড় ধুয়েছি সেই সাত সকালে;
এখন বেলা গড়িয়ে দুপুর, তবু শুকাচ্ছে না শার্ট।
আমি যে আজ কথা দিয়েছি, ঠিক পাঁচটায়
দেখা হবে তার সাথে আমার।

বৈশাখের অনেক উত্তপ্ত দিন পেরিয়ে
মায়াবী রাজকন্যা অবশেষে সম্মতি দিয়েছে।
দূরালাপনীর দূরুত্ব পেরিয়ে নির্ঘুম উত্তেজনার
অবসান হবে আজ, হবে প্রথম চোখের দেখা।

কড়া ইস্ত্রি করা পরিস্কার কেতাদুরুস্ত পোশাকে
দামী সুগন্ধী মেখে আজ আমি যাবো তার কাছে।
মাস খরচার টাকা শেষ হয়েছে আগেই; ধার কর্জ করে
বুক পকেটে যত্ন করে রেখেছি কড়কড়ে পাঁচশত টাকা।

আজ এই বরষার ছায়া ছায়া মেঘলা দিনে
আষাঢ়ের কাছে অনুরোধ--
হে বিরহী আষাঢ়, অন্তত আজকের দিনে ফিরিয়ে নাও
তোমার মেঘদল; রৌদ্র খেলা করুক খোলা উঠোনে।
আমার কাপড় শুকাতে দেরি হচ্ছে...



- - -
মাইজদী, নোয়াখালী
২২ জুন, ২০০৮


* ছবি কৃতজ্ঞতা

ফেইসবুকে যোগ করুন

চুম্বন ফিরিয়ে নিলে

আমার ধুমপানের অভ্যাস ছিলো, একটু বেশিই ছিলো।
সিগারেটের প্যাকেটের গায়ে সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ পড়ে
ক্ষতিকর অভ্যাস হিসেবে মেনে নিলেও, ছাড়তে পারিনি।
তুমি বলেছিলে, ফুসফুস পোড়ানো যন্ত্রণাটা ছেড়ে দিতে;
বিনিময়ে দেবে হাজারো চুম্বন।
আমিও ভেবেছিলাম একটি সিগারেটের
বিকল্প হতে পারে একটি চুম্বন।

তাই একটি চুম্বনের জন্য ছুটে গিয়েছিলাম।
তোমার ঠোঁটের বাঁকা হাসিতে কোন সতর্কীকরণ বার্তা দেখিনি;
আমি নিশ্চিন্তে বিকল্প নেশায় মজে ছিলাম।

যখন তোমার কাছে যেতাম, মুখে থাকতো সুগন্ধী চকলেট;
পাছে তুমি টের পেয়ে যাও, অভ্যাসবশত: ভুল করে
এখনো দু’একটি টানা হয়ে যায়।

আমি সিগারেট ছেড়েই দিয়েছিলাম প্রায়;
পোড়া ফুসফুস ফিরে পাচ্ছিলো স্বাভাবিক ছন্দ।
তোমার চুম্বন কখনোই ফিরিয়ে নেবে না জেনে
স্বল্প সময়ে ফুসফুস পোড়ানোর বিচ্ছিরি নেশাটা কাটিয়ে উঠেছিলাম।

তখন কি জানতাম-
চুম্বন এক ভয়ংকর অগ্নি,
লকলকে শিখায় গ্রাস করে হৃদয়ের কোষগুচ্ছ;
ফিরিয়ে নিলে আত্মাসহ পোড়ায়!


- - -
মাইজদী, নোয়াখালী
১৯ জুন, ২০০৮


* লেখাটি একই সাথে আমার ব্লগে প্রকাশিত।

ফেইসবুকে যোগ করুন

হিসেব নিকেশ

দিন গুনলে মনে হয় বড্ড বেশি সময় চলে যাচ্ছে,
হাতের আঙুলে আর জায়গা হয় না;
তাই বছর গুনি, তাতে করে অংকটা কমে আসে।

ইদানিং বছর গুণতেও ভয় হয়;
রেখা ভাগ করা মলিন আঙুলে গুণতে শুরু করলে
আশংকাজনকভাবে দু’তিনটে আঙুল ডিঙিয়ে যায়।

এভাবে একসময় বছরের হিসেবটাও সবগুলো আঙুল পেরিয়ে
বিশাল সংখ্যায় দাঁড়াবে; তাই হিসেব কষতেই ভয় হয়।
কত বছর তোমাকে দেখি না?


অংকে কাঁচা হলেই বোধহয় ভালো ছিলো!


১৬ জুন, ২০০৮

ফেইসবুকে যোগ করুন

ভালো থেকো ভালোবাসার ঘরে

আমি বললাম, ভালো থেকো ভালোবাসার ‘ঘরে’;
তুমি বললে, ভালো থেকো ভালোবাসার ‘ঘোরে’।
ঘর আর ঘোরের ভেদবুদ্ধি হতেই দেখি, তুমি চলে গ্যাছো দূরে।
আমি ভালো নেই ভালোবাসার ঘরে।


১১ জুন, ২০০৮

ফেইসবুকে যোগ করুন

তুমি না থাকার মত করে ছড়িয়ে থাকো সবখানে

তুমি থাকো না শোবার ঘরে,
রান্না ঘরে থাকো না
স্নান ঘরে থাকো না
ভাঁড়ার ঘরের লক্ষ্ণী হয়ে থাকো না।

তুমি থাকো না উঠোনের পাশটায়
থাকো না নারকেল গাছের খুঁটি দেয়া শ্যাওলা পড়া পুকুর ঘাটে,
গজিয়ে ওঠা লাউ গাছটার লতার পাশে থাকো না
থাকো না পাতাবাহার ঘেরা বাগানটার পাশে।

তুমি টেবিলের পাশে লেখালিখির সময় থাকো না,
খাবার টেবিলে নুন দিতে থাকো না
স্নান শেষে তোয়ালে দিতে থাকো না
থাকো না আলতো চুমুতে রাঙিয়ে অফিসের পথে এগিয়ে দিতে।

তুমি কোথাও থাকো না, কোথাও না;
অথচ আমার চোখের ভিতর আলোছায়ার প্রতিবিম্ব হয়ে
থাকো প্রতিটি দৃশ্যে-অদৃশ্যে।
তুমি না থাকার মত করে ছড়িয়ে থাকো সবখানে,
ভুল দৃষ্টির ভুল প্রতিবিম্বে...



মাইজদী, নোয়াখালী
৭ জুন ২০০৮

ফেইসবুকে যোগ করুন

চকলেট অথবা চলকেট

নতুন কথা বলতে শেখা শিশুদের উচ্চারণে ত্রুটি থাকে,
দু’একটি বর্ণ এদিক ওদিক হয়ে তৈরি হয় নতুন ধ্বনি;
আধো আধো বোলে উচ্চারণের সেই ত্রুটিও মধুর হয়ে ওঠে।
কথার ফাঁকে সেই ভুল উচ্চারণ বয়েসীদের স্নেহের তোড়ে মহিয়ান হয়ে ওঠে।

তেমনি আমাদের আলাপচারিতায় বারে বারে অনেক আদরের
তোমার ছোট ভাইয়ের গল্প ওঠে আসতো;
তুমি ওর মজার মজার আচরণের কথা বলতে আর হেসে লুটোপুটি খেতে সস্নেহে।
কখনো আমিও গলা মেলাতাম সেই অন্তরঙ্গতায়।

মনে পড়ে, তুমিও ছোটদের মত করে ইচ্ছে করেই ভুল উচ্চারণে বলতে সোহাগের কথা।
যেমন চকলেট খেতে ইচ্ছে হলে বলতে, “আমি ‘চলকেট’ খাবো”।
তোমার ছোট ভাইটি, যে কিনা এখনো প্রাথমিক বিদ্যালয় ডিঙোতে পারেনি,
কলেজ পড়ুয়া তুমি তার মুখের বুলিকেই নিজে ব্যবহার করতে।
তোমার আদুরে গলায় অপ্রচলিত শব্দগুলো মোহাবিষ্ট করতো আমায়,
আমি ভালোবাসার টানে সেই শিশুতোষ শব্দগুলোকেই আপন করে নিতাম।

তুমি কি এখনো চকলেটকে ‘চলকেট’ বলো?
অনেক দিন হলো চলকেট খাই না...

২ জুন ২০০৮

ফেইসবুকে যোগ করুন

অবশেষে

অনেক দিন দ্যাখা না হলে স্মৃতি ধূসর হতে থাকে।
প্রথমে অন্তরঙ্গ সময়ের সংলাপ ভুলে যাওয়া,
ভুলে যেতে থাকা কথার মুদ্রাদোষ, খুনসুঁটির পরিভাষা,
দ্যাখা সাক্ষাতের দিনক্ষণ।

তারপর ভুলে যাওয়া পরস্পরের পছ্ন্দ অপছ্ন্দ;
ক্রমান্বয়ে ভুলে যেতে থাকা শরীরের মোহনীয় বাঁক,
গালে তিলের সঠিক অবস্থান,
পোশাকের শোভা, ঠোঁটের রঙ।

তারপর যখন উল্লেখযোগ্য তেমন কিছুই অবশিষ্ট থাকে না,
স্মৃতির দাগটুকু পুরোনো অব্যবহৃত অন্তর্বাসের মত
ফেলে দেয়া হয় গোপনে লোকচক্ষুর আড়ালে।
গ্লাসে জল পান শেষে হাতের উল্টো পিঠে
মুখ মোছার মত করে সবকিছুই সরিয়ে
ঝাঁপিয়ে পড়া নতুনের আহবানে।

অবশেষে আমরা ভুলিবো আমাদের,
ঘর বাঁধিবো নতুন গাঁয়ে...



- - -
মাইজদী, নোয়াখালী
২৬ মে, ২০০৮

ফেইসবুকে যোগ করুন

আরণ্যক

এখানে পৃথিবীর তাবৎ মূল্যবান ঘড়িই মূল্যহীন,
এখানে নেই গাড়ির হর্ণ, নেই রোড অ্যাক্সিডেন্টের বালাই,
এখানে যান্ত্রিক পৃথিবীর সমস্ত গুঞ্জরণ প্রশান্তির বিবরে হারিয়ে যায়।
এখানে ভোরের সোনালী রোদ্দুরকে ঢেকে দেয়না ধোঁয়াটে অন্ধকার,
এখানে ক্যাসেট প্লেয়ারে বাজেনা ধুমধাড়াক্কা গান;
এখানে ভোরে গান গায় হাজারো পাখি, রাতে ক্ষুধার্ত হায়েনা।
এখানে শিকারের আশায় ওৎ পেতে থাকে হিংস্র জাগুয়ার,
এখানে উৎসবে মত্ত নিশাচর পৃথিবী।
এখানে অন্ধকারের দূর্গ গড়ে আকাশছোঁয়া বৃক্ষ,
এখানে পাহাড়ের চূড়ায় চূড়ায় বন্দী নগ্ন পৃথিবীর অশ্লীলতা।
এখানে নেই প্রাত্যহিক সীমাবদ্ধতা।

এখানে আমি যখন তখন সবুজ ঘাসে পা বিছিয়ে স্বপ্নদৃশ্য আঁকতে পারি।
ইচ্ছে হলেই প্রতিযোগিতায় মাততে পারি
ক্ষীপ্র চিতার সাথে,
ইচ্ছে হলেই খুলতে পারি নবচেতনার দ্বার।

এখানে একা আমি, শুধু আমি,
প্রতিদ্বন্দী হই ঈশ্বরের।
এখানে একা আমি, শুধু আমি,
আরণ্যক এক।


২৮.১২.১৯৯৬

- - -
এটাও অনেক আগের লেখা। সেই এইচএসসি পড়ার সময়কার। তখন খুব অরণ্যবাসী হওয়ার ইচ্ছে হত মনে মনে... পুরোনো লেখাগুলো পড়লে কলেজ জীবনের অনেক স্মৃতি মনে পড়ে যায়...

ফেইসবুকে যোগ করুন

নিঃসঙ্গ

শুরুতে ছিলেনা, শেষেও না।
চলে তো যাবেই, সবাই চলে যায়,
আমি রয়ে যাই অনন্ত নিঃসঙ্গতায়...
আমিই আলফা, আমিই ওমেগা!


২৩ মে, ২০০৮

ফেইসবুকে যোগ করুন

জালছেঁড়া নদী


নাব্যতা হারালে নদী'র বুকে খাঁ খাঁ চর জাগে
জালছেঁড়া নদীও গতি হারায় পলির স্তুপে;
অথবা আমরাই পোড়াই নদী'র শ্মশান,
তার রুপালী জমিনে চিক চিক ক্রুর হাসি।

উঠোনে জাল পাতি রোদের শরীরে মেলে
লেগে থাকা আবর্জনা বাছি পরম যত্নে;
মাছ শিকারে যাবো পূর্বপুরুষের মতো,
জীবনের টানে জীবিকার টানে।

আহা! মাছেরা উদ্বাস্তু, জল নেই জালছেঁড়া নদীর বুকে;
শুন্য জাল বুভুক্ষু ভিটায় দোলে...



- - -
ছবি কৃতজ্ঞতা

মাইজদী, নোয়াখালী
১৮ মে, ২০০৮

ফেইসবুকে যোগ করুন

গোলাপী সনদ

প্রধান শিক্ষয়িত্রীর মত গাম্ভীর্য নিয়ে বললে, পরীক্ষা দিতে হবে,
পাশ নাম্বার পেলে তবেই যোগ্য মানুষের সংজ্ঞায় ফেলবে আমাকে;
আরো নানান কঠিন শর্ত, সূক্ষ্ণ প্রতিরোধ।

অদম্য উৎসাহে আজ আমি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার মত পুঁজি গড়েছি,
সমাজে উঠতি মান্যগণ্য হিসেবেও নাম কামিয়েছি;
তাতে সময় লেগেছে বেশ, পরিশ্রম ও অঢেল।

পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত আমি খেয়ালই করিনি
কোন ফাঁকে তুমি প্রারম্ভিক চাহিদা পাল্টেছো, শিথিল করেছো শর্ত;
ইতোমধ্যে পরীক্ষায় আরেকজন উত্তীর্ণ ঘোষিত হয়েছে, পেয়ে গ্যাছে গোলাপী সনদ।

- - -
মাইজদী, নোয়াখালী
১৫ মে, ২০০৮

ফেইসবুকে যোগ করুন

অনেক অনল

অনল অনল বুকের অনল
চোখের অনল মনের অনল
আমার অনল তোমার অনল
আমার ভেতর তোমার অনল
তোমার ভেতর আমার অনল।

স্বপ্ন অনল কষ্ট অনল
প্রেমের অনল ঘৃণার অনল
অনেক অভিমানের অনল
অনেক চাওয়ার অনেক পাওয়ার
অনেক সুখের ভ্রষ্ট অনল।

জলের অনল ফুলের অনল
চাঁদ তারা আর রবি’র অনল
বোবা অনল নিত্য অনল
তোমার ভেতর আমার অনল
আমার ভেতর তোমার অনল।।

১৯.১১.১৯৯৬

- - -
লেখাটা ম্যালা আগের। এইচএসসি প্রথম বর্ষে পড়তাম তখন।

ফেইসবুকে যোগ করুন

অনুসংলাপ: আনাড়ী



: ওভাবে নয়, এদিকে দ্যাখো।
: যেভাবে দ্যাখালে, সেভাবেই?
: নয়তো কি! কিচ্ছু বোঝেনা! ন্যাকা!
: আচ্ছা ঠিক আছে, তাই সই।

ফেইসবুকে যোগ করুন

অভিশাপের পংক্তিমালা B-)

১৯৯৬ সালের প্রথম দিকের কথা। তখন এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছি। রেজাল্ট হয়নি। আমরা ১০/১৫ জন বন্ধু প্রতিদিন বিকেল হলেই বেশ কয়েক ঘন্টা আড্ডাবাজিতে সময় কাটাতাম। এর মধ্যে আমাদের এক বন্ধু তার প্রতিবেশী এক মেয়ের প্রেমে পড়ে গেলো।B-) বন্ধুটি মুসলমান। মেয়েটা হিন্দু। সঙ্গত কারনে এই প্রেম হওয়ার তেমন কোন কারণই ছিলোনা! কাঁচা বয়স বলে কথা! বন্ধুটি আবেগাপ্লুত হয়ে একটা চিঠিও দিয়েছিলো মেয়েটাকে। কিন্তু মেয়েটির দিক থেকে কোন সাড়া নেই। :|

এদিকে একদিন মেয়েটির বাসার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় আমাদের মধ্যে কেউ একজন তীর্যক মন্তব্য ছুঁড়ে দিয়েছিলো। ফলাফল, মেয়েটার মা আমাদেরকে চ্যালাকাঠ হাতে দৌড়ানি। :P আমি অবশ্য বেশ সাহস নিয়ে হেঁটে হেঁটেই চলে এসেছিলাম। আমি আবার খুব ভদ্র টাইপ ছেলে ছিলাম তো, তাই নিশ্চিত ছিলাম আমাকে কিছু বলবেনা! তাছাড়া আমি তো কোন মন্তব্য করিনি! অন্যরা ভয়ে ভোঁ দৌড়! :D সেদিনই নিশ্চিত হওয়া গেলো এই প্রেম হওয়ার কোনই সম্ভাবনা নাই। ;)

যাই হোক, মেয়েটার কাছ থেকে কোন সাড়া না পেয়ে বন্ধুটির অব্স্থা খারাপ। আমরাও বেশ ক্ষুদ্ধ! শেষে আমি বন্ধুর দূ:খে দূ:খিত হয়ে মেয়েটিকে অভিশাপ দিয়ে মহা বিপ্লবী এক কোবতে লিখে ফেললাম! B-) অবশ্য সেটা মেয়েটিকে দেয়া হয়নি। নিজেরা নিজেরাই পড়েছিলাম। ;)

লেখাটা খুঁজে পেলাম আজ। কাগজ ছিঁড়ে শেষ অবস্থা! পুরোনো অনেক স্মৃতি মনে পড়ে গেলো। বেশ একচোট হেসে নিলাম নিজে নিজেই। :D

সবার সাথে শেয়ার করছি লেখাটা! মজা লাগারই কথা সবার! ;)


অভিশাপের পংক্তিমালা (উৎসর্গ: বন্ধু .... )

কোন এক রক্তিম গোধূলীতে ভালোবাসার কাঙাল আমি তোমাকে চেয়েছিলাম।
কোন এক ফেরারী সকালে অসহায় আমি তোমার হৃদয়ে আশ্রয় চেয়েছিলাম।
কোন এক স্বপ্নীল জ্যোৎস্নায় খোলা আকাশের নীচে
আমার চোখে চোখ রেখে বলেছিলে, ‘তুমি শুধুই আমার’।
বুঝিনি এ ছিলো তোমার অভিনয়!

আমি প্রতিবাদ করি তোমার এই নিষ্ঠুরতার,
আমি প্রতিবাদ করি তোমার এই প্রেম প্রেম খেলার,
আমি প্রতিবাদ করি তোমার এই ছলনার,
আমি প্রতিবাদ করি তোমার এই স্বার্থপরতার,
আমি প্রতিবাদ করি তোমার এই অভিনয়ের,
আমি ঘৃণা করি তোমাকে।

আমি অভিশাপ দিচ্ছি তোমায়
কখনো কেউ তোমাকে বলবেনা ভালোবাসার কথা।
আমি ‌অভিশাপ দিচ্ছি পৃথিবীর কেউ কাছে টেনে নেবেনা তোমায় কখনো।
আমি অভিশাপ দিচ্ছি
তোমাকে দেখে পৃথিবীর সমস্ত ফু‍ল লজ্জায় ঘৃণায় ঝরে যাবে,
কোন পাখি গাইবে না গান মধুর সুরে।
আমি অভিশাপ দিচ্ছি তোমায়
কোন গাছ ক্লান্ত তোমাকে দেবেনা ছায়া,
খাঁ খাঁ রোদ্দুরে কোন মেঘ তোমাকে দেবেনা ছায়া,
উত্তপ্ত দুপুরে ঠান্ডা দখিনা বাতাস তোমার শরীর ছুঁয়ে যাবেনা।
আমি অভিশাপ দিচ্ছি
এই সূর্য তোমায় দেবেনা আলো,
এই চাঁদ তোমার আকাশে ছড়াবেনা জ্যোৎস্না।
আমি অভিশাপ দিচ্ছি
রাতজাগা বিনিদ্র তোমাকে সঙ্গ দেবেনা কোন নক্ষত্র,
সঙ্গ দেবেনা কোন প্রজাপতি।
আমি অভিশাপ দিচ্ছি
তোমার সঙ্গী হবে রাতজাগা কষ্টরা,
দূঃখ হবে তোমার পোশাক
হতাশা হবে তোমার প্রসাধনী,
অনন্ত মহাকাশের মত নিঃসীম শূন্যতা হবে তোমার একান্ত বন্ধু।
আমি অভিশাপ দিচ্ছি
পৃথিবীর সমস্ত মানুষ তোমাকে ঘৃণাই করে যাবে।

২৮.৩.১৯৯৬

- - -
(শেষ খবর, মেয়েটি এখন আম্রিকা আছে। একটা সন্তানও হয়েছে। বন্ধুটি এখনো অবিবাহিত।)
B-)

ফেইসবুকে যোগ করুন

বিশ্বনাগরিক

আমাদের স্বপ্নগুলো এখন পেশাদার স্বপ্নকারিগররা দেখে;
তারপর নির্মান শেষ হলে বহুজাতিক কোম্পানী থেকে
আড়ৎদার হয়ে খুচরা বিক্রেতাদের হাতে।
আমাদের স্বপ্নগুলো এখন কিনতে পারা যায় যত খুশি,
দোকানে সাজানো থাকে আকর্ষণীয় মোড়কে।
যার যার সামর্থ্য অনুসারে নগদ মূল্যে কিনে আমরা হাসিমুখে
সব বিজয়ীর ভঙ্গিতে বাড়ি ফিরে আসি।

আমাদের ঘরবাড়ি এখন পেশাদার স্থপতি, নির্মাতারা করে দেয়,
আমরা শুধু কাঁচাপয়সা সরবরাহ করি; চাইলেই নকশার গুণে
কয়েক কাঠা জমি হয়ে উঠে একটুকরো নিউইয়র্ক অথবা ভেনিস।

আমাদের ভবিষ্যত পরিকল্পনা করে দেয় বিশ্বব্যাংক, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল;
বাস্তবায়নের অর্থ ও সুদে আসলে আদায় করে নেয় দরিদ্রের ঘামে ভেজা শ্রমে।
আমরা কাল্পনিক সুখের প্রবৃদ্ধিতে বুঁদ হয়ে থাকি।

ভিনদেশে পরাগায়ন শেষে আমাদের ফসলের বীজ এখন
কৃষকের হাতে হাতে পৌছে ট্রাকে, মালবাহী ট্রেনে করে।
আমাদের মাঠ এখন উচ্চফলনশীল উন্নয়নের জোয়ারে
উর্বরতা হারিয়ে সর্বগ্রাসী ক্ষুধা নিয়ে কৃত্রিম সার গিলতে থাকে,
আমরা দারুণ কষ্টে মাঠের ক্ষুধা মিটিয়ে সোনা রঙা ধানে গোলা ভরি।
আমাদের গোলার ধানে পরবর্তী বছরে আর শস্য গজায় না,
আমরা অপেক্ষা করতে থাকি বীজ বেচা কাবলিওয়ালাদের পথ চেয়ে।

আমাদের প্রেম এখন ভীষণ রকম যৌনগন্ধী!
টিভিতে, রেডিওতে, পত্রিকায়, হাজারো বিজ্ঞাপনে আমাদের
প্রেমের কলা-কৌশল শেখানো হয় নিয়মিত;
যেন এর আগে এই দেশে প্রেম ছিলোনা! ভুখা নাঙা মানুষ
বহুজাতিক কোম্পানী আসার আগে প্রেম করতে জানতো না!
আমরা প্রেমের ছড়াছড়িতে ডুবে যাই মুঠোফোনে।
হাঁটতে হাঁটতে প্রেম করার অভ্যাস করি, খেতে খেতে প্রেম করার অভ্যাস করি,
ঘুমাতে ঘুমাতেও প্রেম করার অভ্যাস করি,
ভাবে ভঙ্গিমায় আমরা আন্তর্জাতিক মানের প্রেমিক হয়ে উঠি।

আমাদের সংস্কৃতি নতুন নতুন পাঠ্যাভ্যাসে
সুশোভিত হয় শপিং মলে, রেস্তোরায়, মঞ্চে, গানে, নাটকে, বক্তৃতায়।
আমরা ভুলে যাই আমাদের অনেক সমৃদ্ধ স্বনির্ভর অতীত ছিলো;
গেঁয়ো গন্ধ ঝেড়ে ফেলে ধীরে ধীরে আমরা বিশ্বনাগরিক হয়ে উঠি।



- - -
মাইজদী, নোয়াখালী
৯ মার্চ, ২০০৮

ফেইসবুকে যোগ করুন

আঠারোতেই স্থির তুমি

মুখ ফুটে অথবা ঠারেঠুরে কেউ বলার আগে নিজেই টের পাই, বয়স বাড়ছে।
পেটের কাছাকাছি অঞ্চলে পুরু চর্বির ভাঁজ জমা হচ্ছে,
স্পষ্ট হয়ে উঠছে কপালের বলিরেখা,
দু' তিন তলা সিঁড়ি ভাঙতেই হাঁপিয়ে উঠি আজকাল;
তারুণ্যের শেষ সীমায় পৌছালাম প্রায়!
আরো কিছুকাল পরে পুরোদোস্তুর মাঝবয়েসী বলা যাবে অনায়াসেই।
অথচ কি আশ্চর্য! তোমার বয়স বাড়ে না;
সময়ের আপেক্ষিকতায় সেই আঠারোতেই স্থির!

অনেকদিন দেখা নেই তাই জানিনা তোমার চুল কি আগের মতই
কাঁধের কাছে ঢেউ খেলানো! না কি লম্বা করেছো সযত্নে!
তোমার ডান গালের তিলটা এখনো চোখে ভাসে, চিবুকের কাছাকাছি তিলটাও।
মনে পড়ে, আয়েশি ভঙ্গিতে তোমার হেঁটে আসা;
তুমি অনন্তকাল ধরে আমার স্বপ্নে হেঁটে আসতে থাকো... হেঁটে আসতে থাকো...

ঢেকে রাখা সবুজ ঘাসও রঙ পাল্টায়
আলোর অভাবে হয় ক্লোরোফিলবিহীন ফ্যাকাশে সাদা।
আজকাল মাঝে মাঝে আনমনে ভাবি,
তোমার প্রতি তীব্র ভালোবাসার প্রকাশ কি এমনটিই থাকবে সময়ের ব্যবধানে?
আরো কিছুকাল পরে যখন চুলে পাক ধরবে, মাঝবয়েসী থেকে বৃদ্ধ হবো,
প্রাকৃতিক অলঙ্ঘনীয় নিয়মে বাঁধা সেই কামনা বিবর্জিত সময়ে
তোমার প্রতি ভালোবাসা তারুণ্যের সময়কার মতই কি উচ্‍ছ্বাসে পরিপূর্ণ থাকবে?

এখন যেমন ইচ্ছে করে রুপকথার গল্পের মত পঙ্খীরাজ ঘোড়ায় চেপে
উদ্ধার করে আনি রাক্ষসরাজ্য থেকে, পাওয়ার আনন্দে জড়িয়ে ধরে কষে চুমু খাই নরম ঠোঁটে;
সেই সময়ে সমপরিমান তৃষ্ণা নিয়ে বার্ধক্যের ভারে নতজানু আমি
কন্যার বয়সী অষ্টাদশী তোমার প্রতি তারুণ্যের মত করেই প্রেমের দূর্দমনীয় টান অনুভব করবো!
নাকি বৃদ্ধাবস্থায় ভালোবাসা রুপান্তরিত হয় নিখাদ স্নেহে!

তোমার চলে যাওয়া এখনও শত চেষ্টাতেও মেনে নিতে পারি নি; পারি না।
অনুজের ভুলগুলো যেমন ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখে হেসে উড়িয়ে দেয় অগ্রজ,
তেমনি নিরাসক্ত দৃষ্টিতে তখন কি সবকিছুই ক্ষমা করে দেবো?
প্রাচীন বৃদ্ধের মত প্রতিদানের আশা না করেই ছায়া হয়ে থাকবো?

অবসরের বিলাসিতা পেলেই আজকাল কথাগুলো মনে হয়।
আর ভাবি, বুড়ো হওয়ার আগেই একটিবার যদি তোমার দেখা পেতাম!
যদি স্মৃতিপটে হালনাগাদ করে নিতে পারতাম পরিবর্তিত ছবিটুকু!

আরেকবার দেখা পাওয়ার সম্ভাবনাহীন তুমি আঠারোতেই স্থির থেকে যাও,
আর আমি বুড়িয়ে যাই প্রতিদিন একটু একটু করে...




মাইজদী, নোয়াখালী
৮ মে, ২০০৮

ফেইসবুকে যোগ করুন

অনুসংলাপ: মনে পড়ে? পড়ে!


: তোমাকে আমার একটুও মনে পড়ে না
: কি বললে? যাও, তোমার সাথে কোনো কথা নাই
: আহা! পুরোটা শোনোই না-
শুধু প্রতিবার যখন নিঃশ্বাস ফেলি, তখন মনে পড়ে।





- - -
মাইজদী, নোয়াখালী
৪ মে, ২০০৮

*ছবি সূত্র

ফেইসবুকে যোগ করুন

গন্তব্য

শেষ বিকেলে তিন বন্ধু সুর্যাস্তের কাছাকাছি
উঁচু পাহাড়টাতে এসে দাঁড়ায়।
প্রথম যুবক একবার তাকিয়েই উত্তর দিকে চলার সিদ্ধান্ত নেয়;
‘উত্তরের সমতল শহরটাই বসবাসের জন্য উত্তম হবে’ স্বগতোক্তি করে
কারো মতামতের অপেক্ষা না করেই পা বাড়ায়।

দ্বিতীয় যুবক দক্ষিণের উপত্যকার আলো ঝলমল শহরের দিকে তাকিয়ে বলে,
‘আরাম আয়েশের জন্য উপযুক্ত শহরের খোঁজ পেয়ে গ্যাছি’।
অবশিষ্ট সঙ্গীর পানে একবারও না তাকিয়ে
পাহাড়ী আঁকাবাঁকা পথ বেয়ে নামতে থাকে।

তৃতীয় যুবক ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে কিছুক্ষণ,
শেষ বারের মত অস্তগামী সুর্যের দিকে তাকিয়ে
পেছন ফিরে চলতে শুরু করে
ফেলে আসা নিঝুম বাড়ী’র পথে।



মাইজদী, নোয়াখালী
২ মে, ২০০৮

ফেইসবুকে যোগ করুন

সবকিছুই বেঁকে যায়

তুমি বেঁকে যাও প্রতিনিয়ত;
হাসতে হাসতে বেঁকে যাও
চলতে চলতে বেঁকে যাও
ঘুরতে ফিরতে বেঁকে যাও।

খুনসুঁটিতে বেঁকে যাও,
রাগে দূঃখে বেঁকে যাও
অভিমানে অনুরাগে বেঁকে যাও
শুতে বসতেও বেঁকে যাও।

ছলনার সময় বেঁকে যাও
অভিনয়ের সময় বেঁকে যাও
সংলাপের সময় বেঁকে যাও
মুঠোফোনে কথা কও বেঁকিয়ে।

রণে বেঁকে যাও
রমণে বেঁকে যাও
ঝগড়ায় বেঁকে যাও
উঠতে বসতে বেঁকে যাও।

আজন্ম ঘাঁড় বাঁকানো তোমার স্বভাব,
কথার পিঠে কথা বাঁকাতে বাঁকাতে
শরীরের বাঁকে বাঁকে মুগ্ধতা ছড়িয়ে
সরল মনের আমাকেও বেঁকিয়ে ফ্যালো।

না, এ তোমার দোষ নয়;
নয় জীনগত ত্রুটি।
তুমিতো বাঁকবেই;
স্থান-কালের বক্রতায়
সবকিছুই বেঁকে যায়!


- - -
মাইজদী, নোয়াখালী
২৮ এপ্রিল, ২০০৮

ফেইসবুকে যোগ করুন

খুব ইচ্ছে করে খাতার জমিনে আজ কবিতা আঁকি

ধবধবে সাদা জমিনে কৃষ্ণ রঙের ছোঁয়া,
মূর্ত হয়ে ওঠে বিমূর্ত যত কথামালা।
এক অক্ষর দু'অক্ষর করে পুরো একটা লাইন,
এক লাইন দু'লাইন করে পুরো একটা কবিতার শরীর।
শব্দের নান্দনিক বিন্যাসে মোহনীয় ভাবনা প্রকাশের সৃষ্টিশীল খেলা
মন্ত্রমুগ্ধের মত ব্যস্ত রাখতো অবসরের ক্ষণ!

কখনো প্রজাপতি ভাবনাগুলো বর্ণমালার গায়ে ভর করে
গুণগুণ করে ওঠা কানের কাছে,
কখনো বোঝা না বোঝার মাঝামাঝি অপার্থিব ভাবনা
শব্দের সঙ্গমে ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে ওঠা নিজের কাছে;
জন্ম দেয় আনকোরা নতুন কবিতার।

কত প্রহর কেটেছে লাল নীল হলুদ পাতায় মায়াভরা চিত্রকল্পের সন্ধানে
মস্তিষ্কের ঝড়ে টালমাটাল দূঃসাহসিক অভিযানে!

খাতায় কাটাকুটি করে অজস্রবার ভুল বানানে
শুদ্ধতার কলম ছোঁয়ানো অথবা কিছু শব্দ এদিক ওদিক করে
নরম কাদামাটির দিয়ে পছন্দসই প্রতিমা গড়ার মত
প্রিয় পংক্তিমালা নির্মানের প্রচেষ্টা হয়ে ওঠে না অনেকদিন।

এখন লেখার জন্য আকর্ষণীয় প্রোগ্রাম আছে ব্যক্তিগত কম্পিউটারে,
রয়েছে কাটাকুটির ঝামেলাবিহীন লেখা প্রতিস্থাপনের অবারিত সুযোগ।
'কাকের ঠ্যাং বকের ঠ্যাং' - এর মত পঁচা হাতের লেখা বলে
ঘনিষ্ট সহপাঠী কিম্বা বন্ধুদের খ্যাঁপানোর সুযোগ নেই।
মন ছুঁয়ে যাওয়া কাব্যিক হস্তাক্ষরের জন্য প্রলুব্ধ হওয়ার মত
একাধিক যান্ত্রিক লিপি সাজানো থাকে প্রতীক হয়ে।
আছে রঙের নাম না জেনে
সারা জীবনে ক্যানভাসে একটিও তুলির আঁচড় না কেটে
প্রতিভাবান শিল্পীর মত আল্পনা আঁকার ডিজিটাল সুবিধা।
আকর্ষণীয় যৌনগন্ধী উপস্থাপনার জন্য আন্তর্জালের ভাঁড়ারে আছে
কোটি কোটি আলো-ছায়ার পরাবাস্তব ফ্রেম।

তবু কেন জানি ইচ্ছে করে নিজের মত করে
জোগাড় করা এক টুকরো পুরোনো কাগজে
কলমের তুলিতে শব্দ জোড়া দিই,
কাটাকুটির খেলায় হঠাৎ আবিস্কারের আনন্দে শৈল্পিক আল্পনা আঁকি,
খসড়া শেষ হলে পর পরিস্কার ধবধবে দুধ রঙা কাগজে
খুব যত্নে করি নির্বাচিত প্রিয় শব্দগুচ্ছের প্রতিস্থাপন।

কি-বোর্ডে দশটি আঙুলের ঠোকাঠুকি নয়,
খুব ইচ্ছে করে, খাতার জমিনে আজ কবিতা আঁকি!



- - -
মাইজদী, নোয়াখালী
২৬ এপ্রিল, ২০০৮


* ছবি সূত্র

ফেইসবুকে যোগ করুন

উত্তর

এমন নয়,
আমি তোমাকে ভালোবাসার অনন্য
উপমা শোনাতে এসেছি;

এমনও নয়,
আমি তোমার জন্য কিছু
ফুল নিয়ে এসেছি;

আমি শু‌ধু বলতে এসেছি,
তোমার হাসি বিস্মৃত এক
কবিতার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।


- - -
২৯.১২.১৯৯৬

* ছবিসূত্র

ফেইসবুকে যোগ করুন

কুসংস্কার

প্রাচীন বৃদ্ধরা প্রায়ই সতর্ক করেন,
'সাবধানে থাকবি। যাত্রা শুভ অশুভ দেখে চলবি।'
আমি সাবধানেই থাকি।
কুসংস্কার মনে হলেও, অনেক কিছুই
মেনে চলি, চলতে চেষ্টা করি।

প্রথম যেদিন আমাদের দেখা হলো,
একসাথে হাঁটছি তুমি আমি,
অকস্মাৎ যাত্রা শুরুর ক্ষাণিক পরেই জুতোর একটা টানা ফিতা
ছিঁড়ে গ্যালো তোমার,
তাতে পুরো জুতোটি অকেজো হয়নি অবশ্য,
শুধু মনের মধ্যে ছোট্ট একটা কাঁটা বিঁধে গ্যালো।
আদিম রক্তে বয়ে আনা কুসংস্কারের তীর
ঠিকই বিদ্ধ করছিলো থেকে থেকে।
যাত্রা কি শুভ হলো! যাত্রা কি শুভ হলো!

তবু বারে বারে নিজের মনেই প্রবোধ দিয়েছিলাম,
ও কিছু নয়, এমনটি হতেই পারে!
একবিংশ শতাব্দীর সুপারসনিক গতির জীবনে
শুধু নির্বোধরাই শুভ অশুভ চিন্তা করে,
বাকিরা এগিয়ে যায় দূরন্ত গতিতে।

আমি নির্বোধ হতে চাইনি। তাই ইতিবাচক ভাবনায়
উড়িয়ে দিয়েছিলাম শংকা। জোর কদমে এগোতে চেয়েছি সামনে।

সেই যে হোঁচট খেলাম, যাত্রা আর গন্তব্যে পৌঁছুলো না!



মাইজদী, নোয়াখালী
১৮ এপ্রিল, ২০০৮

ফেইসবুকে যোগ করুন

বৈশাখের এই তপ্ত দুপুরে

বৈশাখের এই আমপাকা তপ্ত দুপুরে ঘর্মাক্ত আমি;
থার্মোমিটারে মাপলে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি,
জ্বরের কাছাকাছি তাপমাত্রাই পাওয়া যাবে নিশ্চিত।
এই অসহ্য দুপুরে জ্বরতপ্ত ঘোরলাগা চোখে
আমি তোমার পাশে থাকতে চাই।
তোমার কাছাকাছি এলে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে
দুই ডিগ্রী বেশি বাড়ে, কমে না।
ঘর্মাক্ত দেহে মিলেমিশে
তবু আমি তোমার পাশেই থাকতে চাই।

গরম দিয়ে কি গরম কাটাকাটি হয়?
উষ্ণতা দিয়েই উষ্ণতা সইতে হয়!

তপ্ত বৈশাখের এই ক্লান্ত দুপুরে
বিন্দু বিন্দু ঘাম জমা
তোমার মায়াবী শরীরে শরীর রেখে
আমি ভাতঘুম দিতে চাই।



- - -
মাইজদী, নোয়াখালী
২২ এপ্রিল, ২০০৮

ফেইসবুকে যোগ করুন

রাতের কার্ণিভালে

আকাশ উন্মুক্ত হয় রাতের কার্ণিভালে
নীল শাড়ী খুলে সাজে কৃষ্ণ নগ্নিকা
মিটিমিটি হাসে সত্তর হাজার মাতাল।




ঢাকা
১২ এপ্রিল, ২০০৮

ফেইসবুকে যোগ করুন

এসেছে নববর্ষ

সময়ের সুদীর্ঘ পথ বেয়ে
মহাকালের কার্ণিশ ধরে
আবার এসেছে নতুন বছর।
তিক্ততার, ঘৃণার, কষ্টের, সুখ-দূঃখের
বছরটিকে পেছনে ফেলে
উত্তপ্ত গ্রীষ্ম শেষে দখিনা বাতাসে ভর করে আসা মেঘের মত
আনকোরা নতুন আশা নিয়ে এসেছে নববর্ষ।

এ বছরও হয়তো কাটবে পৃথিবী জুড়ে মানবতার অপমানে,
ক্ষুধায়, যন্ত্রণায়, মৃত্যুতে,
নেতাদের ফাঁকা বুলিতে;
তবুও বেঁচে আছি
তবুও হয়তো বেঁচে থাকবো
প্যান্ডোরার বাক্স আঁকড়ে ধরে
অন্তহীন আশা নিয়ে..



---
লেখাটি অনেক আগের। যখন এইচএসসি পড়তাম, তখনকার।মূল লেখাটি এই মুহুর্তে খুঁজে পাচ্ছি না। তবে এখনো মুখস্ত আছে! সেই সময়ের অনেক লেখাই কি করে যেন মনে আছে এখনো। যদিও আজকাল অনেক কিছুই মনে থাকে না!!! :P

ফেইসবুকে যোগ করুন

একদা ঘুমিয়ে ছিলাম (উৎসর্গ: রাশেদ)

একদা ঘুমিয়ে ছিলাম;
ভোরের প্রতীক্ষায়
ঘুম ভেঙেছিলো বারে বারে,
আবার ঘুমিয়ে পড়েছিলাম নিয়মিত বিরতিতে।

ঘুম ভাঙছিলো বারে বারে
ভোরের আলো দেখবো বলে;
পর্দা সরানোই ছিলো,
জানালায় আলোর অনুপস্থিতিতে
আবারও ঘুমিয়ে পড়ছিলাম নিয়মিত বিরতিতে।

একদা ঘুমিয়ে ছিলাম দীর্ঘক্ষণ
আলোর অনুপস্থিতিতে
চোখ বুজে আসছিলো বারে বারে।

একদা আমার ভোর হয়েছিলো অনেক বেলা গড়িয়ে;
ঘন মেঘের আড়ালে টেরই পাইনি কখন হয়েছে ভোর!
বারে বারে চোখ মেলে ফর্সা আলো না দেখে
ঘুমিয়ে পড়ছিলাম নিয়মিত বিরতিতে...


ঢাকা
৯ এপ্রিল, ২০০৮

ফেইসবুকে যোগ করুন

তুমি নেই

ঘুম ভেঙে দেখি
তুমি নেই।
তুমি যে নেই, এই সত্যটি প্রতিদিনই ভুলে যাই;
তাই প্রতিভোরে জেগে উঠে কষ্ট পাই,
ভাবি, তুমি পাশে নেই।

তুমি নেই তুমি নেই,
শত বার প্রার্থনা শ্লোকের মত আওড়াই,
যেমন স্কুল জীবনে পরীক্ষায় আসবেই - প্রায় নিশ্চিত অনুমানে
গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর মুখস্থ করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করতাম।

হায়, বৃথাই পন্ডশ্রম!
রাত শেষে ঘুম ভাঙলে
পরবর্তী ভোরের আগেই ভুলে যাওয়ার জন্য
মনে পড়ে, তুমি নেই, পাশে নেই।



- - -
মাইজদী, নোয়াখালী
২৯ মার্চ, ২০০৮


ছবি সূত্র

ফেইসবুকে যোগ করুন

ফিরবো না আর

এতদিন পর যদি সুমতি হয়
তবে নিশ্চিত জেনো, ফিরে আসার বন্ধুর পথ পেরিয়ে
ঠিক পৌছে যাবো তোমার দরজায়।
টোকা মেরে তিনবার
পৌছে দেবো আগমনী বার্তা আমার।

যদি এরই মাঝে
গড়ে নিয়ে থাকো অলঙ্ঘনীয় চৌকাঠ;
আমি প্রাচীন পারাবারে হেঁটে বেড়াবো
মানুষ আবিষ্কারের খোঁজে,
ভালোবাসাহীন দেশে ফিরবো না আর
নির্মোহ মিশে যাবো প্রান্তিক জনারণ্যে।

পাললিক মন ছুঁয়ে গেলে ধ্যানমগ্ন সিদ্ধার্থের শরীর
কসম মাটির, ফিরবো না আর...



২৮ মার্চ, ২০০৮

ফেইসবুকে যোগ করুন

শুক্রবার, ২৮ মার্চ, ২০০৮

অবসরের অসতর্কতায়

সূর্য দিনের যাত্রা শুরুর অনেক পরে
আমার ঘুম ভাঙে।
বিরতিহীন ব্যস্ত দিনের শুরু
বিড়ালের মত রাজকীয় আড়মোড়া ভেঙে;
আলসেমি কাটিয়ে পুকুরের জলে সাঁতার,
নাশতার টেবিলে টুকটাক সাংসারিক আলাপ
শেষে মাসকাবারি কামলা দিতে দিই ছুট।
কাজের ফাঁকে চায়ের কাপে চুমুক,
মনিটরে সতর্ক চোখ, কিবোর্ডে আঙুলের নাচন,
ফাঁকে ফাঁকে মুঠোফোনে ফরমায়েশি আলাপচারিতা,
ন'টা-পাঁচটা'র বাধ্যবাধ্যকতা শেষে
ঢু মেরে যাওয়া প্রতিদিনকার আড্ডায়;
তামাকের ধোঁয়ায় উড়ে যায় বিচ্ছিন্ন আবেগ।
তারপর একই পথে বাড়ী ফেরা, মায়ের খোঁজখবর;
এরপর আন্তর্জালের ঘরে হাসি কান্না সুখ দূঃখের বিনিময়
শেষে ক্লান্ত দু'চোখ যখন ধৈর্য্যের শেষ সীমায়,
ঢুলু ঢুলু চোখে মশারি খাটিয়েই গা এলিয়ে দেয়া বিছানার আদরে।

দিনের ব্যস্ততার চক্রে এক সেকেন্ডও অবসর খুঁজি না,
পাছে মুহুর্তের অবসরের অসতর্কতায় তুমি
ঢুকে পড়ো মনের ঘরে!



নোয়াখালী
২৭ মার্চ, ২০০৮

ফেইসবুকে যোগ করুন

সে আর আমি

সে আর আমি- একসাথে চলি
সে আর আমি- একসাথে হাসি
সে আর আমি- একসাথে কাঁদি
সে আর আমি- একসাথে জ্বলি।

সে আর আমি- পর্দা সরাই
সে আর আমি- ব্যবধান কমাই
সে আর আমি- খুব কাছাকাছি
সে আর আমি- দুই ধনুক ব্যবধানে দাঁড়াই

সে আর আমি- তবু অচেনা!



১৬ মার্চ ২০০৮

ফেইসবুকে যোগ করুন

কে হে তুমি বালিকা

রাস্তায় দাঁড়িয়ে আনমনে
তাকাও এদিক ওদিক।
যেন অপেক্ষমান তীব্র প্রতীক্ষায়,
কোন যুবকের বাহুডোরে
সমর্পণের আকাঙ্খায় ব্যাকুল;
রোদের তীব্রতায় ভ্রুকুটি হেনে
দৃঢ়তায় দাঁড়িয়ে আছো।

বখাটের অযাচিত আক্রমনের নেই ভয়,
রাস্তায় হাজার জনতার ভীড়েও অসচেতন,
খেয়াল নেই কে এসে আড়চোখে চেয়ে যায়।
অস্থিরতা কুরে কুরে খায় তোমাকে
এক মিনিট দু’মিনিট করে ঘন্টাধ্বনি বাজলো প্রায়।

যুবক কি আজ আটকা পড়েছে
পথের অনিশ্চয়তায়?
যুবক কি ভুলেছে প্রতীক্ষার মাসগুলো শেষে মিলনের দিনক্ষণ?
ভীষণ প্রতীক্ষায় আনমনে দাঁড়িয়ে আছো;
কুমারী সলাজ চোখের গভীরে
অচেনা যুবকের প্রতি প্রগাঢ় মায়ার ছায়া।

জানি ভুল করে ধরা পড়ে গেলে চোরা চাহনি
কুঁকড়ে উঠবে ভীষণ।
লজ্জাবতীর চেয়েও দ্রুততায় গুটিয়ে যাবে,
ঢেকে ঢুকে রাখবে কোমল সৌন্দর্যের আলোকিত বিচ্ছুরণ।

তোমার চোখের ছায়ায় টের পাই,
আকাঙ্খিত সেই যুবকের প্রতি ইস্পাত কঠিন বিশ্বাস;
যুবক আসবেই নিশ্চিত জেনে দাঁড়িয়ে থাকো স্থির।

তবু নির্লজ্জ মন জিজ্ঞেস করে বারে বারে--
কে হে তুমি বালিকা?
ছুঁয়ে যাও আলতো করে!


নোয়াখালী
১৪ মার্চ ২০০৮

ফেইসবুকে যোগ করুন

নাকফুল












গত ঈদে সালোয়ার কামিজ কিনে দিতে চাইলাম,
নিলে না;
ব্রেসলেট দিতে চাইলাম
তাও না।
শেষমেষ নিলে একজোড়া সাদা পাথরের কানের দুল,
নকল হীরের দ্যূতি ছড়ানো;
খুব বেশি দামী কিছু নয়, একদিনের রোজগার।

ইচ্ছে ছিলো খুব শীঘ্রই কিনে দেবো
আশ্চর্য সুন্দর একটি নাকফুল
তোমার পছন্দের,
হোক না যতই দামী,
হোক না কয়েক মাসের বেতন সমান,
হোক না দূর্লভ;
এ দোকান সে দোকান ঘুরে
সময় নিয়ে ঠিকই খুঁজে বের করতাম।

ইচ্ছে ছিলো খুব শীঘ্রই তোমাকে কিনে দেবো
আশ্চর্য সুন্দর একটি নাকফুল।
তোমাকে নাকফুল কিনে দেয়া আর হলোনা...



নোয়াখালী
১২ মার্চ ২০০৮

ফেইসবুকে যোগ করুন

নিঃসঙ্গতায় ছুঁই

করুণাময় নই
দয়াময় নই
নই প্রেমিক
নই শাস্তিদাতা।

সর্বজ্ঞাতা নই
সর্বশ্রোতা নই
নই রক্ষাকারী
নই শান্তিদাতা।

তোমায় রুপে ছুঁই না
অরুপে ছুঁই না
সাকারে ছুঁই না
নিরাকারে ছুঁই না
তোমায় কেবল নিঃসঙ্গতায় ছুঁই।

হে পরম নিঃসঙ্গ,
তোমায় কেবল নিঃসঙ্গতায় ছুঁই...


৩ মার্চ ২০০৮

ফেইসবুকে যোগ করুন

নিভৃত আকাশে

প্রভাকরের বিকীর্ণ আলোয় উজ্জ্বল পৃথিবী,
নিস্তরঙ্গ পুকুরের ফ্রেমে আবদ্ধ নীলাকাশ,
বাসন্তী হাওয়ায় উচ্ছল গাছগাছালি,
- এই সব নৈসর্গিক স্বাভাবিকতায়
তোমার আগমন হঠাৎ করেই।

সাইমুম ঝড়ের মত তুমি এলে- দূর্নিবার – অদম্য;
সাধ্য কি আমার তোমাকে রুখার!

তুমি এলে এবং আমার সমস্ত কিছু পাল্টে গ্যালো এক লহমায়।
আগের মত চলতে পারি না,
আগের মত ভাবতে পারি না।

আমার তন্দ্রাচ্ছন্ন চেতনা তোমার স্পর্শে প্রাণ ফিরে পায়;
আমার কাব্যের আকাশে তুমি যেন অবাক সূর্যোদয়!

আমার বোধের আলো আঁধারীতে এতদিন
মাতৃগর্ভে ঘুমন্ত শিশুর মত ছিলো যে কবিতারা,
তোমার সযত্ন উৎসাহে তারা ভূমিষ্ট হয় আমার লেখনীতে।
আমার কাব্য পূর্ণতা পায় তোমার প্রেরণায়।

এত যে ওলট-পালট, এত যে পূনর্নিমান আমার জীবনে যে তোমার জন্য,
সে তুমি জানোই না – তুমিই এর কারণ।
তবুও তুমি আছো ধ্রুবতারার মত বিরাজমান
আমার নিভৃত আকাশে।।



নোয়াখালী
২৬.২.১৯৯৭

-------------------------------------------------
* ড্রয়ার ঘাটতে গিয়ে আজ অনেক বছর আগের দিন তারিখসহ কিছু লেখা পেলাম। এই লেখাটি তারই একটি। তখন এইচএসসি ১ম বর্ষে পড়তাম।

ফেইসবুকে যোগ করুন

জানালার পাশে


পর্দা উঠালেই সবুজ গাছের সারি,
নারিকেল সুপারি থোকা থোকা;
কচি লাউয়ের ডগায়
কুমড়োর ফুলে পতঙ্গের উড়াউড়ি।

চেনা অচেনা ঘাসফুলেদের সমারোহে
সতেজ হয়ে উঠে সদ্য ঘুম ভাঙ্গা নিস্তেজ চোখ।

পাশেই ছোট্ট পুকুরে মাছেদের ক্লান্তিহীন ছুটোছুটি,
কাক চক্ষু জলে লাল পদ্মের হাসি;
কখনো ত্রস্ত প্রজাপতি এসে ছুঁয়ে যায়
বর্ণীল আলোকোচ্ছটায়।
নরম রোদের আদরে ভুলে যাওয়া
শীতার্ত রাতের স্মৃতি।

এইসব যান্ত্রিক চাওয়া পাওয়া
এইসব ভোগের উচ্ছিষ্টের ভীড়ে
স্বপ্নহীন দু’চোখ যখন ক্লান্ত হয়,
জানালা খুলে দিই
পাখির চোখে স্বপ্ন আঁকি।

ভালো আছি, বেশ ভালো আছি...


নোয়াখালী
৭ মার্চ, ২০০৮

ফেইসবুকে যোগ করুন

দৃষ্টি


দৃষ্টিতে তার বিষ ছিলো,
আমি পান করেছি, খুন হয়েছি।


তবুও আমার মৃত চোখে
শুধুই তোমার স্বপ্ন দেখি
রাত্রি দিনে জগৎ ভুলে
তোমার ধ্যানেই মগ্ন থাকি।

ফেইসবুকে যোগ করুন

শনিবার, ২২ মার্চ, ২০০৮

নদীগর্ভে বিলীন পুরনো শহর নোয়াখালী


নোয়াখালীতে কেউ বেড়াতে এলে অবাক হয় জেলা শহরের নাম শুনে। বাংলাদেশে নোয়াখালীই একমাত্র জেলা, যার জেলা শহরের নাম জেলার নামে নয়। নোয়াখালী’র জেলা শহরের নাম মাইজদী। কেন নোয়াখালী’র জেলা শহরের নাম মাইজদী হলো তা জানতে হলে পিছনের ইতিহাস জানতে হবে।

নোয়াখালী জেলার পত্তন হয় ১৮২১ সালে। বৃটিশ প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ ১৮২২ সালে নোয়াখালীর জন্যে একটি জয়েন্ট ম্যাজিস্ট্রেটের পদ সৃষ্টি করে। একজন স্বতন্ত্র কালেকটর নিযুক্ত হয় ১৮৩০ সালে। জেলা হিসেবে নোয়াখালী পূর্ণ মর্যাদা লাভ করে ১৮৭৬ সালে। ঐ বছরেই নোয়াখালীতে একজন সেসন জজ ও সিভিল জজ নিয়োগ করা হয় এবং প্রথম পৌরসভা গঠিত হয়। সুধারাম মজুমদার নামে এক ব্যক্তির দানকৃত স্থানে শহরটি স্থাপিত হয়েছিল বলে প্রথম থেকেই এই শহর সুধারাম নামে পরিচিতি লাভ করে।
নোয়াখালী শহরের ইতিহাস ভাঙা গড়ার ইতিহাস। কথায় বলে,
“ভাঙ্গা-গড়া চোরাবালী
তার নাম নোয়াখালী”
চল্লিশের দশকে নোয়াখালী অনেক ছোট ছিলো। শহরটি আরো দক্ষিণে বিস্তীর্ণ অঞ্চল নিয়ে গড়ে উঠেছিলো। কালক্রমে নদী ভাঙনের ফলে উত্তরে সরে আসে। নদী ভাঙনের ফলে কালক্রমে নোয়াখালীর মূল শহরটি উত্তরাংশ অর্থাৎ সোনাপুর হতে কিছুটা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

নোয়াখালী শহর নদীগর্ভে বিলুপ্তির কাজটি ত্বরান্বিত করে নোয়াখালী খাল। সাগরের প্রবল জোয়ার এই খালটির মধ্যদিয়ে এসে জেলার তীরবর্তী এলাকায় প্রচন্ডভাবে আঘাত হানতো। নদীর ভাঙন যখন সর্বগ্রাসী মূর্তি ধারণ করে নোয়াখালী শহরকে গ্রাস করতে উদ্যত ঠিক সে সময়ে দীর্ঘ প্রবাস জীবনযাপনের পর সুধারামে ফিরে এসেছিলেন খ্যাতনামা ইঞ্জিনিয়ার ওবায়দুল্লাহ। নদীর ভাঙন থেকে নোয়াখালী শহর তথা সুধারামকে রক্ষার জন্য তিনি বিভিন্ন পর্যায়ে দেন দরবার শুরু করেন। কিন্তু ততকালীন সরকার বাঁধ দিয়ে শহর রক্ষা করা সম্ভব নয় বলে অভিমত প্রদান করলে জনাব ওবায়দুল্লাহ নিজ উদ্যোগে ও অর্থব্যয়ে কয়েক হাজার শ্রমিকের সাহায্যে মন্তিয়ারঘোনার মুখে একটা বিরাট বাঁধ নির্মান করেন। জনাব ওবায়দুল্লাহর মৃত্যুর পর নানা কারণে সেই বাঁধের রক্ষণাবেক্ষণের কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। আর তাই অচিরেই জাঁকজমকপূর্ণ বর্ধিষ্ণু এ শহরটি তার সকল এতিহ্য নিয়ে ক্ষুদ্ধ মেঘনার করাল গ্রাসে বিলীন হয়ে গেলো। নদী ভাঙনের পর সোনাপুর থেকে দত্তের হাট পর্যন্ত পুরনো শহর তথা পৌরএলাকার ভগ্নাংশটুকুই অবশিষ্ট রইলো।

কালিতারা বাজারের কাছে মিউনিসিপ্যালিটির যে শেষ লাইটপোস্ট ছিলো, ঠিক ওখানে গিয়েই নদীর ভাঙনটা বন্ধ হয়ে গেলো। বিচ্ছিন্ন উপকূল হিসেবে সোনাপুর রক্ষা পেলো। আর মূল শহরটা শুধু পৌরসভা সীমারেখা বরাবর বিলুপ্ত হয়ে গেলো।

১৯২২ থেকে ১৯৩২ এবং ১৯৪৮ থেকে পর্যায়ক্রমে মোট চারদফা ভাঙনের পর নোয়াখালী শহরটি তার বাগ-বাগিচা এবং দর্শনীয় সৌধমালাসহ চিরকালের মতো হারিয়ে যায় ভূ-পৃষ্ঠ থেকে।

পুরনো শহর নদী গর্ভে বিলুপ্ত হওয়ার পর ১৯৫০ সালে জেলার সদর দপ্তর অস্থায়ীভাবে মাইজদীতে স্থানান্তর করা হয়। পুরনো শহরের নদী ভাঙা মানুষগুলো তাদের বাড়ী-ঘর, দোকান-পাট, ব্যবসা-বাণিজ্য ও সহায় সম্পত্তি সবকিছু হারিয়ে বাঁচার আশায় মাইজদীতে কোন রকম মাথা গোঁজার মত ঠাঁই করে নেয়। ক্রমান্বয়ে এখানে বসতি ও জনপদ গড়ে উঠে। ১৯৫৩ সালে শহরের পুরনো এলাকা কালিতারা, সোনাপুর ও মাইজদীসহ কাদির হানিফ ইউনিয়নের কয়েকটি মৌজা নিয়ে গেজেট বিজ্ঞপ্তিতে নোয়াখালী পৌর এলাকা ঘোষণা করা হয়। কিন্তু সুদীর্ঘ প্রায় একযুগ পর্যন্ত মাইজদীকে নোয়াখালী জেলার সদরদপ্তর হিসেবে সরকারিভাবে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়টি বিতর্কিত অবস্থায় ছিলো। অবশেষে ১৯৬২ সালে মাইজদীকে নোয়াখালী জেলার স্থায়ী সদর দপ্তর হিসাবে সরকারিভাবে স্বীকৃতি দেয়া হয়।

নদী এখন আর কাছে নেই। চর পড়তে পড়তে দক্ষিণে সরে গেছে চল্লিশ কিলোমিটারের ও বেশি। নদীগর্ভ থেকে জেগে উঠেছে বিশাল চরাঞ্চল। নতুন করে গড়ে উঠেছে জনবসতি। কিন্তু সাথে নিয়ে গেছে আদি নোয়াখালী শহরের সবকিছু। শুধু স্মৃতিটুকুই আছে। 

সহায়ক প্রবন্ধসমূহ:
নোয়াখালী পৌরসভা পরিক্রমা: মোহাম্মদ শামছুল আলম
নোয়াখালীর ঐতিহাসিক ও ভূতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য: সানাউল্লাহ নূরী
মেঘনা গর্ভে নোয়াখালীর প্রাচীন শহর: সালাদিন
স্মারকগ্রন্থ “নোয়াখালী": নোয়াখালী পৌরসভা
ছবি: উইকিপিডিয়া

ফেইসবুকে যোগ করুন

শুক্রবার, ২৯ ফেব্রুয়ারী, ২০০৮

ধেয়ে আসছে তোমার দিকে


উ হু! এরকম সাপের মত পেঁচিও না;
চুপচাপ দাঁড়াও, ঠিক মৌন সন্যাসীর মত।
তোমার চোখযুগল এখনো তিরতির করে কাঁপছে।
চোখ বন্ধ কর, স্থির হও;
চিবুকটা তুলে ধরো সামান্য।
হু, এবার ঠিক আছে;
লক্ষ্ণী মেয়ের মতো আচরণ!
এভাবেই থেকো আরো কিছুক্ষণ।
জানোই তো, পালাতে পারবেনা,
ঠেকাবার কোন উপায় নেই-
সহস্র চুম্বন ধেয়ে আসছে তোমার দিকে...




নোয়াখালী
২৮ ফেব্রুয়ারি ২০০৮

ফেইসবুকে যোগ করুন

বেগমগঞ্জ কালো পুলের বধ্যভূমি

মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের ৩১ তম বার্ষিকী পালিত হয়ে গেল গত ১৬ ডিসেম্বর ২০০২। তারই প্রাক্কালে নোয়াখালী’র মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর নৃশংসতার একটি অকথিত কাহিনী নিয়ে তথ্য অনুসন্ধানের জন্য ছুটলাম নোয়াখালী জেলা সদর থেকে ৬ কিলোমিটার উত্তরে বেগমগঞ্জ চৌরাস্তায়। সেখানে কালের স্বাক্ষী চৌরাস্তা “কালো পুল” যা বর্তমানে পাকা ব্রিজ। তারই দক্ষিণে তথা চৌরাস্তা সংলগ্ন বেগমগঞ্জ টেকনিক্যাল হাই স্কুল। এই উভয় স্থানই ছিল মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাসে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী এবং তাদের দোসর রাজাকার আলবদর বাহিনীর মানবতা বিরোধী জঘন্য হত্যাযজ্ঞের কেন্দ্র। সেখানে আজও নির্মিত হয়নি কোন স্মৃতি ফলক। স্বীকৃতি পায়নি বধ্যভূমির। এই স্থানের মাটির গভীরে আজও আছে অসংখ্য নারী পুরুষের গণ কবর। সেই গণকবরে গুমরে কাঁদে শহীদের আত্মা। আমরা কেউ কখনও তার খবর রাখিনি। মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাসে নিরপরাধ মানুষকে হত্যার রোমহর্ষক বিবরণী তথা হারিয়ে যাওয়া ইতিহাসকে লোকচক্ষুর সামনে নিয়ে আনার চেষ্টা থেকে এ তথ্যানুসন্ধান।

একাত্তরের ২৬ মার্চ পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী ঢাকায় গণহত্যা শুরু করার পর ২২ এপ্রিল দুপুর পর্যন্ত নোয়াখালী জেলা ছিলো হানাদার মুক্ত। ২২ এপ্রিল বিকেল ৫টায় ৬০-৭০ টি যান্ত্রিক বহর নিয়ে পাকিন্তানী সামরিক কনভয় কুমিল্লা-লাকসাম-সোনাইমুড়ি হয়ে বেগমগঞ্জের মীরওয়ারিশপুর গ্রাম জ্বালিয়ে পুড়িয়ে চৌরাস্তা অভিমুখে রওয়ানা হয়।ঐ দিনের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সে সময়ের মিরওয়ারিশপুর গ্রামের তরুণ যুবক বর্তমানে আইনজীবী এবিএম ফারুক (৫০) বলেন, "ঐ দিন পাকবাহিনী বেচার দোকান সংলগ্ন আমাদের পৈত্রিক বাড়িতে অবস্থানরত আমার বাবা জনাব ফরিদ মিয়া (টিটি) এবং আমার ভাই মোঃ ফয়েজকে ব্রাশফায়ারে হত্যা করে। আমি তখন বাড়ির অদূরে লুকিয়ে ঐ হত্যাযজ্ঞ প্রত্যক্ষ করি। এর পর পাকবাহিনী কালো পুল অভিমুখে রওয়ানা হয়। পুলের সন্নিকটে এসে পাক সামরিক কনভয় থমকে দাঁড়ায়। পাক সামরিক কনভয় আসার আগেই স্থানীয় জনসাধারণ কালো পুল ধ্বংস করে দেয়। এতে উত্তর দক্ষিণের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পাক সামরিক কনভয় চৌরাস্তায় আসার পথে কালো পুলের দক্ষিণ প্রান্তে একটি প্রতিরোধ যুদ্ধের সম্মুখিন হয়। সেই প্রতিরোধ যুদ্ধের নেতৃত্ব দেয় শহীদ সালেহ আহম্মদ, জহিরুল ইসলাম, পিন্টু প্রমুখ। ঐ পাক সামরিক শক্তির নিকট পরাভূত হয়ে প্রতিরোধ যুদ্ধ স্তিমিত হলে পাক সামরিক বাহিনী ঝুলন্ত সেতু নির্মান করে সন্ধ্যা নাগাদ কালো পুল অতিক্রম করে বেগমগঞ্জ টেকনিক্যাল হাই স্কুলে অবস্থান নিয়ে ক্যাম্প স্থাপন করে।"

একাত্তর এর ৯ মাসে অনেক ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সেদিনের মিরওয়ারিশপুর গ্রামের কিশোর সারোয়ার আলম (৪৫) জানান, “বেগমগঞ্জ টেকনিক্যাল হাই স্কুলের ক্যাম্পে পাকিন্তানী হানাদার বাহিনীর কমান্ডিং অফিসার ছিলো মেজর বোখারী। এই ক্যাম্পটি ছিলো পাকিস্তানী সামরিক বাহিনীর নোয়াখালী জেলার মূল ঘাঁটি।“

একাত্তর এর টগবগে যুবক আবদুস সোবাহান বর্তমান বয়স ৬৫ বছর। বাড়ি চৌরাস্তা সংলগ্ন নাজিরপুর গ্রামে। একাত্তরের পুরো নয় মাস আবদুস সোবাহান চৌরাস্তার কালো পুলের পূর্ব পার্শ্বের বেহাল জালে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতো। তখন কালো পুল, কাঠের পুল ছিলো অনেকটাই ভাঙ্গাচোরা। তার পাশেই নির্মিত হয়েছে বর্তমানের পাকা ব্রিজ। আবদুস সোবাহান বলেন, “পাক সামরিক বাহিনী টেকনিক্যাল হাই স্কুলে ক্যাম্প স্থাপন করার পর পরেই মাইজদী থেকে ৫ জন নিরপরাধ স্বাধীনতাকামী বাঙালীকে ধরে এনে কালো পুলের উপরে দাঁড় করিয়ে ব্রাশ ফায়ার করে। একজন সৌভাগ্যক্রমে সেদিন বেঁচে যান। এভাবে পাক হানাদার বাহিনী এ অঞ্চলে নিরপরাধ মানুষ হত্যা শুরু করে।মুক্তিযুদ্ধের পুরো নয় মাসে প্রতিদিন কালো পুলে সর্বনিম্ন ৫/৬ জন ও সর্বোচ্চ ১৫/২০ জন করে মানুষ হত্যা করতো পাকিস্তানী সৈন্যরা। নানা নিষ্ঠুর পন্থায় ওরা হত্যাযজ্ঞে মেতে উঠতো। নোয়াখালী জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে নিরপরাধ মানুষগুলোকে ধরে এনে প্রথমে টেকনিক্যাল হাই স্কুল ক্যাম্পে শারীরিক নির্যাতন করা হোত- তারপর প্রতিদিন সন্ধ্যার পর কালো পুলের উপর দাঁড় করিয়ে বুলেট বেয়নেটে ঝাঁঝরা করা হতো। এভাবেই চলতো স্বাধীনতাকামী নিরপরাধ মানুষদের উপর মানবতাবিরোধী জঘন্য হত্যাযজ্ঞ। বুলেট বেয়নেট এ ঝাঁঝরা হওয়ার পর লাশগুলো ওয়াপদা খালের পানি খুন রাঙা রঙে রাঙিয়ে ভাসতে ভাসতে পশ্চিমে চলে যেতো। এই টেকনিক্যাল হাই স্কুলের ক্যাম্পেই নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় চৌমুহনী কলেজের প্রাক্তন প্রধান করণিক মিরওয়ারিশপুর গ্রামের গুলজার হোসেনকে।“

মুক্তিযুদ্ধের পুরো নয় মাস এভাবেই হাজার হাজার নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করে অবশেষে ডিসেম্বর ৫-৬ তারিখে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী তাদের নিশ্চিত পরাজয় জেনে টেকনিক্যাল হাই স্কুলের ক্যাম্প গুটিয়ে লাকসাম হয়ে কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট অভিমুখে চলে যায়। কিন্তু তারা রেখে যায় সেখানে অনেক নৃশংসতার চিহ্ন। বহু নারীর সম্ভ্রম হারানোর অব্যক্ত কান্না। অসংখ্য মৃত-অর্ধমৃত নর নারীর কঙ্কালসার দেহ।




► লেখক: গোলাম আকবর, সদস্য সচিব, নোয়াখালী মানবাধিকার জোট
► নোয়াখালী জেলা প্রশাসন কর্তৃক প্রকাশিত স্মারক স্বাধীনতা ২০০৩ থেকে নেয়া হয়েছে। প্রকাশকালঃ মার্চ ২০০৩।

ফেইসবুকে যোগ করুন

যদি বলতে


যদি বলতে আমাকে ঘৃণা কর,
খুব দূঃখ পেলেও
হয়তো চোখের মধ্যে নিস্পৃহ আলো এনে
কাল্পনিক সুখে মুখে হাসি নিয়ে
ফিরতি পথ ধরতাম।

যদি বলতে ভালোবাসি,
তাহলেতো মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন!

হায়, কিছুই বললেনা তুমি!

ফেইসবুকে যোগ করুন

আগামী শীতে


আমার সব ব্যাপারেই খুব আলসেমি।
এই যেমন, শীতের দিনে ঠোঁটে ভ্যাসলিন লাগাতেও আলসেমি।
প্রতি শীতে ঠোঁট ফেটে একাকার।

তোমার আবার ভীষণ উল্টো,
কি শীত কি গ্রীষ্ম
দশ মিনিট পর পরই ভ্যাসলিনে ঠোঁট ভেজানো চাই।
তোমার নরম অধর সযত্ন চর্চায়
আরো নরম তুলতুলে হয়ে উঠতো।
আমি চুম্বনের বাহানায় ঠোঁটে ঠোঁট রেখে উষ্ঞতা নিতাম,
উপরি পাওনা আদরের স্মৃতি হয়ে লেগে থাকা ভ্যাসলিনের কিয়দংশ।
তাই গত শীতে অসহ্য শৈত্য প্রবাহের কালেও
ঠোঁট ফাটেনি।

একটি চুম্বনের জন্য অবলিলায়
শত মাইল পাড়ি দিয়েছি গত শীতে;
বিনিময়ে পেয়েছি ঠোঁট ফাটার যন্ত্রণা থেকে মুক্তি।

এখন তোমার আমার ব্যবধান হাজার আলোকবর্ষ।
তাই এই শীতে আমার আবার ঠোঁট ফেটেছে।

আগামী শীতে পারবো কি তোমাকে ছুঁতে?



নোয়াখালী
১৪.২.২০০৮

ফেইসবুকে যোগ করুন

সবকিছুই বড় বেশি প্রাণহীন


সবকিছু বড় বেশি প্রাণহীন।
ঘুম থেকে জেগে উঠা,
চলাফেরা, ঘুড়ে বেড়ানো এদিক ওদিক,
নাগরিক পুনরাবৃত্তির চক্রে ঘুরপাক।

রাস্তায় বিকট দানব, হাইড্রোলিক শব্দের চাবুক;
এতটুকুও স্বস্তি নেই। হাসি হাসি মুখগুলো ছাড়িয়ে
সারিবদ্ধ মৃত চোখেদের
পাশ কাটিয়ে যাওয়া নিত্যদিন।

ধুলো জমা পুরোনো কবিতার খাতা
যেন প্রাচীন প্যাপিরাসের বুকে লেখা অভিশাপনামা –নিজেই লিখে রাখা নিজস্ব নিয়তি’র নির্দেশনা ।

প্রাণহীন আড্ডায় পুরোনো স্মৃতির জাবরকাটা
বিষাদের অতলান্তে ডুব ডুব খেলা।

দিনের চক্র শেষে ঘরে ফেরা একই কায়দায়,
একই ভঙ্গিতে নিজস্ব কবরের আঁধারে গুটিশুটি মেরে ঘুম – মৃতের মতো;
মৃতের শহরে আলোকিত আঁধারে আবারো জেগে উঠা প্রতিদিন...

সবকিছুই বড় বেশি প্রাণহীন!



নোয়াখালী
৫ ফেব্রুয়ারি ২০০৮

ফেইসবুকে যোগ করুন

পতিত ভিটায়


মানুষ হলেই অতীত থাকে
গত সময়ের স্মৃতি থাকে
আমার কোন স্মৃতি নেই
অষ্ট প্রহর কষ্টে পোড়ার শোক নেই।

ভালোবাসলেই সুখ থাকে
সুখের অনেক প্রাপ্তি থাকে
আমার কোন সুখ নেই
সুখের পাশে প্রাপ্তির ঘর ফাঁকাই থাকে।

ঘর থাকলেই ছাউনি থাকে
শ্যামল বরণ নারী থাকে
আমার চৌকাঠ ঠুনকো ঘুনে
পতিত ভিটায় নীলচে রঙা শ্যাওলা জমে।

ফেইসবুকে যোগ করুন

চন্দ্রগঞ্জ ও সোনাইমুড়ির মুক্তিযুদ্ধ - সত্যেন সেন


মুক্তিবাহিনীর গোয়েন্দা বিভাগের চর এসে সংবাদ দিল, সামরিক ভ্যান বোঝাই একদল পাকিস্তানি সৈন্যরা ফেনী থেকে চন্দ্রগঞ্জের দিকে আসছে। ওদের যখন চন্দ্রগঞ্জের দিকে চোখ পড়েছে, তখন ওরা সেইখানে লুটপাট না করে ছাড়বেনা। খবর পেয়ে লাফিয়ে উঠলেন সুবেদার লুৎফর রহমান। বেঙ্গল রেজিমেন্টের লুৎফর রহমান, যিনি এই অঞ্চলে একটি মুক্তিবাহিনী গঠন করেছিলেন। সৈন্যদের সংখ্যা পঞ্চাশ-ষাটজনের মত হবে। এদের প্রতিরোধ করতে হোলে দলে কিছুটা ভারী হয়ে নেওয়া দরকার। খোঁজ-খবর করে অল্প সময়ের মধ্যে মাত্র ছয়জন মুক্তিযোদ্ধাকে জড় করা গেল।

সাতজন মানুষ, সাতটি রাইফেল-এই সামান্য শক্তি নিয়ে ওদের সঙ্গে মোকাবেলা করতে যাওয়াটা ঠিক কি? মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে একজন এই প্রশ্নটা তুলেছিলেন। কথাটা মিথ্যা নয়- এটা একটা দূঃসাহসের কাজ হবে। অথচ হাতে সময় নেই। মুক্তিবাহিনীর শক্তি বৃদ্ধি করার জন্য যে সময়ের প্রয়োজন, তার মধ্যে এই লুন্ঠনকারী দস্যুরা এদের কাজ হাসিল করে সরে পড়বে। চোখের সামনে এই ঘটনা ঘটে যাবে আর তারা বসে বসে তাই দেখবে। না, কিছুতেই না, গর্জে উঠলেন সুবেদার লুৎফর রহমান, যেভাবেই হোক এদের প্রতিরোধ করতেই হবে। আমাদের চোখের সামনে দিয়ে ওরা অক্ষতভাবে হাসতে হাসতে চলে যাবে, এ কিছুতেই হতে পারেনা। ওরা আমাদের রক্ত নিয়েছে, তার বিনিময়ে ওদেরও কিছুটা রক্ত দিতে হবে।

রাস্তার ধারে একটা বড় রকমের ইটের পাঁজা। কে যেন কবে একটা দালান তোলবার জন্য এখানে এই ইটগুলি এনে জড় করে রেখেছিলো, অনেকদিন হয়ে গেল, সেই দালান এখনো গাড়ীগুলিকে এই রাস্তা দিয়েই যেতে হবে। সুবেদার লুৎফর রহমান আর ছয়জন মুক্তিযোদ্ধা, সেই ইটের পাঁজার পেছনে পজিশন নিয়ে দাঁড়ালেন। এখান থেকেই তাঁরা সেই হামলাকারী দস্যুদের প্রতিরোধ করবেন, এটা খুবই দূঃসাহসের কাজ তাঁরা জানতেন, তাঁরা তাঁদের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে চলেছেন। কিন্তু এমন এক একটা সময় আসে যখন জেনে শুনে বিপদের মুখে ঝাঁপিয়ে পড়তে হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের জীবন-মৃত্যু পায়ের ভৃত্য চিত্ত ভাবনাহীন। অবস্থা বিশেষ বামন হয়েও তাঁদের দানবের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ করতে হয়। মুক্তিবাহিনীর সুবেদার লুৎফর রহমান বললেন, এখনকার অবস্থা হচ্ছে তেমনি এক অবস্থা। কিন্তু বেশী কথা বলার সময় ছিল না। দূর থেকে অস্ফুট সামরিক ভ্যানের গর্জন শোনা গেলো। ঐ যে, ঐ যে আসছে। ওরা! তাঁরা সাতজন সাতটি রাইফেল নিয়ে তৈরী হয়ে দাঁড়ালেন। সেই অস্ফুট আওয়াজ ক্রমেই স্পষ্ট থেকে স্পষ্টতর হয়ে উঠতে লাগলো। তারপর একটু বাদেই দেখা গেলো সামরিক ভ্যান পথের ধুলো উড়িয়ে দ্রুতবেগে ছুটে আসছে। উত্তেজিত প্রতীক্ষায় তাঁদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলি যেন ইস্পাতের মত দৃঢ় আর কঠিন হয়ে এল।

সামরিক ভ্যান দ্রুত আসতে আসতে হঠাৎ থেমে গেলো। না থেমে উপায় ছিল না, কাদের অদৃশ্য হস্তের গুলিতে গাড়ির টায়ারের চাকা ফুটো হয়ে গেছে। একই সঙ্গে কতগুলি রাইফেলের আওয়াজ। বিস্ময়ে, আতঙ্কে সৈন্যরা ঝুপঝাপ করে গাড়ী থেকে লাফিয়ে রাস্তায় নেমে পড়লো। কিন্তু সেই অদৃশ্য হস্তের গুলিবর্ষণের যেন শেষ নেই। সৈন্যদের মধ্যে যারা সামনের দিকে ছিল, তাদের মধ্যে অনেকে হতাহত হয়ে ভূমিশয্যা নিল। একটু বাদেই রাইফেলের আওয়াজ থেমে গিয়ে পল্লী-প্রকৃতির নিস্তবদ্ধতা আর শান্তি ফিরে এল। সৈন্যরা সন্ধানী দৃষ্টি নিয়ে তন্ন তন্ন করে চারদিক পরীক্ষা করে দেখতে লাগলো। অদৃশ্য শত্রুরা কি তবে ভয় পেয়ে পালিয়ে গিয়েছে? না, ওদের বিশ্বাস নেই, একটু বাদেই হয়তো ওরা আরেক দিক থেকে আক্রমণ করে বসবে। রাস্তার দু'পাশে অনেক ঝোপঝাড় জঙ্গল। তাদের মাঝখানে ওরা কোথায় আশ্রয় নিয়ে বসে আছে কে জানে। তবে দলে ওরা ভারী সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। তা না হলে তাদের বিরুদ্ধে এমন করে হামলা করতে সাহস পেত না।

চন্দ্রগঞ্জ সমৃদ্ধ অঞ্চল। এখানে এসে অবাধে লুটপাট করা যাবে, এই আশা নিয়ে তারা এখানে এসেছিল। এই অঞ্চলে তাদের একজন দালাল ছিল। তার কাছ থেকে খবর পেয়েই তারা লুটের আশায় এখানে ছুটে এসেছে। তারা শুনেছিলো এখানে তাদের 'বাধা' দেবার কেউ নেই। কিন্তু হঠাৎ করে কে জানে কোথা থেকে এই শয়তানের দল মাটি ফুঁড়ে উঠে দাঁড়িয়েছে। কে জানে, হয়তো ওরা ইতিমধ্যে তাদের চারিদিক দিয়ে ঘেরাও করে ফেলেছে। প্রতিটি গাছ আর প্রতিটি ঝোপঝাড়ের আড়ালে যে একজন করে শত্রু লুকিয়ে নেই এমন কথাই বা কে বলতে পারে। ওদের রাইফেলগুলি এবার এলোপাথাড়ি ঝাঁকে ঝাঁকে গুলি বর্ষণ করে চলল। এইভাবে বহু গুলি অপচয় করার পর তারা থামল।

কিছু সময় নিঃশব্দে কেটে গেলো। সৈন্যরা ভাবছিল, তাদের অদৃশ্য শত্রুরা সম্ভবত পালিয়ে গেছে। এমন প্রবল গুলি বৃষ্টির মধ্যে ওরা কেমন করে দাঁড়িয়ে থাকবে। কিন্তু তা'হলে যারা হতাহত হয়ে ভুমিশয্যা নিয়েছিলো, ওরা তাদের একজন একজন করে ভ্যানের উপর তুলছিল। ঠিক সে সময়ে আবার কতগুলি রাইফেল এক সঙ্গে গর্জে উঠলো। গুলির পর গুলি আসছে, বিরতি নেই। সৈন্যদের মধ্যে এক অংশ আছে ভ্যানের উপরে, অপর অংশ রাস্তায়। অদৃশ্য হস্তগুলি অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে এদের লক্ষ্য করে করে গুলি ছুঁড়ছে। একটি গুলিও বৃথা যাচ্ছে না। সৈন্যদের মধ্যে ভীষণ হট্টগোল পড়ে গেল। তারা একটু সামলে নিয়ে আবার প্রবলভাবে গুলি বর্ষণ করে চলল। কিন্তু তাদের সামনে কোন নির্দিষ্ট লক্ষ্য নেই। এই ভাবে কিছুক্ষণ দু'পক্ষের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা চলল। ইতিমধ্যে সৈন্যদের হতাহতের সংখ্যা ক্রমশ বেড়েই চলছে। অপর পক্ষে অদৃশ্য প্রতিপক্ষের কি পরিমান ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে তা বোঝার কোন উপায় ছিল না।

অবস্থা দেখে আতঙ্কিত হয়ে উঠল সৈন্যরা। কিন্তু একটু আগে তাদের দালাল সেই লোকটি তাদের সাহায্য করবার জন্য এসে গেছে। সে অত্যন্ত চতুর লোক, চারিদিকে ভাল করে নজর করে সে এই রহস্যটা বুঝতে পারল। দূরবর্তী ইটের পাঁজাটার পেছনে অঙ্গুলী নির্দেশ করে সে বলল, আমার সন্দেহ হয়, ওরা ঐ পাঁজাটির পেছনে দাঁড়িয়ে গুলি চালিয়ে যাচ্ছে। ঠিক কথাইতো, এই সন্দেহটা সকলের মনেই জাগা উচিৎ ছিলো। কিন্তু এতক্ষণ এই কথাটা ওদের কারও মাথায় আসেনি।

এবার ওদের রাইফেলগুলি একেবারে নিঃশব্দ হয়ে গেল। সৈন্যরা তিনভাগে ভাগ হয়ে অতি সন্তর্পণে তিনদিক দিয়ে এগিয়ে চলল। ইটের স্তুপটাকে ঘেরাও করে ফেলতে হবে। খুব সাবধান, ওদের একটাও যেন সরে পড়তে না পারে।
মুক্তিবাহিনীর জওয়ানরা ইটের পাঁজার আড়াল থেকে সবকিছুই দেখছিল। সৈন্যদের মতলব বুঝতে তাদের বাকী রইলো না।
আর এক মুহূর্ত দেরী করার সময় নেই। এখনই তাদের সরে পড়তে হবে। এই সংঘর্ষের মধ্যে দিয়ে তারা যতটা আশা করেছিল, তারচেয়ে অনেক বেশী কাজ হাসিল করতে পেরেছে। এবার তারা স্বচ্ছন্দে ছুটি নিতে পারে। একজন একজন করে সাতজন মুক্তিযোদ্ধা ওদের দৃষ্টি এড়িয়ে ঝোপঝাড়ের আড়ালে অদৃশ্য হয়ে গেল। তার কিছুটা বাদে শিকার সন্ধানী সৈন্যরা এসে সাফল্যের সঙ্গে সেই ইটের স্তুপটাকে ঘেরাও করে ফেলল। কিন্তু কি দেখল এসে? দেখল, পাখিগুলি তাদের একদম বোকা বানিয়ে দিয়ে মুক্ত আকাশে উড়ে চলে গিয়েছে। ইটের পাঁজার পেছনে একই জনপ্রাণী নেই। শুধু মাটির উপরে অনেকগুলি কার্তুজের খোল ইতস্তত বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে পড়ে আছে।

সেদিনকার যুদ্ধে সবসুদ্ধ ২৩ জন সৈন্য হতাহত হয়েছিল। আর মুক্তিবাহিনীর সাতটি জওয়ান সম্পর্ণ অক্ষত অবস্থায় বেরিয়ে আসতে পেরেছিল। যে দেশদ্রোহী দালালটি শত্রুদের সাহায্য করবার জন্য এগিয়ে এসেছিল, এর কয়েকদিন বাদেই মুক্তিযোদ্ধারা তাকে খতম করল।

সেইদিন মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে ঘা খেয়ে পাক সৈন্যদের চূড়ান্তভাবে নাকাল হতে হয়েছিল। চন্দ্রগঞ্জে লুটপাট করা দূরে থাক, হতাহত বন্ধুদের নিয়ে গাড়ী বোঝাই করে ওরা মাথা হেঁট করে ফিরে এসেছিল। কিন্তু এই অপমান আর লাঞ্ছনা ওরা ভুলে যেতে পারেনি। দিন কয়েক বাদে ওরা আবার নতুনভাবে তৈরী হয়ে চলল চন্দ্রগঞ্জের দিকে। তাদের মনের জ্বালাটা এবার ভাল করেই মিটিয়ে নেবে।
পাক-সৈন্যরা আবার হামলা করতে আসছে। এই খবরটা পৌছে গিয়েছিল চন্দ্রগঞ্জে। সুবেদার লুৎফর রহমান এখন সেইখানে নেই, অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যেও কেউ নেই। এবার কে তাদের প্রতিরোধ করবে? ওরা সেদিন আচ্ছামত ঘা খেয়ে ঘরে ফিরে গেছে, এবার ভাল করেই তার প্রতিশোধ তুলবে। চন্দ্রগঞ্জকে এবার ওরা ধ্বংসস্তুপে পরিণত না করে ছাড়বেনা। যাকে পাবে তাকেই মারবে। ওদের হাতে কেউ কি রেহাই পাবে? সারা অঞ্চলে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ল। চন্দ্রগঞ্জের মানুষ ঘর-বাড়ী ছেড়ে পালাতে লাগল। ওরা ওদের যা করবার বিনা বাধায় করে যাবে। কিন্তু চন্দ্রগঞ্জের একটি মানুষ এই কথাটাকে কিছুতেই মেনে নিতে পারলেন না। মাত্র সেদিন এই চন্দ্রগঞ্জের বুকে ৭ জন মুক্তযোদ্ধা বীরত্বপূর্ণ প্রতিরোধ দিয়ে দুর্দ্দান্ত পাক-সৈন্যদের দুর্দশার চূড়ান্ত করে ছেড়ে দিয়েছে। এই বীর মুক্তিযোদ্ধারা এই অঞ্চলেরই মানুষ, এই মাটিতেই মানুষ হয়ে উঠছে। এখানকার মানুষ, শুধু এখানকার নয়, সারা নোয়াখালী জিলার মানুষ তাদের জন্য গৌরববোধ করে। রাস্তার ধারে সেই ইটের স্তুপটি এখনও সেই যুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ রুপে বিরাজ করছে। এর মধ্যে তার কথা কি আমরা ভুলে যেতে পারি? আজ মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে কেউ এখানে নেই বলে ওরা অবাধে যা খুশি তাই করে চলে যাবে। না, কিছুতেই না, গর্জে উঠলেন তিনি, এ আমি কিছুতেই হতে দেবো না। আর যদি কেউ না যায়, আমি একাই যাবো, একাই গিয়ে ওদের সঙ্গে লড়াই করবো।

কে এই লোকটি? কি তাঁর নাম? না, তার নাম আমার জানা নেই। কোন খ্যাতনামা লোক নন তিনি। একজন প্রাক্তন সৈনিক। আর দশজন বৃদ্ধের মত তিনিও তাঁর জীবনের শেষদিনগুলি ‘আল্লাহ আল্লাহ’ করে কাটিয়ে যাচ্ছিলেন। একজন সাধারণ মানুষ। কেউ কোনদিন তাঁর কোন অসাধারণত্বের পরিচয় পাননি। কিন্তু আজ দেশের এক বিশেষ অবস্থায় একটি বিশেষ অনুকূল মুহূর্ত তাঁর ভেতরকার সুপ্ত আগুনকে জাগিয়ে তুলেছে। যেখানে হাজার হাজার মানুষ ভয়ে অস্থির, সেখানে এই একটি মানুষ দৃঢ় নিষ্কম্প কন্ঠে ঘোষণা করলেন, যদি একা যেতে হয়, আমি একাই যাবো, আমি একাই ওদের সঙ্গে লড়াই করব। মরবার আগে এই হিংস্র পশুগুলির মধ্যে একটাকেও যদি মেরে যেতে পারি, তবে আমার জীবন সার্থক হবে।

যারা তার হিতৈষী, তারা তাঁকে নিবৃত্ত করবার জন্য যথেষ্ট চেষ্টা করেছিল। বলেছিল. তুমি একা মানুষ, তার উপর বুড়ো হয়েছ। তুমি কি করে ওদের সঙ্গে লড়াই করবে? কিন্তু কারও কোন বাধা তিনি মানলেন না, দৃঢ়-মুষ্টিতে রাইফেলটা আঁকড়ে ধরে বেরিয়ে পড়লেন ঘর থেকে। তাঁর এই দৃষ্টান্তে অনুপ্রাণিত হয়ে তাঁর তরুণ ছেলে তাঁকে ডেকে বলল, দাঁড়াও আব্বা, আমিও তোমার সঙ্গে যাব। তোমার মত আমিও ওদের সঙ্গে লড়াই করব। ছেলের কথা শুনে বাপের মুখ আনন্দে উজ্জল হয়ে উঠল। দু’জনের হাতে দুটি রাইফেল, পিতা-পুত্র পাশাপাশি প্রতিরোধ সংগ্রামে যাত্রা করল।
আজও ওরা সেই ইটের পাঁজার পেছনে আশ্রয় নিল। ওরা পিতা-পুত্র পাশাপাশি বসে শত্রুদের আগমনের জন্য অধীর চিত্তে প্রতীক্ষা করতে লাগল। কিছুক্ষণ বাদের দূর থেকে মোটর ভ্যানের গর্জন শোনা গেল। হ্যাঁ ওরা আসছে। দেখতে দেখতে সৈন্যবাহী গাড়ী একেবারেই কাছে এসে পড়ল। সৈন্যদের মধ্যে অনেকের কাছেই ইটের পাঁজাটি সুপরিচিত। ঐটিকে ভুলে যাওয়া তাদের পক্ষে কোন মতেই সম্ভব নয়, কিন্তু আজও যে কেউ তাদের আক্রমণ করার জন্য এর আড়ালে ওত পেতে বসে থাকতে পারে, এটা তারা ভাবতে পারেনি। ভাবতে না পারা অস্বাভাবিকও নয়। কিন্তু ওরা এই স্তুপটার বরাবর আসতেই পরপর তিনজন সৈন্য গুলিবিদ্ধ হয়ে পড়ে গেল। সবাই দেখতে পেল, কে বা কারা তাদের লক্ষ্য করে স্তুপটার আড়াল থেকে গুলিবর্ষণ করে চলেছে। সঙ্গে সঙ্গেই সৈন্যরা এর পাল্টা জবাব দিল। ইটের পাঁজাটাকে লক্ষ্য করে ঝাঁকে ঝাঁকে গুলি বর্ষণ চলল। এরপর সেই স্তুপের পেছন থেকে আর কোন গুলির শব্দ শোনা গেল না। সৈন্যরা একটু সময় অপেক্ষা করল, তারপর ছুটে গেল স্তুপটার সামনে। উদ্যত রাইফেল বাগিয়ে ধরে যখন তারা পায়ে পায়ে সেই স্তুপটার পেছনে গিয়ে দাঁড়াল, তখন দেখতে পেল, সেইখানে এক বৃদ্ধের রক্তাক্ত মৃতদেহ পড়ে আছে।
কিন্তু অস্ত্র বলতে কোন কিছু সেখানে নাই, শুধু কয়েকটা কার্তুজের খোল পড়ে আছে।ওরা বুঝল, এই বৃদ্ধের সঙ্গে আরও যারা ছিল তারা অস্ত্রসহ পালিয়ে গিয়েছে। আমি ভাবছি, যেদিন বাংলাদেশ শত্রুমুক্ত হবে, স্বাধীন হবে, সে দিন পবিত্র এই জায়গাটিতে সেই গৌরবময় প্রতিরোধ সংগ্রামের স্মারক হিসাবে একটি স্মৃতিস্তম্ভ কি গড়ে উঠবে? চন্দ্রগঞ্জের যুদ্ধের পর সুবেদার লুৎফর রহমান নোয়াখালীর বিভিন্ন অঞ্চলে শিকারের সন্ধানে ছুটে চলছিলেন। তাঁর এক মুহূর্তও বিশ্রামের অবকাশ নেই। তিনি পাক সৈন্যদের গতিবিধি সম্পর্কে দক্ষ শিকারীর মত তীক্ষ্ণ সন্ধানী দৃষ্টি নিয়ে ফিরছিলেন। মুক্তিবাহিনীর গুপ্তচরেরা নিত্য নতুন সংবাদ নিয়ে আসছে। আর সেই সূত্র অনুসরণ করে তাদের মুক্তিবাহিনী যেখানেই সুযোগ পাচ্ছে, সেখানেই শত্রুদের উপর ঘা দিয়ে চলেছে।

আঘাতের পর আঘাত হানো কখনও ডাইনে কখনও বাঁয়ে, কখনও সামনে থেকে, কখনও বা পেছন থেকে। ওদের অস্থির আর পাগল করে তোল। ওদের কোন সময় স্বস্তিতে বা শান্তিতে থাকতে দিও না, ওদের প্রতিটি মুহূর্ত দূরভাবনায় কাটুক। ওরা যেন ঘুমের মধ্যেও দূ‍স্বপ্ন দেখে আঁতকে উঠে। মুক্তিবাহিনী এই নীতি অনুসরণ করেই কাজ করে চলছিল।ওরা হামলাকারীদের নিশ্চিত মনে বিশ্রাম করতে দেবেনা, নিজেরাও বিশ্রাম নেবেনা।

এপ্রিলের শেষভাগ। খবর এল, একদল সৈন্য কুমিল্লার লাকসাম থেকে ট্রেনে নোয়াখালীর সোনাইমুড়ি স্টেশনে এসে পৌঁছুবে। লুতফর রহমান এই খবর পাওয়ার সাথে সাথেই তাঁর সহকর্মীদের সঙ্গে পরামর্শ করতে বসলেন। স্থির হোল, ওদের বিনা বাধায় এগোতে দেওয়া হবেনা, সোনাইমুড়ি স্টেশনেই এই হামলাকারীদের উপর হামলা করতে হবে। রেলস্টেশনে চড়াও হয়ে আক্রমণ। হয়তো সেজন্য মুক্তিবাহিনীকে বেশ কিছুটা মূল্য দিতে হবে, অনেক ক্ষয়ক্ষতি বরণ করে নিতে হবে। তা হোক, এই শিকারকে কিছুতেই ফসকে যেতে দেওয়া চলবে না।

কিন্তু এবার আর চন্দ্রগঞ্জের মত সাতজন মুক্তিযোদ্ধা দিয়ে চলবেনা। এবার আর আগেকার মত আড়াল থেকে যুদ্ধ নয়, যুদ্ধ চলবে প্রকাশ্য, মুখোমুখি। ওদের সৈন্য সংখ্যা বড় কম নয়, আক্রমণ করতে হলে বেশ কিছুটা শক্তি সংগ্রহ করে নিতে হবে। সেই অল্প সময়ের মধ্যেই পঞ্চাশজন সশস্ত্র মুক্তিযোদ্ধাকে সোনাইমুড়িতে এনে জড় করা গেল। অবশ্য যতদূর জানা গিয়েছে সৈন্যদের সংখ্যা এরচেয়েও অনেকটা বেশী, তা হোক, এই শক্তি নিয়েই ওদের সঙ্গে মোকাবিলা করতে হবে।

নির্দিষ্ট সময়ে সৈন্যবাহী ট্রেনটা সোনাইমুড়ি স্টেশনে এসে পৌছল। মুক্তিবাহিনী কাছেই কোন একটা জায়গায় লুকিয়ে ছিল। ট্রেনটা এসে পৌছাবার সাথে সাথেই রাইফেলধারী মুক্তিযোদ্ধারা বিদ্যূতগতিতে ছুটে এসে ট্রেনটাকে ঘেরাও করে ফেলল। সঙ্গে সঙ্গে তারা ট্রেনের আরোহীদের লক্ষ্য করে গুলি চালাতে লাগল। ওরা গাড়ীর ইঞ্জিনটাকেও লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়ছিল। ড্রাইভারহীন ট্রেনটা অচল হয়ে গেল।

প্রকাশ্য দিবালোকে এইভাবে আক্রান্ত হতে হবে, পাক সৈন্যরা তা কল্পনাও করতে পারেনি। তারপর ঘটনাটা এত দ্রুত ঘটে গেল যে, একটু সময় ওরা হতভম্ব আর স্তব্ধ হয়ে রইল। পর মুহূর্তেই তারা তাদের রাইফেল বাগিয়ে ধরে হুড়মুড় করে কামরা থেকে প্লাটফর্মের উপর নেমে পড়তে লাগল। ওদের মধ্যে কয়েকজনকে কামরা থেকে নামবার আগেই মুক্তিযোদ্ধাদের গুলিতে প্রাণ দিতে হল।

এবার দু’পক্ষে শুরু হয়ে গেল যুদ্ধ। এবারকার বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামে রেলস্টেশনের উপর এ ধরনের লড়াই আর কোথাও ঘটেছে বলে শোনা যায়নি। নোয়াখালীর সোনাইমুড়ি রেলস্টেশন এজন্য স্মরণীয় হয়ে থাকবে। প্রায় তিনঘন্টা ধরে এ লড়াই চলল। এই যুদ্ধে পঁয়ত্রিশজনের মত পাক সৈন্য নিহত হয়েছিল।মুক্তিযোদ্ধাদের ছয়জন শহীদ হলেন। ইতিমধ্যে খবরটা চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছিল। খবর পেয়ে ঘন্টাতিনেক বাদে আক্রান্ত পাক-সৈন্যদের সাহায্য করার জন্য চৌমুহনী থেকে সামরিক ভ্যানে করে একদল সৈন্য ঘটনাস্থলে এসে পৌছল। এবার পাক সৈন্যদের মোট সংখ্যা দাঁড়াল আড়াইশতের উপরে। হতাহতের বাদ দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সংখ্যা তখন আনুমানিক চল্লিশ এ এসে দাঁড়িয়েছে। এই অবস্থায় যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়াটা নির্বুদ্ধিতার নামান্তর মাত্র। মুক্তিযোদ্ধারা এমন ভুল কখনও করেনা। তারা যেমন বিদ্যূৎগতিতে এসে আক্রমণ করেছিল, তেমনিভাবেই ঘটনাস্থল থেকেই অদৃশ্য হয়ে গেল। পাকিস্তানী সৈন্যরা তাদের পেছন পেছন ধাওয়া করে আক্রমণ করতে চেষ্টা করেছিল, কিন্তু তাদের সে চেষ্টা ব্যর্থ হল।

।।শেষ।।



রবিউল হোসেন কচি সম্পাদিত নোয়াখালী পৌরসভা কর্তৃক প্রকাশিত গবেষণা ও তথ্যভিত্তিক স্মারকগ্রন্থ “নোয়াখালী” থেকে নেয়া হয়েছে। প্রকাশকালঃ ২ জুলাই ১৯৯৮

ফেইসবুকে যোগ করুন